Web bengali.cri.cn   
ব্রাজিল বিশ্বকাপে চীনা উপাদান
  2014-06-23 20:54:21  cri


শ্রোতাবন্ধুরা, বিশ্ব ফুটবলে চীনের অর্জন তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। তবে, এশিয়ায় চীন বরাবরই একটি উল্লেখ করার মতো ফুটবলশক্তি। চীন ২০০৫ ও ২০১০ সালে দু'বার পূর্ব এশিয়া কাপ ফুটবলের শিরোপা জয় করেছে এবং ১৯৮৪ ও ২০০৪ সালে দু'বার এশিয়া কাপ ফুটবলে রানার্স আপ হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে চীন সবচে বড় জয়টি পেয়েছিল ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে, ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি। সেদিন হো চি মিন সিটিতে অনুষ্ঠিত খেলায় চীন ১৯-০ গোলে হারিয়েছিল স্বাগতিকদের। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ফুটবলে চীনের সবচে বড় পরাজয়টি এসেছিল পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের রেসিফেতে অনুষ্ঠিত সেই খেলায় পেলের দেশ জিতেছিল ৮-০ গোলে। হ্যা, বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বেও চীন একবার খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। সেটা ২০০২ সালের কথা। সেবার প্রথম রাউন্ডের সবগুলো খেলায় হারলেও, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনকেই এখন পর্যন্ত ফুটবলে চীনের সবচে বড় অর্জন বলে ধরে নেওয়া হয়।

প্রিয় শ্রোতা, ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে চলছে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের খেলা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে প্রতিযোগিতা থেকে। তো, এই বিশ্বকাপে নেই পৃথিবীর বাকি দেড় শতাধিক দেশের মতো চীনও। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে মাতামাতি চলছে, তার ব্যতিক্রম নেই চীনেও। রাত জেগে এখানেও লক্ষ-কোটি ফুটবল অনুরাগি খেলা দেখছেন। দেশের একাধিক টিভি চ্যানেল সরাসরি খেলা দেখাচ্ছে, আয়োজন করছে বিশেষ অনুষ্ঠানের। বিশ্বকাপে চীনের খেলোয়াড়রা নেই, কিন্তু আছেন চীনের ফুটবলপ্রিয় দর্শক ও সাংবাদিকরা। আরো আছে, চীনা উপাদান। হ্যা, চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিকদের চোখে পড়েছে ব্রাজিল বিশ্বকাপে চীনের উপাদান। এখন শুনুন এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন।

সবাই জানেন ব্রাজিল ফুটবলের দেশ। বলা হয়, ফুটবল হচ্ছে ব্রাজিলের ধর্ম। তাই বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে দেশটিতে উত্সব চলছে বলা যায়। আর উত্সব মানেই উপহার। ব্রাজিলের রাস্তায়ও দেখা যাবে নানান উপহারের ছড়াছড়ি। বিশ্বকাপ সম্পর্কিত এসব ছোট ছোট উপহার সামগ্রীর বেশির ভাগই উত্পন্ন হয়েছে চীনের ঈ ঊতে।

ব্রাজিলের চাংফা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য লিমিডেট কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান চাং সিয়া মাও বললেন, "বর্তমানে ঈ.ঊ'তে কয়েক শত কারখানা বিশ্বকাপ ফুটবলের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য উত্পাদন ও সরবরাহ করছে। বিশেষ করে, ব্রাজিলের জাতীয় পতাকার রং তথা সবুজ ও হলুদ রংয়ের পণ্য সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। অবশ্যই এখানে অন্য দেশের জাতীয় পতাকার রং ভিত্তিক পণ্যও আছে। তবে ব্রাজিলের রং অপেক্ষাকৃত বেশি। পণ্য উত্পাদনের আগে সাধারণত আমরা ব্রাজিলের ব্যবসায়ীদের নকশা করা নমুনা নিয়ে কারখানায় যাই এবং উত্পাদন-চুক্তি স্বাক্ষর করি।"

ঈ ঊতে উত্পাদিত বিশ্বকাপ সম্পর্কিত কিছু পণ্য চাং সিয়া মাওয়ের কোম্পানির মাধ্যমে ব্রাজিলের বাজারে প্রবেশ করেছে। রিও ডি জেনিরোর ভারগাস এভেনিউর ক্ষুদ্র পণ্য বাজারে চাং সিয়া মাওের দোকানে টুপি, ওড়না, রোদ চশমা, লাউড স্পিকার সহ বিশ্বকাপ সম্পর্কিত নানা ধরণের পণ্য বিক্রি হয়।

