'পেইচিং আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী, ২০১৪' অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২১ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ মোট ১৪টি দেশ ও অঞ্চলের দুই সহস্রাধিক গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। প্রদর্শনীতে মোট ১১৩৪টি গাড়ি প্রদর্শিত হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮টি গাড়ি ছিল সম্পূর্ণ নতুন মডেলের। নতুন ধরনের জ্বালানিচালিত গাড়ি ছিল ৭৯টি।
'পেইচিং আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী, ২০১৪'-এ গাড়িশিল্পের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সফলতা প্রকাশিত হয়েছে। গাড়ির নকশা, জ্বালানি সাশ্রয়, পরিবেশ সুরক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের গাড়িশিল্প যে অনেকদূর এগিয়েছে, তা প্রদর্শনীতে ফুটে উঠেছে। প্রদর্শনী দেখার পর গাড়িশিল্পের সুন্দর ভবিষ্যত সম্পর্কে মানুষ আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় অধিক আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা চীনের গাড়িশিল্পের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করতে চাই।
** চাংছুনে চীনের প্রথম গাড়ি নির্মাণ কারখানা
১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পরপরই এদেশে নিজস্ব গাড়িশিল্পের উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে বছর ডিসেম্বরে চেয়ারম্যান মাও জে তোং সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। তার সে সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তত্পকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনকে ভারী পরিবহন-যান নির্মাণ কারখানা প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়। এমনই প্রেক্ষাপটে ১৯৫৩ সালের ১৫ জুলাই চাংছুন গাড়ি নির্মাণ কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ কারখানার মেঝের আয়তন ৭ লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার এবং স্থাপত্যের আয়তন ৪ লাখ ১১ হাজার বর্গমিটার। এটি নির্মাণে মোট ৬২ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দেওয়া হয়। কারখানার প্রয়োজনে এখানে ২০ হাজার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ৩০ কিলোমিটার লম্বা রেলপথ এবং ৮০ হাজার মিটার লম্বা পাইপ লাইন বসানো হয়।
চাংছুন গাড়ি নির্মাণ কারখানা হচ্ছে চীনের প্রথম আধুনিক গাড়ি নির্মাণ কারখানা। ১৯৫৬ সালের ১২ জুলাই এ কারখানা থেকে 'চিয়েফাং' নামে চীনের প্রথম ট্রাক উত্পাদিত হয়। ১৯৫৮ সালে 'তোংফাং' নামে চীনের প্রথম মোটরগাড়ি এবং 'হোংছি' নামে প্রথম উচ্চ শ্রেণীর মোটরগাড়ি উত্পাদিত হয়। চাংছুন গাড়ি নির্মাণ কারখানা চীনের গাড়িশিল্পের নতুন ইতিহাস উন্মোচন করে।
১৯৬২ সালের জুন মাসে তত্কালীন চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ আন লাই এ কারখানায় গিয়ে 'হোংছি' নামক মোটরগাড়িতে বসেছিলেন। সে বছরের শেষ দিকে তিনি শ্রীলংকার তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েককে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সেই গাড়িটি পেইচিংয়ে পাঠাতে বলেন। তখন হোংছি গাড়ি প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি শীর্ষ নেতাকে বহন করার দায়িত্ব পালন করে। ১৯৬৪ সাল থেকে হোংছি গাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের রাষ্ট্রীয় অতিথিদের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
বর্তমানে চাংছুন গাড়ি নির্মাণ কারখানা নানা ধরণের উত্পাদন পদ্ধতির মাধ্যমে জার্মানি, জাপান ও চীনের বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে ছয় ধরনের গাড়ি উত্পাদন করে।
| ||||