বর্ণনাঃ
স্বর্গের মন্দির প্রাচীনকালের চীনের রাজাদের উপাসনালয়, এছাড়া এটি প্রাচীন চীনের স্বর্গ উপাসনার সংস্কৃতির যে দীর্ঘ ইতিহাস তার অন্যতম নিদর্শন। এর বিশাল বিশাল স্থাপনা , প্রাচীন বৃক্ষ এবং যে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক নিদর্শন এখানে সংগৃহীত আছে তাতে প্রাচীন চীনাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া প্রাচীন চীনের সামন্ত রাজাদের বুদ্ধিমত্তা , দূরদর্শিতা এবং উত্থান ও পতনের সাক্ষী হয়ে আছে এ মন্দির।
প্রচুর গাছগাছালিতে ঘেরা এ মন্দিরের শান্ত, স্নিগ্ধ, পবিত্র পরিবেশ আপনাকে এনে দিবে অনাবিল প্রশান্তি এবং আপনার অন্তরকে করবে পরিশুদ্ধ।
প্রাচীনকালে চীনারা বিশ্বাস করতো স্বর্গ হচ্ছে গোলাকার এবং পৃথিবী হচ্ছে বর্গাকার। তাদের এই ধারণার প্রতিফলন দেখা যায় এর নির্মাণ শৈলীতে। মন্দিরের উত্তরাংশ গোলাকৃতির আর দক্ষিনাংশ বর্গাকৃতির। এছাড়া উত্তরাংশ দক্ষিনাংশের চেয়ে উঁচু এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে, স্বর্গের অবস্থান পৃথিবীর চেয়ে উঁচুতে। এই উত্তরাংশে রয়েছে মন্দিরের প্রধান উপাসনালয়, এখানের রাজারা প্রাণী বলি দিয়ে ও সুগন্ধি কাঠি পুড়িয়ে ভালো ফসল পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনুকুল আবহাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতেন। আর দক্ষিণাংশের গোলাকার বেদিতে রাজা স্বর্গের উপাসনার আয়োজন করতেন। মন্দিরের এই দুটো অংশের ভবনগুলো ৩৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৩০ মিটার প্রশস্ত "লাল সেতু" দ্বারা সংযুক্ত। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৬০০টির অধিক নানা প্রজাতির প্রাচীন গাছ।
স্বর্গের মন্দিরে ছোট বড় মিলে প্রায় ৯২টির অধিক প্রাচীন ভবন আছে, যাতে মোট কক্ষের সংখ্যা ৬০০টির বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলো হচ্ছে, প্রার্থনা বেদি, গোলাকার বেদি, উপোষ ঘর, স্বর্গীয় সঙ্গীত ভবন এছাড়াও আছে "প্রতিধ্বনি দেয়াল" যা পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। বৃত্তাকার এই প্রতিধ্বনি দেয়ালটি ৬৫১ মিটার দীর্ঘ ও ৩.৭২ মিটার উঁচু। আমরা যদি এই দেয়ালের দুপ্রান্ত থেকে দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে খুব নিচু স্বরে কথা বলি, কান সে দেওয়ালের কাছে রেখে দিলে দূরত্ব অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও একে অন্যের কথা খুব স্পষ্টভাবে শুনতে পাবো।
পেইচিং স্বর্গের মন্দির উদ্যানের "প্রতিধ্বনি হল" এর দেয়ালের বাইরে উত্তর পশ্চিম কোনায় প্রায় ৬০০ বছরের অধিক পুরনো একটি বিশাল গাছ আছে যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই গাছটি দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়, কারণ এই গাছটি দেখে মনে হয় যেন এর গায়ে জড়িয়ে আছে ৯টি ড্রাগন। আর অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, এই ৯টি ড্রাগন মানুষের খোদাই করাও নয় আর রংতুলিতে আঁকাও নয়, এটি কালের বিবর্তনে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এই আকৃতি পেয়েছে।
| ||||