সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একদিকে চীন ও আফ্রিকার সম্পর্ক উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়েছে এবং অন্যদিকে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আফ্রিকা মহাদেশে গিয়ে বিনিয়োগ করে সাফল্য অর্জন করেছে। এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের বড় আকারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও নবোদিত বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা আফ্রিকায় চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে আলোচনা করবো।
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সিনোহাইড্রো গ্রুপ লিমিটেডের নির্মিত জাম্বিয়ার কারিবা পানিবিদ্যুত কেন্দ্রের সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রথম ১৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত্ উত্পাদন যন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরু করে। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখায়েল চিলুফিয়া সাটা বলেন, প্রকল্পটি তার দেশের বিদ্যুত ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে এবং এর ফলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে ও জনগণের জীবনমানও উন্নত হবে।
জাম্বিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার ৪০ শতাংশ জলসম্পদ আছে। তবে দেশটিতে বিদ্যুত্ ঘাটতি রয়েছে ৩৫০ মেগাওয়াটের। জাম্বিয়া সরকারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরবর্তী দশ বছর সে দেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গড় হার হবে ৫ শতাংশ। অথচ এসময় বিদ্যুত্ উত্পাদনের ক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৩ শতাংশ। বস্তুত, বিদ্যুত্ ঘাটতি জাম্বিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়নের পথে বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
চীনের সিনোহাইড্রো গ্রুপ গত পাঁচ বছর ধরে নানা কঠিন অবস্থা অতিক্রম করে পূর্বনির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই কারিবা জলবিদ্যুত্ কেন্দ্রের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষ করে। এ কোম্পানির প্রধান ব্যবস্থাপক লিউ বেন চিয়াং বলেন, "আমি মনে করি, সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা ভালোভাবে এ বাজার সম্পর্কে জানি এবং আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন সম্পর্কেও জানি। আমরা এভাবেই জাম্বিয়ায় আমাদের উপযুক্ত উন্নয়নের পথ খুঁজে পেয়েছি। তা ছাড়া, আমরা জাম্বিয়ার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার মতো একটি দল গঠন করেছি।"
স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টা বলা যতটা সহজ, বাস্তবে ততটা সহজ নয়।
লিউ বেন চিয়াং বলেন, "কারিবা জলবিদ্যুত্ কেন্দ্রের আগের বিদ্যুত্ উত্পাদন যন্ত্রটি পশ্চিমা কোম্পানির। এ কেন্দ্রের যন্ত্রগুলো সবই পশ্চিমা মানদণ্ড অনুসরণ করে তৈরি করা। এ যন্ত্রটি অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। তাই একে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা দু'বছর সময় ব্যয় করে আধুনিক যন্ত্র এবং পুরোনো যন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়সাধনের সমস্যা সমাধান করেছি।"
লিউ বেন চিয়াং জানান, চীনা প্রযুক্তির প্রতি বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে চাইলে, প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চীনা প্রযুক্তিকে মানসম্পন্ন প্রমাণ করা। দ্বিতীয়ত, প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রযুক্তির মান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার পর, চীনের প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়। নির্ভরশীল প্রযুক্তি ও গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে, স্থানীয় বাজারের চাহিদা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রেখে ও স্থানীয় রীতিনীতি অনুসারে কাজ করেই চীনের সিনোহাইড্রো গ্রুপ জাম্বিয়ায় সাফল্য অর্জন করেছে এবং সে দেশের প্রায় সব বড় ও মাঝারি আকারের জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি পেয়েছে।
শুধু চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানই আফ্রিকায় সাফল্য অর্জন করেছে, তা নয়। পাশাপাশি চীনের কিছু নবীন বেসরকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানও আফ্রিকায় দ্রুত উন্নতি করেছে। যেমন, স্টারটাইমস মিডিয়া তাঞ্জানিয়া কোম্পানি হচ্ছে চীনের স্টারটাইটমস টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট প্রযুক্তি লিমিটেড ও তাঞ্জানিয়ার জাতীয় বেতার টেলিভিশন কোম্পানির একটি যৌথ-মালিকানা প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানিটি দ্রুত বিকশিত হয়েছে।
দার এস সালামের একটি ব্যবসাকেন্দ্রে অবসরপ্রাপ্ত ম্যাডাম মওয়ামবুলুকুতু কাজ করছেন। এর আগে তিনি আরেকটি কোম্পানি --- দক্ষিণ আফ্রিকার ডিজিটাল স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সেবা নিতেন। স্টারটাইটমস সম্পর্কে জানার পর তিনি এ কোম্পানির সেবা নিতে শুরু করেন। "আপনি কেন স্টারটাইটমসকে বেছে নিলেন?" জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন, "কারণ, এ কোম্পানির সেবা সস্তা ও ব্যবহার করা সুবিধাজনক। এখানে তুমি নিজের পছন্দের সব অনুষ্ঠান দেখতে পারো। এ কোম্পানির টেলিভিশন সংকেত অনেক উন্নত।"
স্টারটাইমস তাঞ্জানিয়া কোম্পানির গ্রাহকসংখ্যা বর্তমানে ৬ লাখ। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর দার এস সালামে স্টারটাইমস কোম্পানির সেবা নিচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার গ্রাহক। এ খাতে স্থানীয় বাজারের প্রায় অর্ধেকটাই এ কোম্পানির দখলে। স্টারটাইমস কোম্পানির সফলতা প্রসঙ্গে এ কোম্পানির প্রধান ব্যবস্থাপক চৌ জুন বলেন, "পুরোনো ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি পুরোনো। তারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের ওপর তেমন গুরুত্ব দেয় না। আমরা অতি উচ্চমানের স্থিতিশীল সেবা দিয়ে ডিজিটাল টেলিভিশনের সংকেত গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি।"
| ||||