সম্প্রতি ভুটান সরকার জাপানের নিশান মোটর করপোরেশনের সঙ্গে বিদ্যুত্চালিত গাড়ি-সম্পর্কিত এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় ভুটান দেশটিতে বিদ্যুত্চালিত গাড়ি জনপ্রিয় করবে এবং রাজধানী থিম্পুতে বিদ্যুত্চালিত গাড়ির জন্য বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে।
এ চুক্তি অনুযায়ী, ভুটান জাপানের এই মোটর কোম্পানি উত্পাদিত এক ধরনের বিদ্যুত্চালিত গাড়ি দেশটিতে সরকারি গাড়ি এবং ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করবে। বিদ্যুত্চালিত গাড়ির জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য ভুটান রাজধানী থিম্পুতে বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। ২১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বলেন, পৃথিবীতে বিদ্যুত্চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশে পরিণত হওয়ার উদ্দেশ্যে ভুটান জাপানের নিশান মোটর করপোরেশনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়। নিশান মোটর করপোরেশন জানায়, এ চুক্তির মাধ্যমে উদীয়মান বাজারে তার বিদ্যুতচালিত গাড়ি ব্র্যান্ডের উন্নয়নের আকার ও সম্ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে ভুটান সরকার দেশটির কিছু তেল-চালিত গাড়িকে বিদ্যুতচালিত গাড়িতে রূপান্তরের জন্য অনেক বিদ্যুতচালিত গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বলেন, রাজধানী থিম্পুকে দেশের বিদ্যুতচালিত গাড়ির কেন্দ্র এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের দৃষ্টান্তনগরে রূপান্তর করা হবে।
ভুটানে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার জনসংখ্যা আছে। ট্যাক্সি হচ্ছে দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ জনগণের প্রধান বাহন। একজন ট্যাক্সিচালক প্রতিদিন তেল কেনার জন্য প্রায় ৮০০ গুলট্রাম অর্থাত্ ১ হাজার টাকা ব্যয় করে। যদি তাদের ট্যাক্সি বিদ্যুতচালিত গাড়িতে রূপান্তর করা হয়, তাহলে তাদের রোজকার ব্যয় অনেক কমে যায়।
ভুটানের জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামো অপেক্ষাকৃত আমদানি-নির্ভর। অপরিশোধিত তেল প্রধানত প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করতে হয় দেশটিকে। যদি বিদ্যুতচালিত গাড়ি জনপ্রিয় করে তোলা যায়, তাহলে দেশটির জ্বালানি আমদানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব আর এভাবে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা যায়।
ভুটানের 'নাগরিক সুখ সূচক' বাড়ানোর ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। পরিবেশের টেকসই উন্নয়নও 'নাগরিক সুখ সূচকের' মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০০৪ সালে ভুটান পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সর্বক্ষেত্রে ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, অর্থাত্ প্রকাশ্যে বা যে কোনো উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ভুটান প্রতি বছর মাত্র ৬ হাজার বিদেশি পর্যটক সে দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেয় এবং তাদের যাত্রার পুঙ্খানুপুঙ্খ সমীক্ষা করে। তা ছাড়া ভুটান সরকার নিয়ম করেছে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০টি গাছ রোপণ করতে হবে। বোঝা যায়, এবার ভুটানের তেলচালিত গাড়ির বদলে বিদ্যুতচালিত গাড়ি ব্যবহারও পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ভুটান অন্তর্দেশীয় পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। দেশটিতে প্রচুর নদনদী ও জলপ্রপাত আছে। ফলে জলবিদ্যুত্ উত্পাদন খাতে তার প্রাকৃতিক সুবিধা আছে। ভুটানের চারটি বড় আকারের জলবিদ্যুত্ কেন্দ্রের মোট উত্পাদনক্ষমতা ১৪০০ মেগাওয়াট, অর্থাত্ একটি শক্তিশালী পারমাণবিক বিদ্যুত্কেন্দ্রের উত্পাদনের সমান। বলা যায়, বিদ্যুত্চালিত গাড়ির বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ভুটানের সমস্যা হবে না।
তবে দূষণবিহীন জ্বালানির দৃষ্টান্তশহর প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরো কিছু বাধা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের উপাত্ত অনুযায়ী, জাপানের নিশান মোটর করপোরেশনের একটি বিদ্যুত্চালিত গাড়ির দাম প্রায় ২৯ হাজার মার্কিন ডলার। এ অঙ্ক ভুটানের বার্ষিক মাথাপিছু আয়ের ১২ গুণেরও বেশি। বর্তমানে ভুটানে প্রায় ৪৫ হাজারটি হালকা মোটরগাড়ি আছে। যদি এসব গাড়িকে বিদ্যুত্চালিত গাড়িতে রূপান্তর করতে হয়, তাহলে তার জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে। তা ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পরিমাণ উচ্চ পর্যায়ে ধরে রাখার জন্য ভুটান আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে। ফলে আমদানি শুল্কও দেশটিতে বিদ্যুত্চালিত গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হবে। (ইয়ু/এসআর)