Web bengali.cri.cn   
চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য
  2014-06-09 20:02:42  cri


চীন ও ভারত সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং উন্নত সভ্যতার অধিকারী দুটি দেশ। প্রাচীন সভ্যতার এই দেশ দুটির বর্তমান উন্নয়ন পদ্ধতি এক নয়; কিন্তু দু'দেশই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দ্রুত উন্নত হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান ওভারসিস ব্যাংকের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ধর্মালিঙ্গম ভেনুগোপাল বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতি কার্যকর করার পর থেকেই চীন দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করে। ভারত উন্মুক্তনীতি গ্রহণ করে ১৯৯১ সাল থেকে। চীনের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে শিল্প ও অবকাঠামোর মতো খাতে গুরুত্ব দিয়ে। অন্যদিকে ভারতের বিকাশমান অর্থনীতি মূলত নির্ভরশীল শিক্ষা, সফ্টওয়্যার, পরিসেবা ইত্যাদি খাতের ওপর।

দু'দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদ্ধতি প্রসঙ্গে ভেনুগোপাল বলেন, "দু'দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদ্ধতির মধ্যে তুলনা করলে বুঝা যায়, শিল্পায়নের ওপর নির্ভর করা চীন পরিসেবা শিল্পের ওপর নির্ভর করা ভারতের চেয়ে দ্রুত উন্নতি করেছে। যখন চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৯ শতাংশ, তখন ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ।"

এ প্রসঙ্গে চীনের ইয়ুনান প্রদেশের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির দক্ষিণ এশিয়া গবেষণালয়ের প্রধান চেন লি জুন বলেন, "ভারতের সফ্টওয়্যার পরিসেবা শিল্প খুব উন্নত। এখন পৃথিবীতে ভারতের সফ্টওয়্যার শিল্প যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে আছে। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন মূলত ভারীশিল্পের ওপর নির্ভর করে।"

চীন ও ভারত বিগত কয়েক দশকে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিই তুলনামূলকভাবে মন্থর হয়ে গেছে। দু'দেশের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তনই এর প্রধান কারণ।

চেন লি জুন বলেন, "বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দেওয়ায়, চীন ও ভারতের মতো দুটি নবোদিত অর্থনৈতিক সত্তার ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও ভারতের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রক্রিয়াও আগের তুলনায় দ্রুততর হয়েছে। তাই বিশ্ব অর্থনীতির গতি মন্থর হলে, চীন ও ভারতের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।"

প্রশ্ন হচ্ছে: বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিবেশে কীভাবে অব্যাহতভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধরে রাখা সম্ভব? এ প্রসঙ্গে ভেনুগোপাল বলেন, বিগত চার-পাঁচ বছরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিই ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশটিতে পণ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। তাই বিগত তিন-চার বছরে ভারতীয় সরকারের সামনে সবচে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।

ভেনুগোপাল বলেন, "ভারতীয় সরকার সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এ পদ্ধতি অবলম্বন করায় ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। উপাত্ত অনুসারে, এসময় ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ ও ৭ শতাংশ থেকে নেমে ৪ ও ৫ শতাংশ হয়েছে। ওদিকে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও, অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অর্থনীতির প্রাণশক্তি টিকিয়ে রাখাই বর্তমানে ভারতের সামনে সবচে বড় চ্যালেঞ্জ।"

চীনের অর্থনীতি প্রসঙ্গে চেন লি জুন মনে করেন, এখন চীনেরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পদ্ধতি পরিবর্তন করা দরকার। উচ্চ বরাদ্দ, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় আর উচ্চ দূষণযুক্ত উন্নয়ন-পদ্ধতি দেশের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে পারে না। চীনে এক্ষেত্রে রূপান্তর এবং উদ্ভাবনের দিকে অধিক মনোযোগ দিতে হবে। এভাবেই কেবল দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া কিছু বড় সমস্যার সমাধান করা যাবে। চীন ও ভারতের অর্থনীতির সুপ্ত শক্তি সম্পর্কে ভেনুগোপাল বলেন, এ দু'দেশ জনবহুল; দু'দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রচুর। পাশাপাশি দু'দেশের জনগণের মধ্যেই উন্নয়নের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এ সব উপাদান হচ্ছে দু'দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি।

ভেনুগোপাল আরোও বলেন, "জনৈক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, চলতি শতাব্দী হচ্ছে এশিয়ার শতাব্দী। আসলে পরবর্তী এক'শ বছর ধরে চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা প্রবল। এ দু'দেশের অর্থনৈতিক উত্থান অন্যান্য অর্থনৈতিক সত্তার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"

বিগত কয়েক বছরে চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় উন্নয়ন হয়েছে। ১৯৯৭ সালে চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ছিল। ২০১৩ সালে তার বেড়ে ৬৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। অবশ্য ভেনুগোপাল মনে করেন, অতীতে চীনের পণ্য দামে সস্তা হবার কারণে দ্রুত ভারতের বাজার দখল করেছে। এর ফলে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বরাবর ভারতের প্রতিকূলেই রয়ে গেছে। ভারত আশা করে, চীন ভারত থেকে আরো বেশি পণ্য আমদানি করবে এবং দু'দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দ্রুত কমে আসবে।

এ প্রসঙ্গে চেন লি জুনের মত অবশ্য ভিন্ন। তিনি মনে করেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে চীন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, "রাতারাতি দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করা সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধান করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। চীনও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা দেখতে চায় না। বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা কাটাতে চাইলে ভারতে চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ, বিনিয়োগ হচ্ছে বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কিন্তু এ জন্য চাই ভারতের বাজার আরো উন্মুক্ত হওয়া। বাজার আরো উন্মুক্ত হলেই কেবল আরো অধিক হারে চীনা পুঁজি ভারতে আসতে পারে।"

আসলে চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করার সবচে ভালো উপায় হচ্ছে দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা। চেন লি জুন মনে করেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়লে চীন ও ভারত যেমন উপকৃত হবে, তেমনি এর ইতিবাচক ফল ভোগ করবে বাকি বিশ্বও।

এ ব্যাপারে ভেনুগোপালও একমত। তিনি মনে করেন, ব্রিকস শীর্ষসম্মেলন, জি-২০, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরসহ নানা আন্তর্জাতিক কাঠামোতে পারস্পরিক সহযোগিতা যত বেশি হবে, ততই ভাল। এ ধরণের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা চীন ও ভারত তথা গোটা বিশ্বের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। (ইয়ু/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040