Web bengali.cri.cn   
স্বর্গের মন্দির
  2014-04-23 19:38:18  cri

কথিত আছে ,সম্রাট ইয়ুং ল ,রাজধানী পেইচিং এ বসবাস শুরু করার পর , দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। সৃষ্টিকর্তা যেন কোন ভাবেই বৃষ্টি ঝরাচ্ছিলেন না। খরার কারনে মাটি ফেটে চৌচির, কোন শস্য ,গাছ কিছুই জন্মাচ্ছিল না, জনগণ দুশ্চিন্তায় সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছিল না।

এসময় একদিন রাজা একটি সপ্ন দেখলেনঃ স্বপ্নে দেখলেন উনি মাটির উপর দিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন , তিনি দৌড়াতে দৌড়াতে মাটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন , সবকিছু এরকম সাদা কেন ?!ভালো করে খেয়াল করে ভয়ে আঁতকে উঠলেন , পুরো মাটি শুকিয়ে যেন সাদা সাদা রোমে ভরে গিয়েছে। হঠাৎ, তার যেন মনে হল জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে , গলা শুকিয়ে যেন কাঠ , প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পানি খুঁজে বেড়াতে লাগলেন।তিনি দুহাত আকাশের পানে তুলে , সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলতে লাগলেনঃ "হে প্রভু, দয়া করে এক পশলা বৃষ্টি দাও"। কথা শেষ হওয়া মাত্র , " গুড়ুম গুড়ুম " শব্দে যেন বজ্রপাত হল, বিদ্যুৎ চমকের সাথে সাথে চোখের সামনে হাজির হল রক্তিম বর্ণের একজন মানুষ। সে বলল , " রানীকে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে হবে, শুধুমাত্র তাহলেই বৃষ্টি ঝরবে!" বলা শেষ হওয়া মাত্রই তার ছায়াও আর দেখা গেল না। ঘুম থেকে জেগে উঠলেন রাজা, ভাবলেন দুঃসপ্ন ছিল একটা।!

রাজা ভাবলেন , এটা হতে পারে কোন দৈব আদেশ! তাই , আদেশ করলেন , " রানী /দেবী তিনদিন ধরে বৃষ্টির প্রার্থনা করবে, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত প্রাসাদে ফিরে যাওয়া যাবে না।"

কিন্তু কোথায় এ প্রার্থনা করাটা ভালো হবে!মন্ত্রী বর্গ আলাপ আলচনা শুরু করলেন; কেউ বললেনঃ "প্রাসাদের ভিতর কোন পরিচ্ছন্ন শান্ত পরিবেশে একটি বেদির ব্যবস্থা করলেই হবে ।" কেউ বললেন, " না না তা চলবে না, বৃষ্টির প্রার্থনা করতে হবে এক মনে, এই গোটা দেশটির সবকিছু নির্ভর করছে রানীর/ দেবীর প্রার্থনার উপর।" এ সময় , একজন শুভ্রকেশি প্রবীণ মন্ত্রী ,তার শুভ্র দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেনঃ " আমার মতে এই বেদি স্থাপন করা উচিত রাজ্যের প্রধান ফটকের বাইরে দক্ষিণ পাশে ।" রাজা এই প্রবীণ রাজসভা সদস্যের কথা শুনলেন।

ফং শুই মাস্টার "স্বর্গের মন্দিরের" দক্ষিণ দিক বাছাই করলেন প্রার্থনার জন্যে, গোলাকার বেদীর সেই জায়গাটি।এই দিন প্রানবন্ত হয়ে উঠল গোটা এলাকা , এখানে মাটির ঢিপির উপর তৈরি করা হল বেদী , এরপর ফিনিক্স পাখী রানীকে / দেবীকে নিয়ে হাজির হল সেখানে।

রানী সারা বছর বন্দী হয়ে থাকেন প্রাসাদে , সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ কোথায় তার !আজ যদিও কষ্টের সময় কিন্তু তবুও প্রাসাদের বাইরের অন্য রকম জগত দেখার একটা সুযোগও বটে ।সে সময় রানী যদিও বেদিতে প্রনামরত , কিন্তু তার কৌতূহলী দৃষ্টি ঘুরে ফিরছে চারপাশের নতুন জগতে! প্রার্থনা তো দুরের কথা ,রানী বরং বাইরে আসার সুযোগ পেয়ে উল্টো আনন্দিত।

এভাবে কেটে গেল একদিন , দিন শেষে রাতের আঁধার নেমে এল , রানীর উচ্ছ্বাস কমে এল , খিদেয় পেট 'চোঁচোঁ ' করতে লাগলো। তিনি প্রাসাদে ফিরতে চাইলেন , কিন্তু বৃষ্টি তো নামেনি!তার রাজার কথা মনে পড়ল , "বৃষ্টি না নামা পর্যন্ত প্রাসাদে ফিরে যাওয়া যাবে না! " রাজার আদেশ তো অমান্য করা যায় না। কি আর করা , কষ্ট হজম করে তিনি ঘুমানোর চেষ্টা করলেন।এভাবে তৃতীয় দিনের মাথায় রানী আর পারলেন না , আগের সেই উদ্দীপনা , উচ্ছ্বাস কিছুই আর অবশিষ্ট নেই , শুধু ভাবছেনঃ হে প্রভু ,যথেষ্ট হয়েছে , এবার একটু বৃষ্টি দাও , আমাকে উদ্ধার করো , আমি ক্লান্তিতে , ক্ষুধায় মরে যাচ্ছি । এ কথা বারেবারে বলতে থাকলো । কিন্তু তবুও বৃষ্টির দেখা নেই ।সন্ধ্যে হয়ে গেল , রাজাও চিন্তিত হয়ে পড়লেন , এভাবে চলতে থাকলে কেমন করে হবে ! তাই রাজা নিজেই প্রার্থনা স্থলে এসে হাজির হলেন । দূর থেকে রাজাকে আসতে দেখে রানী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না । অঝোর ধারায় দুচোখ বেয়ে জল নেমে এলো । হঠাত " গুড়গুড় " শব্দ শোনা গেল , আকাশ ভেঙে ঝরঝর করে নেমে এলো অতি আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি ।পরে রাজা ভাবলেন , বেশতো ব্যপারখানা , রানীকে তো বৃষ্টির জন্য বছর বছর এমন করে কষ্ট দেয়া যাবে না।তাই রানীর বৃষ্টির প্রার্থনার জায়গাটিতে একটি বেদি নির্মাণের আদেশ করলেন । রাজপরিবার প্রতি বছর এখানে এসে স্বর্গের উপাসনা করবেন , সৃষ্টিকর্তার কাছে ভালো ফলনের জন্য প্রার্থনা করবেন।


1 2 3 4 5
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040