চাং সিয়া মাও সিআরআইয়ের সংবাদদাতাকে বলেন, 'এ টুপির মধ্যে হলুদ ও সবুজ দুই রং আছে। এটা হচ্ছে ব্রাজিলের প্রতীকী রং। ব্রাজিলের লোকেরা জলদস্যুদের টুপি খুব পছন্দ করেন। তারা ফুটবল খেলা দেখার সময় যখন চিত্কার করেন, তখন অবশ্যই এ টুপি তাদের মাথায় থাকবে। এ স্কার্ফ দেখুন, ব্রাজিলীয় হোক, বিদেশি হোক, সবাই তা পছন্দ করেন। এ স্কার্ফ পড়লে খুব সুন্দর দেখায়। এ লাউড স্পিকারও খুব জনপ্রিয়। কারণ, এ দিয়ে উচ্চ আওয়াজ সৃষ্টি করা যায়।"

বিশ্বকাপ ফুটবল উদ্বোধনের কয়েক মাস আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের ফরমায়েশ আসা শুরু হয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। চাং সিয়া মাও চীনের ঈ উ থেকে আমদানি করা ক্ষুদ্র পণ্যগুলোর মধ্যে কিছু কিছু পণ্য ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্রি করেছেন। এসব পণ্য বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার ভ্যেনু শহরগুলোতে ভালো বিক্রি হয়। আরো কিছু পণ্য রিও ডি জেনিরোয় বিক্রি হয়। বিশ্বকাপ কর্তৃপক্ষের দামী দামী স্মারকবস্তুর তুলনায়, এ বাজারের সস্তা ও ক্ষুদ্র পণ্য সাধারণ ভোক্তাদের কাছে বেশি সমাদর পেয়েছে।

চাং সিয়া মাও বলেন, "সাধারণত মধ্য ও নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ পণ্য কিনেন। ধনী লোকেরা অভিজাত মার্কেট থেকে দামি ও ভালো মানের পণ্য কিনেন, তবে পরিমাণ কম। রাস্তার দু'পাশে ছোট স্টলগুলোর বিক্রির পরিমাণ, দামী দোকানগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।"

চীনের তুলনায় ব্রাজিলের ক্ষুদ্র পণ্যশিল্পের মান খারাপ। ব্রাজিলের মানুষ অল্প টাকা ব্যয় করে আনন্দদায়ক পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী। তবে এসব পণ্যের মান নিয়ে তারা খুব একটা মাথা ঘামান না। এর ফলে দেখতে সুন্দর, দামে সস্তা এবং বৈচিত্র্যময় ঈ ঊ'র ক্ষুদ্র পণ্য ব্রাজিলে বিরাট বাজার দখল করেছে।

চাং সিয়া মাও বলেন, "চীনের বাজার ব্রাজিলের বাজারের চেয়ে আরো সামনে এগিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ব্রাজিল চীনকে অনুসরণ করছে বলা যায়। গত শতাব্দীর ৯০'র দশকে চীনের বিক্রি বাজার আর ব্রাজিলের বর্তমান বাজার প্রায় একই মানের। ব্রাজিলের বাজারে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যগুলোর মান ভালো। তবে একই ধরণের পণ্য যদি ইউরোপের বাজারে যায়, তবে সেগুলো মধ্য বা নিম্ন মানের পণ্য বলে বিবেচিত হবে। কারণ, সে দেশগুলো উন্নত। আমি মনে করি, এ পণ্যগুলো বর্তমান ব্রাজিলের বাজারের উপযুক্ত।"

ব্রাজিলে চাং সিয়া মাওয়ের মতো অনেক ক্ষুদ্র পণ্য ব্যবসায়ী আছেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর তাদের জন্য বিশাল বাণিজ্যিক সুযোগ বয়ে এনেছে। চাং সিয়া মাও মনে করেন, চীনে উত্পাদিত এ সব পণ্য ছাড়া ব্রাজিলের বাজার এখনকার মতো এতো সতেজ হতো না। বাজারে বিক্রির উপযোগী পণ্য যত বেশি হয়, বাজারও তত চাঙ্গা হয়। চীনের পণ্যগুলো ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040