Web bengali.cri.cn   
ছাংও চাঁদে উঠার গল্প
  2013-03-04 17:28:54  cri

 ছাংও চাঁদে উঠার কাহিনী হচ্ছে চীনের প্রাচীনকালের সেরা দশটি প্রেমের গল্পের অন্যতম।

ছাংও হচ্ছে আকাশের চাঁদ-দেবী,আর তাঁর স্বামী হৌঈ একজন সাহসী ও দক্ষ রণদেবতা। তিনি কোনো দিন ফাঁকা তীর ছুড়েন না, তাঁর ছোঁড়া তীর কখনো লক্ষ্যহীন বা ব্যর্থ হয়েছে এমন ঘটনা কারোই জানা নেই। এমন একটা সময় ছিল যখন পৃথিবীতে হিংস্র পশুর উপদ্রবে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছিলো না। স্বর্গের রাজা এই খবর পেয়ে হৌঈকে এইসব উপদ্রব হিংস্র পশুদের হাত থেকে মানব জাতিদের রক্ষা করার জন্য হৌঈকে দায়িত্ব দিয়ে মর্তে পাঠান। হৌঈ স্বর্গীয় রাজার আদেশ পেয়ে সুন্দরী স্ত্রী ছাংওকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে। এরপর তিনি অতি বীরত্বের সাথে মানব জাতির ওপর আক্রমনকারী এমন প্রচুর হিংস্র পশু হত্যা করেন। হৌঈ সাফল্যের সঙ্গে স্বর্গের রাজার দেয়া কর্তব্য সাধন করার পর যখন আবার স্বর্গে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন,ঠিক এই সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো। আকাশে হঠাত্ একসাথে দশটি সূর্য আবির্ভূত হলো। তারা কেবল মজা করার জন্যই একসঙ্গে আকাশে উঠলো।

দশটি সূর্যের প্রখর রোদে পৃথিবীর মাটি ফেটে চৌচির হতে লাগল, ক্ষেতের খাদ্যশস্য শুকিয়ে পুড়ে যেতে থাকলো। মানুষ গরমে শ্বাস নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আর প্রচণ্ড গরমের কারনে হিংস্র পশুগুলোও শুকনো হ্রদ, নদী ও বন থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের ওপর আক্রমণ করা শুরু করলো।

মানবজাতির দুঃখদুর্দশার খবর পেয়ে স্বর্গের রাজা রণদেবতা হৌঈকে মানবজাতিকে দুঃখদুর্দশা থেকে উদ্ধার করার আদেশ দেন। এসময়ে তিনি হৌঈকে একটি লাল রংয়ের ধনুক ও এক থলি সাদা রংয়ের তীর দিয়ে বলেন "যাও যত শীঘ্র অত্যাচারি সূর্যদের হাত থেকে মানুষদের রক্ষা কর।"  

আদেশ পেয়ে হৌঈ প্রথমে প্রতিদিন একটি করে সূর্য আকাশে উঠার জন্য অনুরোধ করেন। যাতে পৃথিবীর মানুষ সূর্যের তীব্র আলো ও আগুণ গরম থেকে রক্ষা পায় আর মাটিতেও যেন ফাটল না ধরে। কিন্তু উদ্ধত ও একগুঁয়ে সূর্যগুলো হৌঈর কথা তো শুনলোই না,উপরন্তু পৃথিবীর আরো কাছে চলে আসে। ফলে পৃথিবীর সর্বত্রই আগুন জ্বলে উঠলো আর অসংখ্য মানুষ, পশু-পাখি বন-জঙ্গল আগুনে পুড়ে মহা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হল।

এতে হৌঈ প্রচণ্ড ক্রোধে আর রেগে গিয়ে সূর্যগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি কাঁধের ধনুক নামিয়ে সাদা রংয়ের তীর বের করে সূর্যগুলোকে লক্ষ্য করে একে একে তীর ছুড়তে লাগলেন। আর অল্পক্ষণের মধ্যেই হৌঈ নয়টি সূর্যকে ধ্বংস করে দিলেন। আর এই ধ্বংস হওয়া সূর্যগুলো পৃথিবীর আসে পাশে ছিটকে পড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে অবশিষ্ট শেষ সূর্যটি যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়ে হৌঈ-এর কাছে ক্ষমা চায় আর বলে যে, এরকম অন্যায় কাজ আর কখনো করবো না। ক্ষমা চাওয়ায় হৌঈ তাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, এমন দূরে গিয়ে সূর্যকে থাকতে বলা হল যাতে পৃথিবীতে নির্মল আলো আর উষ্ণতায় মানুষ, প্রাণী আর বন জঙ্গল সবকিছু শান্তিতে বাস করতে পারে। অবশেষে পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসলো আর সবাই হৌঈকে তার সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানালো। এই বিশেষ কীর্তির দরুণ হৌঈ পৃথিবীর মানুষের কাছে বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার মহাপুরুষ হয়ে উঠলো। দলে দলে মানুষ এসে তাঁর কাছে শিক্ষাগ্রহণের অনুরোধ করে। তাদের মধ্যে ফেংমেং নামে ছিল এক অসত্ ছেলে। অন্যসবার মতো ফেংমেং ও হৌঈর কাছ থেকে কুংফুসহ নানা রণকৌশল শিক্ষালাভ করে।

1 2 3
মন্তব্য
লিঙ্ক