Web bengali.cri.cn   
স্বাভাবিক অবস্থায় চীনের অর্থনীতি
  2014-06-30 18:13:54  cri


চলতি বছর চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ হবে কি হবে না এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন স্বাভাবিক গতিতেই হচ্ছে। এখন প্রয়োজন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ চলমান গতি বজায় রাখা। তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন।

কেউ কেউ বলছেন, আকষ্মিকভাবেই চীনের অর্থনীতিতে বড়ধরনের পতন ঘটবে। তারা তাদের এ ধারণাকে ফলাও করে প্রচারও করছেন। তারা বলছেন, চীনে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, রিয়্যাল এস্টেট বাজারের অবস্থা ভালো নয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি মন্দ, ইত্যাদি। কেউ কেউ বলছেন, চীনের সরকার বছরের শুরুতে ৭.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। আসলে, বেশ কয়েক বছর ধরে চীনে ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবার পর যখন তা ৭ থেকে ৮-এ নেমে আসে, তখন থেকেই সন্দেহবাদীরা এ ধরনের হতাশাব্যঞ্জক কথাবার্তা বলে আসছে। এটা নতুন কিছু নয়।

চীনের জাতীয় তথ্য কেন্দ্রের প্রধান অর্থবিজ্ঞানী ফান চিয়ান পিং মনে করেন, "চীনের অর্থনীতিকে এখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিবেচনা করার সময় এসেছে। সবাই চীনের অর্থনীতিকে দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়ে যেতে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে; এখন এ গতি যখন স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে, তখন তারা মনে করছেন এটি অস্বাভাবিক। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বর্তমানে রূপান্তর যুগে আছে। আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ধীরে ধীরে মন্থর হবেই। বলা যায়, আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক স্বভাবিক ও স্থিতিশীলভাবেই রূপান্তর যুগ অতিক্রম করছি। অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, যখন দ্রুত প্রবৃদ্ধির যুগ শেষ হয়, তখন এ গতি অর্ধেকে নেমে আসে। এটা স্বাভাবিক।"

বিশ্ব অর্থনীতিতে ফান চিয়ান পিংয়ের বক্তব্যের পক্ষে যথেষ্ট উদাহরণ আছে। আবার এ কথাও সত্য যে, চলতি বছরের শুরুতে চীনের অর্থনীতিতে যতটা প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল, ঠিক ততোটা হয়নি। কোন কোন মহল থেকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল যে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নেমে ৭.২ শতাংশ হবে। শেষ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৭.৪ শতাংশে। অন্যদিকে, অনেকের পূর্বাভাসের তুলনায় অর্জিত হার অনেক বেশিও বটে।

সে যাই হোক, চীনের অর্থনীতি একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। ফুচিয়ান প্রদেশের একটি রপ্তানিমুখী বৈদ্যুতিক মেশিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বোর্ডের চেয়ারম্যান কুও চিয়ান বলেন, তার কোম্পানি গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম কার্যাদেশ পেয়েছে। তিনি বলেন, "এ বছর প্রথম কার্যদিবসে আমি কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের এক সভার আয়োজন করি। সভায় আমি বলেছি, তোমরা বিদেশে যাও। এটা হচ্ছে আদেশ। তোমরা বিদেশে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা করো।"

চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিনিময় কেন্দ্রের পরামর্শ গবেষণালয়ের উপপ্রধান ওয়াং জুন একে স্বাভাবিক মনে করেন। তিনি বলেন, "অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হওয়ার পাশাপাশি কাঠামোগত বিন্যাসও হচ্ছে। নানা ধরনের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের নতুন চিন্তাভাবনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।"

চীনের নেতারা বিভিন্ন স্থানে একাধিক বার সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের নতুন ধারার কথা উল্লেখ করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং একবার বলেছেন, "অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির গতি উপযুক্ত পর্যায়ে বজায় রাখা হচ্ছে চীনের বর্তমান সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের মৌলিক চাহিদা এবং মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতিগত দিক। এ বছর চীনের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশের কাছাকাছি। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে, প্রবৃদ্ধির হার কিছু কমবেশি হলেও ক্ষতি নেই; তখন সেটা স্বাভাবিক হিসেবেই গণ্য হবে।"

মানবসম্পদ আর সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান বিষয়ক উপমন্ত্রী সিন ছাং সিং জানান, চলতি বছরের প্রথম দিকে শহরাঞ্চলে ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, (রেকর্ডিং-৫)

"অতীতে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সম্পর্ক বিবেচনা করে, কর্মসংস্থানের সংখ্যা ঠিক করতাম। এ বছর আমরা প্রচলিত এ ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছি। এখন আমরা কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা আগে ঠিক করি এবং সে আলোকে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করি। সবার শেষে ভাবি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কত হবে তা নিয়ে।"

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুণগত মান উন্নত করা। সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমানো, বেসরকারি পুঁজির জন্য বাজার উন্মুক্ত করা, বস্তি এলাকা সংস্কার করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা এই একই উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

চীনের জাতীয় তথ্য কেন্দ্রের প্রধান অর্থবিজ্ঞানী ফান চিয়ান পিং বলেন, "এখন যে সব ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেসবে প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সংস্কার ত্বরান্বিত করা, কাঠামো সুবিন্যস্ত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এর উদ্দেশ্য কেবল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি করা নয়। অর্থাত কোন কাজ প্রধান, কোন কাজ প্রধান নয়, তা স্পষ্ট জানতে হবে। আমরা কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর জন্য অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার নীতি গ্রহণ করিনি।"

মে মাসের অর্থনৈতিক উপাত্ত থেকে বোঝা যায় যে, চীনের অর্থনীতির অবস্থা সে সময় ভালো ছিল এবং তা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক অর্থ প্রতিষ্ঠান জুন মাসের প্রথম দিকে পূর্বাভাস দিয়েছে যে, চলতি বছর চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭.৫ শতাংশ। তারা আরো বলেছে যে, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়তে পারে। চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.৬ শতাংশ হতে পারে বলে তারা পূর্বাভাস দিয়েছে।

এদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের উপপ্রধান লিউ শি চিন বলেছেন, "চীনের অর্থনীতিতে এখনো স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির মৌলিক শর্তগুলো বিদ্যমান আছে। আমরা ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাবো। এর পাশাপাশি আমাদের উচিত আরো দূরে আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করা। সেটি হচ্ছে, আগামী দু'এক বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি পর্যায়ের রূপান্তর সম্পন্ন করা এবং নতুন স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির কক্ষপথে প্রবেশ করা।" (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040