Web bengali.cri.cn   
৬ষ্ঠ চীন-মার্কিন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ
  2014-07-14 19:22:08  cri
ষষ্ঠ চীন-মার্কিন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ সম্প্রতি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। দু'দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হিসেবে এ সংলাপ ছিল খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। সংলাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যবিষয় ছিল প্রস্তাবিত 'চীন-মার্কিন বিনিয়োগ চুক্তি'। এ আলোচনার কঠিন বিষয়গুলো কীভাবে অতিক্রম করা যায়? যদি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেটা চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান আর জনগণের জন্য কী কী সুবিধা সৃষ্টি করবে? আমরা এখন এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

গত ৯ জুলাই চীন-মার্কিন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ইয়াং বলেন, অর্থনৈতিক সংলাপ হচ্ছে কঠিন সমস্যা নিয়ে আলোচনার ফোরাম। অভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আপোষ প্রয়োজন, প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা।

তিনি বলেন, "সহযোগিতা, পারস্পরিক কল্যাণ বয়ে আনে। আর পারস্পরিক কল্যাণ, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরো মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী করে। তবে অর্থনৈতিক ব্যাপারে সহযোগিতার সময় মতভেদ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তখন প্রয়োজন হয় দরকষাকষির। অন্যদিকে, সংলাপ হচ্ছে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সমস্যা সমাধানের উপায়। আমরা প্রায়শই অন্যের প্রস্তাবের সাথে একমত হতে পারি না। কিন্তু দিন শেষে আমাদের আপোষ করতে হয়, সহযোগিতাকেই বেছে নিতে হয়। কারণ, একতরফাভাবে কাজ করে গেলে মতভেদ বাড়তে বাড়তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে; ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তথা জনগণ। আর সবশেষে বিপন্ন হতে পারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সার্বিক অর্থনীতি।"

ওয়াং ইয়াং বিশেষ করে মতভেদের কথা উল্লেখ করেছেন। আসলে, চীন-মার্কিন বিনিয়োগ চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা সহজ নয়। এ আলোচনা ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে। আর ২০১৩ সালে এসে আলোচনা বাস্তব পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলা যায়। চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অ্যাকাডেমির বিশ্ব অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান চেন ফেং ইং বলেন, এখন দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ আলোচনার কঠিন বিষয়গুলোর মধ্যে আছে নেতিবাচক তালিকা নির্ধারণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষা। তিনি বলেন, "নেতিবাচক তালিকা যত ছোট, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা তত ভালো। যুক্তরাষ্ট্র মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, শ্রমিকের মানদণ্ড, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিষয়ে আগ্রহী। অন্যদিকে, চীনের জন্য সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকৃত অর্থের সুরক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া এবং শিল্পক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা। তাই আমরা চীনকে 'স্থাপনোত্তর জাতীয় সুবিধা'দিয়ে মার্কিন বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ করি।"

চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী চু কুয়াং ইয়াও আগে বলতেন, যদি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, সেটা কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ওপর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নয়, বরং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন, উন্নয়ন এবং মিশ্রণের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চেন ফেং ইং আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারী চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগ চুক্তি মানে আরো বেশি সংরক্ষণ-সুবিধা পাওয়া। তিনি বলেন, "আমরা এ চুক্তিকে বিনিয়োগ নিশ্চয়তাবিধান চুক্তি বলি। অর্থাত্ চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিনিয়োগ করার সময় আইনগত নিশ্চয়তা পাবে। তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তার মাত্রা বাড়বে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থ আরো ভালোভাবে সুরক্ষিত হবে। কারণ, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে 'প্রবেশের পূর্বে জাতীয় সুবিধা'এবং 'নেতিবাচক তালিকা'র সুবিধা ভোগ করবো। নেতিবাচক তালিকার বাইরে সব ধরনের ব্যবসা আমরা করতে পারবো। এখন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি সেটা হলো: আমাদের কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠান সেদেশে গেলে সেদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে যদি যুক্তরাষ্ট্র একটি নেতিবাচক তালিকা দেয়, স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, কোন কোন শিল্প তাদের বাজারে উন্মুক্ত নয়, তাহলে আমরা সে শিল্পসংক্রান্ত গবেষণা, অনুসন্ধানসহ অন্যান্য কাজে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করবো না। তাহলে একদিকে আমাদের ব্যয়ও কমে যাবে, অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষার মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অযথা যেতে হবে না। পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর যদি জানা যায় যে, সংশ্লিষ্ট শিল্প অনুমতি পাবে না, তাহলে অযথা অনেক সময় নষ্ট হয়।"

দু'দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন সহজতর হলে, স্বাভাবিকভাবেই আমদানিকৃত পণ্যের দাম হ্রাস পাবে। ফলে এতে চীনের সাধারণ ভোক্তারাও লাভবান হবেন। চেন ফেং ইং বলেন, "বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম কমবে। এতে কম অর্থ ব্যয় করে ভোক্তারা ভালো পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।"

সংলাপে অংশগ্রহণকারী মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যাকব লিউ এর সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, শক্তিশালী চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে দু'দেশের নেতৃবৃন্দের অভিন্ন ইচ্ছা। তিনি বলেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং খুব ভালো করেই জানেন যে, শক্তিশালী চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আর এ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হচ্ছে দু'পক্ষের আন্তরিক বিনিময় ও যোগাযোগ। এর মাধ্যমে আমরা দু'দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা সৃষ্টি করতে পারবো এবং দু'দেশ যৌথভাবে বিশ্বের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সমস্যা সমাধানে আরো দক্ষতার সাথে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।" (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040