Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় এখন ১০৪৪ ডলার
  2013-09-09 15:58:26  cri

বাংলাদেশের নাগরিকদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এক হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে নতুন পদ্ধতিতে যে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) হিসাব করেছে, তাতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বছরে ৯২৩ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪ ডলারে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ছিল ৬৩০ ডলার ছিল।

পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভিত্তিবছর পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সম্প্রতি। প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন থেকে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করা হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫-০৬ এর তথ্যকে ভিত্তি ধরে প্রাথমিক হিসাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর পুরনো, অর্থাত্ ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তি বছরের হিসাবে এ হার ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। নতুন ভিত্তি বছরের হিসাবে জিডিপির আকার পুরনো ভিত্তি বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালকে ভিত্তি বছর ধরে সর্বপ্রথম জিডিপি প্রাক্কলন শুরু হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে ২০৮৪-৮৫ সালকে ভিত্তি ধরে শুরু হয় জিডিপির হিসাব। ২০০০ সাল থেকে ১৯৯৫-৯৬ বছরকে ভিত্তি ধরে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করা হচ্ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিত্তি বছর পরিবর্তনের ফলে কৃষি খাতের শস্য উপখাতে ২৪টি নতুন শস্যসহ মোট ১২৪টি শস্যের উত্পাদনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে কৃষি খাতে মোট মূল্য সংযোজন প্রায় ৯ শতাংশ বাড়বে।

এছাড়া মোট মূল্য সংযোজন শিল্পখাতে ৫ শতাংশ এবং সেবাখাতে ১৬ শতাংশ বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ভাল করেছে। তারই ইতিবাচক ফল হচ্ছে মাথাপিছু আয়ে উন্নতি।

তিনি বলেন, ভিত্তি বছর পরিবর্তনের ফলে অনেক নতুন নতুন খাত যোগ হয়েছে। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়তে পারে। সরকার চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে (আগের ভিত্তি বছরের হিসাবে) ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে।

মাথাপিছু আয় হাজার ডলার ছাড়ালেও এ দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান এখনো চতুর্থ। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি - ২ হাজার ৯২৩ ডলার। আর বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫২৭ ডলার। আর ১ হাজার ৩৮০ ডলার মাথা পিছু আয় নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সার্কে তৃতীয়।

মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৯০ ডলারে উন্নীত করতে পারলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার তিনটি শর্তের একটি পূরণ হবে বাংলাদেশের। এছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মানবসম্পদ সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে হবে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত পূরণ করে 'স্বল্পোন্নত' দেশের পরিচয় ঘোচাতে এরইমধ্যে একটি 'কর্মপরিকল্পনা' গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের 'অভাবনীয়' সাফল্যের তথ্য বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

গত জুনে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট' শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্য বিমোচনে চলতি বছরের মধ্যেই জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্থাত্ এমডিজি-তে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে ছিল। এমডিজি অনুযায়ী ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে গত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ২০০০ সালে যেখানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৫ সালে তা কমে সাড়ে ৫ কোটিতে এবং ২০১০ সালে আরো কমে ৪ কোটি ৭০ লাখে নেমে আসে।

সাম্প্রতিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৫ সাল নাগাদ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ শতাংশ কমে আসবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার তখন দাঁড়াবে ২৬ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমানে দেশে দারিদ্রের হার ২৭ শতাংশের নিচে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রধানত দুটি কারণে বাংলাদেশ এই সফলতা অর্জন করেছে। এর একটি হলো মজুরি বৃদ্ধি। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই শ্রমের মজুরি বেড়েছে গত এক দশকে। অন্যটি হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসে 'অন্যের ওপর নির্ভরশীল লোকের' সংখ্যা কমে যাওয়া।

বিশ্বব্যাংকর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামে কর্মসংস্থান ও মজুরি বেড়েছে, দেশের ভেতরে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, স্থানীয় বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে এবং তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। (এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক