Web bengali.cri.cn   
চীনের 'এক অঞ্চল, এক সড়ক' কৌশল: লাভবান হবে সংশ্লিষ্ট সকল দেশ
  2014-06-16 20:17:20  cri


সম্প্রতি দ্বিতীয় চীন-দক্ষিণ এশিয়া মেলা ইয়ুনান প্রদেশের খুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়ার অনেক দেশের ব্যবসায়ীরা এ মেলায় অংশ নিয়েছেন। তারা মনে করেন, চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজতর হলে তাদের ব্যবসায়িক উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। বস্তুত, চীনের 'এক অঞ্চল, এক সড়ক' কৌশল তাদের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

মেলায় চীনের একটি স্টলের সামনে কয়েকজন নেপালি যুবক অদ্ভুত দৃষ্টিতে নতুন ধরণের পরিবেশবান্ধব বিদ্যুত্চালিত সাইকেল দেখছিলেন। একজন বললেন, "এ বিদ্যুত্চালিত সাইকেল দেখতে খুব ভালো। এটা স্বয়ংক্রিয় ও চালানো খুব সহজ। ছোট বাচ্চারাও এটা চালাতে পারবে। আমার দেশে আমি কখনো এ ধরণের সাইকেল দেখিনি।"

থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী একাছাই চীনে ১৮ বছর ধরে আছেন। তিনি খুব ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন; বিয়েও করেছেন এক চীনা নারীকে। তিনি নিজের দেশের স্পা জাতীয় পণ্য চীনে বিক্রি করতে চান। তিনি বলেন, "থাইল্যান্ডের স্পা জাতীয় পণ্য প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উত্পাদিত হয় বলে এর বেশ সুনাম আছে। আমরা আশা করি, চীনে থাইল্যান্ডের পণ্য বিক্রির জন্য এজেন্ট খুঁজে পাবো। চীনে বিশাল বাজার আছে। তাই থাইল্যান্ডের অনেক সরবরাহকারী চীনে এসেছেন।"

শ্রীলংকার চা ব্যবসায়ী রবিমল হান্ডুওয়ালা এ মেলায় চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চা পান করার মধ্য দিয়ে চা সংস্কৃতি সম্পর্কিত মত বিনিময় করেন। তিনি বলেন, "চীনের সবুজ চা ও শ্রীলংকার কালো চা পৃথিবী বিখ্যাত। ফলে আমরা চীনের সবুজ চা আমদানি করার পাশাপাশি আমাদের কালো চা চীনে রপ্তানি করি। তাই আমার উচিত চীনের চা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা। আপনি যদি দুধ চা খেতে চান, তাহলে অবশ্যই শ্রীলংকার কালো চা দিয়ে তা বানালে ভালো। দুধ চায়ের সাথে কিছু বিস্কুট বা কেকও খেতে পারেন। কিন্তু চীনে চা খাওয়া মানে, শুধুই চা খাওয়া।"

ইরানের ব্যবসায়ী লায়লা করিমি বিশেষ করে নৌপরিবহন ব্যবসা করেন। প্রাচীনকালে চীন ও ইরানসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক রুট সম্বন্ধে তাঁর খুব ভালো জ্ঞান আছে। তিনি বলেন, "ইরান থেকে চীনে আসার এক প্রাচীন রাস্তা ছিল। প্রাচীনকালে গ্রীস, ইরান, তুরস্ক ও চীনের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তাই আমি মনে করি, এ অঞ্চলের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এ সব দেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।"

করিমি যে রাস্তার কথা উল্লেখ করেছেন, তা হচ্ছে প্রাচীন রেশমপথের একটি অংশ। প্রাচীনকালে চীনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেশমপথ ছিল। এগুলো হচ্ছে: উত্তর রেশমপথ, দক্ষিণ রেশমপথ এবং সামুদ্রিক রেশমপথ। ইয়ুনান হচ্ছে প্রাচীন দক্ষিণ রেশমপথের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং চীনের 'এক অঞ্চল, এক সড়ক' কৌশল বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ।

চীনের নতুন উত্থাপিত রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ অর্থাত্ 'এক অঞ্চল, এক সড়ক' কৌশল হচ্ছে নতুন পরিস্থিতিতে নতুন কৌশলগত চিন্তাধারা। ইয়ুনান থানজুন আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ কোম্পানির প্রধান ব্যবস্থাপক শিয়াও কুয়াং হোং গভীরভাবে গত কয়েক বছরে সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করে আসছেন। তিনি বলেন, "দশ বছর আগে ইয়ুনানের মোহান বন্দর থেকে লাওসে যাওয়ার পথ ছিল সংকীর্ণ এবং তখন এ পথে চলাচলকারী গাড়িও খুব কম ছিল। এখন প্রতিদিন ওখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করা মালবাহী গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় চার থেকে পাঁচ শ। এখন খুনমিং থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার প্রধান পথ হচ্ছে তিনটি এবং বন্দর তিনটি। জানা গেছে, আরো তিনটি প্যান এশিয়া রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ রেলপথেরও থাকবে তিনটি অংশ: মধ্য লাইন, পশ্চিম লাইন ও পূর্ব লাইন। এ তিনটি অংশের শুরু হবে কিন্তু খুনমিং থেকে।"

ইয়ুনান সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির দক্ষিণ এশিয়া গবেষণালয়ের প্রধান চেন লি জুন বলেন, রেশমপথ পুননির্মাণের গুরুত্বপুর্ণ ভিত্তি হচ্ছে পরিবহন। তিনি বলেন, 'এবারের মেলায় অনেক পণ্ডিত দ্রুতগতির রেলপথ উন্নয়নের প্রস্তাব করেছেন। চীনের দ্রুতগতির রেলপথ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিকটবর্তী দেশগুলোকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ ব্যয় কমানো যায়। তা ছাড়া, নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিও ছিল মেলার গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য।"

চেন লি জুন আরো বলেন, 'এক অঞ্চল, এক সড়ক' কৌশল পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে। এ থেকে সবাই লাভবান হবে।

এদিকে, সার্কের মহাসচিব অর্জুন থাপা এবারের চীন-দক্ষিণ এশিয়া মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, "একবিংশ শতাব্দীকে এশিয়ার শতাব্দী বলা হয়। জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবণতার ভিত্তিতে এ কথা বলা হয়। এটা একটি পৌরাণিক কাহিনী নয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অনুমান করছে যে, এ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় বিশ্বের মোট উত্পাদনের অর্ধেকই এশিয়ায় উত্পাদিত হবে। এশিয়ার উত্থানে চীন বিরাট অবদান রাখবে। তবে আমাদের ভুললে চলবে না যে, পৃথিবীর যে অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি সবচেয়ে দ্রুত, সে অঞ্চলে বিশ্বের অর্ধেক দরিদ্র মানুষের বাস। আমি বিশ্বাস করি, আমরা একযোগে কাজ করে এ সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবো।" (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040