Web bengali.cri.cn   
বাণিজ্যে শক্তিশালী দেশ হতে চীনকে আরো অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে
  2014-03-24 14:30:01  cri

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশটির মোট পণ্য-বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩.৯১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, চীনের শুল্ক বিভাগের প্রকাশিত উপাত্ত অনুসারে, একই সালে চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪.১৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাত, ২০১৩ সালে মোট বাণিজ্যের দিক দিয়ে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে এক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বর স্থানটি দখল করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে: বর্তমানের জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে, চীন কীভাবে অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় রাখবে এবং বাণিজ্যে একটি কার্যকর শক্তিশালী দেশে রুপান্তরিত হবে?

২০১৩ সালে চীনের আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। পাশাপাশি এ বছর চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বর দেশের মর্যাদাও পেয়ে গেছে। এটা বিশ্বের তথ্যমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে স্বাভাবিকভাবেই। যারা এ তথ্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন তাদের ভাষ্য অনুসারে, এর মাধ্যমে চীন অর্থনীতিতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আর যারা সন্দেহপ্রবণ তারা মনে করেন, চীন এক্ষেত্রে বাড়িয়ে বলছে। অবশ্য চীনের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা এ তথ্যে খুব একটা উত্সাহ দেখাচ্ছেন না। তারা বলছেন, "এ বছর আমাদের তেমন মুনাফা হয়নি। বছরের দ্বিতীয়ার্ধেতো লাভের স্থলে ক্ষতিই হয়েছে। অন্যের ব্র্যান্ড নামে পণ্য উত্পাদন করলে আস্তে আস্তে গরীব হতে হয়। কারণ, আপনার পণ্য অন্যের নামে বিক্রি হচ্ছে।"

"আমি মনে করি, এখন গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের চেয়ে কঠিন সময় যাচ্ছে।"

"শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফা  নেমে মাত্র ১০ শতাংশ হয়েছে। অর্থাত্ উত্পাদনব্যয় বাদ দিলে, নিট মুনাফা ৩ থেকে ৫ শতাংশের বেশি হয় না।"

"২০১৩ সালের জুন ও জুলাই মাস থেকে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন অবস্থা অতিক্রম করছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোনোরকমে চলছে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের বসন্ত উত্সবের আগেই কর্মীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে।"

শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কথা থেকে চীনের বাণিজ্য পরিস্থিতি উপলব্ধি করা যায়। একদিকে, চীনের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ নিরন্তরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; অন্যদিকে, কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। এ থেকে বলা যায়, চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি বড় দেশ, কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী দেশ নয়।

এ প্রসঙ্গে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী কাও হু চেং বলেন, "বর্তমানে চীনের ঐতিহ্যিক প্রাধান্য ক্রমশ কমে যাচ্ছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বাণিজ্যে বিশ্বের এক নম্বর দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যে যথেষ্ট প্রভাবশালী ও শক্তিশালী দেশ হতে দেশটিকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। এটা সবাই জানেন। চীনের বাণিজ্যিক কাঠামো অযৌক্তিক।"

বাণিজ্যিক বড় দেশ আর বাণিজ্যিক শক্তিশালী দেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের ডেপুটি গবেষক চাং মো নান বলেন, "বাণিজ্যের দিক দিয়ে শক্তিশালী একটি দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বিশাল হবে। দ্বিতীয়ত, তার পণ্যের মান হতে হবে উচু। বিশ্ব বাণিজ্যে তার প্রতিযোগিতা-শক্তি, বিশ্ব বাজারে তার কোটা এবং তার বাণিজ্যিক সংযোজিত মূল্যও হতে হবে লক্ষণীয় মাত্রায়। অর্থাত্ বাণিজ্য সে দেশের জন্য সত্যিকারের সংযোজিত মূল্য সৃষ্টি করবে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের বাণিজ্যিক বড় দেশ তথা শিল্পোন্নত দেশগুলো পরিসেবা বাণিজ্যকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয় এবং শিল্পোন্নত দেশের গোটা বাণিজ্যের মধ্যে পরিসেবা বাণিজ্যের অনুপাতও অত্যন্ত বেশি। আমি মনে করি, এগুলো হচ্ছে বাণিজ্যিক বড় দেশ ও বাণিজ্যিক শক্তিশালী দেশের বৈশিষ্ট্য।"

চাং মো নান আরোও উল্লেখ করেন, এখন চীন কেবল আকারের দিক থেকে বিশ্বের বাণিজ্যিক বড় দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। একদিকে চীন মোট বাণিজ্যের দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, অন্যদিকে অন্য দেশের সাথে তার বাণিজ্য সংঘাত ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো সুবিন্যস্ত করার পাশাপাশি পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে চীনকে আরো উচ্চ প্রযুক্তি পর্যায়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। ফলে চীনকে আরো বেশি বাণিজ্যিক সংঘাতের সম্মুখীন হতে হবে।

চীনকে বাণিজ্যিক দিক দিয়ে শক্তিশালী দেশ করা প্রসঙ্গে চাং মো নান বলছেন, "প্রথমত, চীনের নির্মাণ শিল্প উন্নত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, চীনকে নতুন দৃষ্টিতে বাজার সম্প্রসারণ দেখতে হবে। নতুন অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের মাধ্যমে নতুন প্রাধান্য অর্জিত হতে হবে। তৃতীয়ত, নির্মাণশিল্পের ওপর থেকে চীনের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। এটিই হচ্ছে চীনের বাণিজ্যিক বড় দেশ থেকে বাণিজ্যিক শক্তিশালী দেশে রূপান্তরিত হওয়ার অনিবার্য পথ।"

সার্বিকভাবে বলা যায়, যদিও আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মোট পরিমাণ হিসেব করলে চীন বিশ্বের শীর্ষস্থানটিই দখল করে আছে; কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কার্যকরভাবে সবচে প্রভাবশালী দেশে পরিণত হতে চাইলে, দেশটিকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040