Web bengali.cri.cn   
চীন-মোজাম্বিক কৃষি সহযোগিতা প্রযুক্তির নমুনকেন্দ্র
  2014-07-02 18:03:21  cri

খাদ্যশস্য হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আফ্রিকার রাষ্ট্র মোজাম্বিকে ফসল চাষের অদ্বিতীয় পরিবেশ থাকলেও বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ শস্য আমদানি করতে হয় দেশটিকে। স্থানীয় অধিবাসীদের খাদ্য সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার জন্য চীন সরকার ওই দেশটিতে একটি কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। স্থানীয় কৃষকদের উত্তম উপায়ে জমি চাষ শেখানোর পাশাপাশি আধুনিক কৃষি উন্নয়নে সাহায্যও করে এ কেন্দ্র। এখন শুনুন এ সম্পর্কে এক প্রতিবেদন।

চীন-মোজাম্বিক কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র হচ্ছে আফ্রিকায় চীন-প্রতিষ্ঠিত প্রথম কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র। আফ্রিকান দেশগুলোতে খাদ্যশস্য চাষের মান উন্নত করা এবং খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৬ সাল চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষসম্মেলনে প্রথম বারের মতো 'কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র' প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। ২০০৭ সালে এ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় এবং ২০১১ সালে তা মোজাম্বিক সরকারকে দেওয়া হয়। এরপর চীনের প্রতিশ্রুত বাকি ১৯টি কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়।

মোজাম্বিকে ৩ কোটি ৬০ লাখ হেক্টর আবাদি জমি আছে। দেশটির অধিকাংশ আবাদি জমি সমতল ভূমিতে এবং সেখানে পর্যাপ্ত পানিসম্পদ ও সূর্যালোক এবং উত্তম তাপমাত্রা আছে। মোজাম্বিকের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যা কৃষি কাজ করে। কিন্তু এমন একটি দেশ প্রতিবছর বিদেশ থেকে প্রায় ২০ কোটি কেজি শস্য আমদানি করে। পশ্চাত্পদ গতানুগতিক চাষ-পদ্ধতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার এ দেশটি দীর্ঘকাল ধরে খাদ্য সমস্যার সম্মুখীন ছিল। চীন-মোজাম্বিক কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্রের প্রধান কাজ হচ্ছে মোজাম্বিকের জন্য কৃষি প্রযুক্তির পরীক্ষা, নমুনা গড়ে তোলা ও জনপ্রিয় করা, প্রতিভাবান ব্যক্তিদের কৃষিপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এখানে প্রযুক্তিবিদরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্থানীয় শস্যের চাষ পরীক্ষা করেন এবং উত্পাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালান। নমুনাকেন্দ্রের পরিচালক লিউ হো শেং বলেন, "যেমন ভুট্টা। 'শাংরিলা' নামে মোজাম্বিকের একটি দেশীয় জাতের ভুট্টা স্থানীয় পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় টন। কিন্তু একই প্রজাতির ভুট্টা আমাদের প্রযুক্তি দিয়ে চাষ করলে ফলন হতে পারে সাড়ে চার টন। বলা যায়, আমাদের ফলন স্থানীয় পদ্ধতির ফলনের প্রায় তিন গুণের মতো।"

চীনের কৃষি নমুনাকেন্দ্রের খবর পাওয়ার পর মোজাম্বিকের অনেক অধিবাসী এখানে চাষের পদ্ধতি শিখতে আসেন। দৃষ্টান্ত কেন্দ্রের এক চীনা কর্মী জানান, "তাদের এখানে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা জানতে চান, কি কি উন্নত প্রযুক্তি তাদের গতানুগতিক প্রযুক্তির চেয়ে ভালো। তাঁরা জানতে চান, কী কী জাতের শস্য চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে? কী কী ক্ষুদ্র আকারের কৃষি যন্ত্রপাতি ভালো? কোন ঋতুতে কী কী শস্য চাষ করা ভালো? ভিন্ন ভিন্ন ফসল কোন সময় চাষ করা ভালো? ইত্যাদি।"

ম্যানুয়েল হচ্ছেন মোজাম্বিকের এদুয়ার্দো মোনদলেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একজন ছাত্র। তিনি মনে করেন, কৃষি সহযোগিতামূলক প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র মোজাম্বিকের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,  "আমাদের দেশে এমন উন্নত কৃষি উত্পাদন প্রযুক্তি খুব প্রয়োজনীয়। এমন সহযোগিতা-পদ্ধতি খুব ভালো। আমাদেরকে অনেক প্রয়োজনীয় জ্ঞান দিচ্ছে। মোজাম্বিকের কোনো কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে অধিকাংশ লোক কৃষিকাজ করে। তাদের নমুনাকেন্দ্র থেকে দেওয়া প্রযুক্তি দরকার। তারা এখানে এসে জ্ঞান অর্জনের পর কৃষি উত্পাদনে বাস্তব প্রয়োগ করেন। এভাবে খাদ্যশস্যের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে, খাওয়া-পরা সমস্যার সমাধান হয়েছে, এমন কি দারিদ্র বিমোচনও হয়েছে।"

মোজাম্বিকের বৃহত্ কৃষি প্রদেশ গাজায় অবস্থিত ওয়ান বাও আফ্রিকান কৃষি উন্নয়ন কোম্পানি লিমিটেড হচ্ছে চীনের একটি ব্যক্তিখাতের প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে ওয়ান বাও কোম্পানি মোজাম্বিকে প্রবেশ করে এবং কৃষি নমুনাকেন্দ্রের সাহায্যে দেশটিতে ব্যাপকাকারে আধুনিকায়ন যন্ত্রচালিত চাষ করে। এখন এ কোম্পানি মোজাম্বিকে প্রায় ২৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমি চাষ করে। এ কোম্পানির সফলতা দেখে মোজাম্বিকের অনেক কোম্পানি ও ভূমি মালিক চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।

চীন-মোজাম্বিক সহযোগিতামূলক কৃষি প্রযুক্তি নমুনাকেন্দ্র ২০১১ সাল থেকে চালু হওয়ার পর স্থানীয় কৃষি উত্পাদনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে গুরুত্ব অর্জন করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক লিউ হো শেং বলেন, জাপান ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু প্রতিষ্ঠান এবং আফ্রিকার কিছু আঞ্চলিক সংস্থা এখানে এসে পরিদর্শন করে। লিউ হো শেং বলেন, "বিল গেটস তহবিল 'আফ্রিকান সবুক সুপার ধান' প্রকল্পের জন্য আমাদের এখানে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং ৩০ জাতের শস্য চাষ করেছে। তারা ফেব্রুয়ারি মাসে এসে আমাদের চাষ করা শস্যগুলো থেকে বাছাই করবেন।"

চীনে একটি প্রবাদ আছে, অন্যজনকে মাছ দেওয়ার চেয়ে মত্স্য-শিকার শেখানো ভালো। মোজাম্বিকে বহু বছর ধরে কর্মরত পরিচালক লিউ হো শেং বলেন, কেবল উন্নত কৃষি প্রযুক্তি আয়ত্তে আফ্রিকান জনগণকে সহযোগিতা করলে মৌলিকভাবে আফ্রিকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040