Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশে বিদেশি ঋণপ্রবাহে ধস
  2013-11-18 16:25:42  cri

গত জুলাই-আগস্ট প্রান্তিকে বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ ও সহায়তা প্রবাহ ব্যাপক মাত্রায় কমে গেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট সময়ে ২৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা দেশে এসেছে। কিন্তু ওই সময়ে আগের নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৭৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে ওই সময় নিট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্নক ৪৬ কোটি ডলার।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ-সহায়তা ছাড়িয়ে আনার উদ্যোগের তুলনায় সরকার নির্বাচন নিয়ে চেয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সাহায্য-প্রবাহ কমে গেছে।

ইআরডি'র উপাত্তে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ৩২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার সহায়তা এসেছিল। আগের নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ১০ কোটি ডলার পরিশোধের পর ওই সময় নিট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলারে।

কোনো একটি অর্থবছরে মোট যে পরিমাণ সাহায্য আসে, তা থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণ ও সহায়তার সুদ ও আসল পরিশোধের পর বাকি অর্থকেই নিট সাহায্য বলে বিবেচনা করা হয়।

উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা ২৭৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার ছাড় করে, যা ছিল তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আগের নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যয় হয় ৮৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ফলে নিট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছাড়কৃত ২৭৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার ঋণ-সহায়তার মধ্যে ২৭৬ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার ছিল প্রকল্প সাহায্য এবং বাকী ২ কোটি ডলার খাদ্য সাহায্য।

২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ২০৩ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা আসে, যার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ছিল ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং খাদ্য সাহায্য ৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার। আগের নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে ওই সময় খরচ হয় ৭৮ কোটি ৫৫ ডলার। ফলে ওই সময় নিট সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৪ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার ডলার।

সে হিসাবে গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি ঋণ-সহায়তা ছাড় করে উন্নয়ন অংশীদাররা। ওই সময় নিট সহায়তা বাড়ে ৩৪ শতাংশ।

এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ১৭৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের বিদেশি সাহায্য এসেছিল। তার মধ্যে সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ওই সময় নিট সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে।

২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট ২১৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা এসেছিল। তার মধ্যে ৬৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার ব্যয় হয় পুরনো দেনা পরিশোধে। ফলে নিট ঋণ-সহায়তা দাঁড়ায় ১৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে নিট ঋণ-সহায়তা এসেছিল ১০২ কোটি ২৮ লাখ ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১০১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৬১ কোটি ৩ লাখ ডলার, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং ২০০১-০২ অর্থবছরে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। ২০০০-০১ অর্থবছরে উন্নয়ন অংশীদাররা ৯৫ কোটি ২৩ লাখ ডলারের নিট ঋণ ও সহায়তা দেয় এবং ১৯৯৯-২০০০ দেয় ১১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখ্‌ত বলেন গত বছর প্রায় ৩০০ ডলারের বিদেশি ঋণ ও সহায়তা এলেও এবারের পরিস্থিতি বেশ নাজুক।

তাঁর মতে, সরকার এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে এখন নির্বাচন। উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে তেমন মনোযোগ তাদের নেই।

মন্তব্য
লিঙ্ক