চীনের জিডিপিতে ব্যক্তিখাতের অর্থনীতির অনুপাত ৬০ শতাংশেরও বেশি। আর করে ব্যক্তিখাতের অনুপাত প্রায় ৫০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে প্রায় ৮০ শতাংশ। বোঝা যায়, ব্যক্তিখাতের অর্থনীতি চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দিন দিন আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলোর আর্থিক সংকটের দরুণ বৈদেশিক চাহিদা দ্রুত গতিতে হ্রাস পেয়েছে। এটা চীনের পণ্য উত্পাদন-ভিত্তিক ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হোংশান মূলধন চীনের তহবিলের প্রতিষ্ঠাতা শেন নান ফেং বলেন, "সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন করতে পারা। যদি আপনার প্রতিষ্ঠান এখনো একটি শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠান হয়, তাহলে জনশক্তির ব্যয় বৃদ্ধির চাপ অবশ্যই একশ শতাংশ আপনার প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়বে। কিন্তু ইদানিং আমরা দেখছি যে, আরো বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উপলব্ধি করেছে, উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় আরো ভালো প্রযুক্তিগত উপায়ের ওপর নির্ভর করা উচিত।"
২০১২ সালে চীনের সেরা ৫০০টি ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক আয় যদিও প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে, কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার স্পষ্টভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের মুনাফা অর্জনের সামর্থ্যেও হ্রাস পাওয়ার ধারা দেখা দিয়েছে। এ বছর চীনের সেরা ৫০০টি ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর প্রদান-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ৪২৩.৮ বিলিয়ন ইউয়ান। এটা ২০১১ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কমেছে।
পরিস্থিতির পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নের পদ্ধতি রূপান্তরের প্রচেষ্টা চালায়। তারা সম্পদ ব্যয় আর বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করার পদ্ধতি থেকে সরে সম্পদ সাশ্রয় আর উদ্ভাবনের ওপর নির্ভর করার পদ্ধতিতে গেছে। ঐতিহ্যবাহী শিল্পের নিম্ন পর্যায়ের নিম্ন মূল্য সংযোজনের উত্পাদন-পদ্ধতি আধুনিক শিল্পের উচ্চ পর্যায়ের উচ্চ মূল্য সংযোজনের উত্পাদন-পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে অবস্থিত ফুথোং গ্রুপের মূল পণ্য হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্ম। অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্ম হচ্ছে অপটিক্যাল কেবল শিল্পের একেবারে মৌলিক কাঁচামাল। অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্ম রয়েছে এ শিল্প-লাইনের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে।
উত্পাদন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে ২০০০ সালের আগে এ শিল্পের প্রধান কারখানাগুলো জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ছিলো। চীন মূলত অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্ম আমদানি করে অপটিক্যাল ফাইবার আর অপটিক্যাল কেবল উত্পাদন করতো। ফুথোং গ্রুপের বোর্ড চেয়ারম্যান ওয়াং চিয়ান ছি জানান, "সবসময় শিল্পের নিম্ন পর্যায়ে থাকা ঠিক না। দীর্ঘকাল ধরে অন্যের জন্য কাজ করলে নিজের উন্নয়ন হবে না। এভাবে কাজ করলে সমমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে না।"
আট বছর ধরে মনোযোগ দিয়ে কঠোর গবেষণা করার পর ২০০৮ সালে ফুথোং গ্রুপ অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্মের ব্যাপক পরিমাণের উত্পাদনে সক্ষম হয়। তখন থেকে এ কোম্পানি অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্ম উত্পাদন প্রযুক্তির অধিকারী চীনের প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফুথোং গ্রুপের বোর্ড চেয়ারম্যান ওয়াং চিয়ান ছি যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছেন যে, মূল প্রযুক্তি আয়ত্ত করা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চীনের ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় শিল্প ও বাণিজ্য ফেডারেশনের উপ-মহাসচিব ওয়াং চুং মিং বলেন, "অনেক ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রশংসনীয় প্রয়াস নিয়েছে। তারা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার মাত্রা জোরদার করেছে, প্রযুক্তিগত গবেষণায় ব্যয় বাড়িয়েছে, ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনসহ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।"
সুনিং মেঘ ব্যবসা গ্রুপ অতীতে একটি গৃহস্থালী বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের খুচরা চেইন প্রতিষ্ঠান ছিল। গত ২১ ফেব্রুয়ারি চীনে সুপরিচিত 'সুনিং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম গ্রুপ'-এর নাম বদলে করা হয় 'সুনিং মেঘ ব্যবসা'। সুনিংয়ের পরিবর্তন সম্পর্কে এর ভাইস-চেয়ারম্যান সুন ওয়েই মিন বলেন, "আমরা সর্বক্ষেত্রে চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা আর ইন্টারনেটের উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা আশা করি, ২০২০ সালে ট্রিলিয়ন ইউয়ান পর্যায়ের একটি প্রযুক্তিগত আধুনিক পরিসেবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবো। এটা হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন।"
চীনের জাতীয় শিল্প বাণিজ্য ব্যুরো প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত চীনে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ ব্যক্তিখাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর ৪ কোটি ২৭ লাখ ব্যক্তিগত শিল্প ও বাণিজ্য পরিবার আছে। চীনের ব্যক্তিখাতের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের পরিমাণ অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ খাতের অবদানও বেড়েছে। এখন সাফল্যের সঙ্গে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া হচ্ছে চীনের ব্যক্তিখাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জরুরি প্রয়োজন এবং অনিবার্য বিকল্প। এর মধ্যে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। (ইয়ু/এসআর)
| ||||