0721jingji.m4a
|
গত দশ-বারো বছর ধরে 'ব্রিকস্'-এর সদস্যরাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্রমাগত উন্নত হয়েছে। বর্তমানে এ দেশগুলো বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং অভিন্ন উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে ইয়েক্যাটারিনবার্গে 'প্রথম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন' অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর একে একে ব্রাসিলিয়া, সানইয়া, নয়াদিল্লী ও ডারবানে ব্রিকস্-এর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাস্তব সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যও অর্জিত হয়েছে।
গত বছর থেকে ব্রিকস দেশগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এসময় দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়। এখন ব্রিকস দেশগুলো একটি অভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করছে, সেটি হচ্ছে 'মধ্যম আয়ের ফাঁদ'। দীর্ঘকাল ধরে কেন দেশগুলো 'মধ্যম আয়ের দেশ' থেকে 'উচ্চ আয়ের দেশে' পরিণত হতে পারেনি, তা-ই এখন মূল আলোচ্য বিষয়। সম্প্রতি চীনের সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির লাটিন আমেরিকান গবেষণালয় এবং গেতুলিও ভারগাস তহবিলের ব্রাজিল অর্থনীতি গবেষণালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হয় "মধ্যম আয়ের ফাঁদ: ব্রাজিল ও চীনের দৃষ্টিকোণ" শীর্ষক গ্রন্থের পর্তুগীজ ভাষা সংস্করণ। এটি প্রকাশিত হয় ব্রাজিলে।
ব্রাজিল ফেডারেল সিনেটর ও ভারগাস তহবিলের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্রান্সিসকো দোর্নেল্লেস গ্রন্থটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন,"আমাদের এ গ্রন্থের প্রতিটি পরিচ্ছেদের বিষয় 'মধ্যম আয়ের ফাঁদ'। গরীব দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার এটি একটি বৈশিষ্ট্য; একটি বিতর্কিত বিষয়। চীন ও ব্রাজিল বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় আছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়া দরকার।"
গত ৩৯ বছর ধরে ব্রাজিল 'মধ্যম আয়ের ফাঁদে' আটকে আছে। অর্থাত এ দীর্ঘ সময়কাল ধরে দেশটি মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে: কেন দেশটি এতো দীর্ঘ সময়কাল ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে? কেন দেশটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারছে না? দেশটির উন্নয়ন অভিজ্ঞতা এ ব্যাপারে কী বলে? ব্রাজিলের পণ্ডিতরা এক্ষেত্রে উল্লেখ করছেন ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক পরিবেশ এবং আর্থিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার কথা। ভারগাস তহবিলের ভাইস চেয়ারম্যান ফ্রান্সিসকো দোর্নেল্লেস বর্তমান ব্রাজিলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি এবং বাণিজ্যিক পরিবেশের প্রধান সমস্যাগুলো উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন "বিশ্ব ব্যাংক বেসরকারি মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এক জরিপ করেছে। জরিপের বিষয় ছিল ব্রাজিলে বাণিজ্য-বাধার বিপদ। দেখা গেছে, দেশটিতে বাণিজ্য-বাধার মধ্যে আছে দুর্নীতি, শুল্ক আইন ও হার, আইনকানুন ইত্যাদি। এসব সূচকের বিচারে ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর প্রায় সবকটিই অপেক্ষাকৃত নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। আরেকটি তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ব্রাজিলের অবকাঠামো খাতের সমস্যাও উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পর বড় সমস্যা হচ্ছে, শুল্ক ব্যবস্থা। বলা যায়, শুল্ক ব্যবস্থায় বিরাজমান সমস্যার সমাধান করা বর্তমানে ব্রাজিলের সামনে সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।"
বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালে ব্রাজিলের মাথাপিছু জিডিপি ১২,৫৯৪ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বে ব্রাজিলের স্থান ৫৩তম। এ উপাত্ত অনুসারে, আরো তিন চার বছর পর ব্রাজিল 'মধ্যম আয়ের ফাঁদ' থেকে বেড়িয়ে উচ্চ আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে।
ব্রাজিলের পরিকল্পনামন্ত্রী এবং ফলিত অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান মার্সেলো নেরি বলেন, "আমরা লক্ষ্য করেছি, ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ব্রাজিলে একটি নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছে। ভোক্তাদের ওপর চালানো ভারগাস তহবিলের এক জরীপ অনুসারে, নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকসংখ্যা চার কোটি হবে। এ সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও দ্রুত কমে গেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের চার ভাগের তিন ভাগ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা।"
বহির্বিশ্বের দৃষ্টিতে ব্রাজিল হচ্ছে 'ভবিষ্যতের রাজ্য'। তো, এই 'ভবিষ্যতের রাজ্যের' বিদ্যমান সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে? কীভাবে দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি, টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হবে? মার্কেলো নেরি ব্রাজিলের ভবিষ্যতের জন্য চারটি সূচকের কথা বলেছেন। এগুলো হচ্ছে: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ন্যায্যতা ও সুখের বোধ, সহনশীলতা এবং টেকসই উন্নয়ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ পথে চললে, ব্রাজিল অনুমিত সময়ের মধ্যেই 'মধ্যম আয়ের ফাঁদ' অতিক্রম করে, উচ্চ আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবে। (ইয়ু/আলিম)