Web bengali.cri.cn   
নির্বাচনী অস্থিরতায় নাকাল বাংলাদেশের পোশাক খাত
  2014-01-13 18:53:43  cri

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রেখেছে এই শিল্প। চল্লিশ লাখের বেশি দক্ষ, অদক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিক কাজ করে এই খাতে, যাদের বেশির নারী এবং এ কাজে যোগ দেওয়ার আগে কোনো চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন না। কিন্তু সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে এ শিল্পকে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটজনক পরিস্থিতিতে গার্মেন্ট কারখানাগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের প্রভাবশালী ও বহুলপ্রচারিত সংবাদপত্র - আরব নিউজ।

প্রতিবেদনের প্রথমেই বেবিলন গার্মেন্টসের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এ পোশাক রপ্তানি প্রতিষ্ঠান তার প্রচলিত ১০ ঘণ্টা কাজের সময় কমিয়ে আট ঘণ্টা করেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় পরিবহণ-ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় এর উত্পাদন আংশিকভাবে বন্ধ করাসহ নতুন অর্ডার না দিতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অনুরোধ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) মতে, বাংলাদেশের ২২ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টশিল্পে বেবিলন অন্যতম বৃহত্ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি ওয়ালমার্ট ইনকরপোরেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রেতার কাছে শার্ট, ট্রাউজার ও অন্যান্য পোশাক রপ্তানি করে। গত তিন মাসে বেবিলন তাদের মোট ফরমাশ গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।

বেবিলনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সাইফুল হক বলেন, "ডিসেম্বরে আমরা ক্রেতাদের অর্ডারের চাপে নতুন অর্ডার নেওয়া রীতিমতো বন্ধ করে দেই। অথচ এবার দেখুন, এবারের কাহিনী পুরো অন্যরকম।"

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১০০ শ্রমিকের মৃত্যুতে এ দেশের গার্মেন্ট কারখানা যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এ শিল্পকে তার চেয়েও বেশি বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্ গার্মেন্ট রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে এই বিপর্যয় এবং আরেক বড় সরবরাহকারী ক্যাম্বোডিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বিশ্বের বড় বড় ক্রেতারাও বিপদে পড়েছেন।

বিজিএমইএর ভাইস-প্রেসিডেন্ট শাহিদুল্লাহ আজিম বলেন, সাধারণত ক্রেতারা তিন মাস হাতে রেখে অর্ডার দেন। তাই এবারের এই অচলাবস্থার ফলাফল আগামী জুন নাগাদ বুঝতে পারা যাবে। পরের বারের সরবরাহের সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহের জন্য হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফরমায়েশ।

শিকাগো-ভিত্তিক বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অংশীদার মাইকেল জে সিলভারস্টেইন বলেন, বিশ্ববাজারে সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ স্থানে রয়েছে। এত বড় সরবরাহকারীর বিকল্প বের করাও সহজ নয়। তবে অধিকাংশ ক্রেতা আশা করে যে, বাংলাদেশ অন্ধকারের দিকে যাবে না। সঠিক সময়ের মধ্যে সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে পারবে বলেও আশা করেন তিনি।

তবে এই আশাবাদ সত্ত্বেও অনেক ক্রেতা বাংলাদেশের বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করছে এবং এক্ষেত্রে তারা ছুটছে যাচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, চীন ও শ্রীলঙ্কার মতো পুরনো পোশাক রপ্তানিকারক দেশের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের মতো উদীয়মান রপ্তানিকারকদের কাছে। ফলে অনেক বাংলাদেশি উত্পাদকের ফরমায়েশ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বেশি বিপদে। তাদের অভিযোগ, রানা প্লাজা ধসের পর এমনিতেই ফরমায়েশ যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে নানা ধরনের ব্যয়। অবশিষ্ট যা ছিল তাও এই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট দীর্ঘ সময় ধরে হরতাল ও অবরোধের আন্দোলন করে আসছে। এ আন্দোলন প্রায়ই সহিসংতায় রূপ নেয়। কিন্তু সে আন্দোলনের মধ্যেই সরকার গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলে, যেটা বর্জন করে বিরোধী জোট। এ জোট এখন নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আরেকটি অংশগ্রহণমূলক ভোট অনুষ্ঠানের জন্য দাবি জানাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের আশঙ্কা এ দাবি আদায়ে বিরোধী জোট আবারো ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং যে অস্থিরতার সূত্রপাত হয়েছে তা সহসা ধামবে না। (এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক