Web bengali.cri.cn   
সরঞ্জামনির্মাণ শিল্পে চীনের উন্নয়ন পথ
  2013-12-30 18:48:11  cri


সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীন ধাপে ধাপে বিশ্ব অর্থনৈতিক সত্তা ব্যবস্থায় মিশেছে। চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের দ্রুত উন্নতি হয়েছে। চীনের শিল্প ও তথ্যায়ন বিষয়ক উপমন্ত্রী সু পো জানান, যন্ত্রনির্মাণ শিল্প জাতীয় অর্থনীতির সরল পুনরুত্পাদন এবং পুনরুত্পাদন সম্প্রসারণের জন্য উত্পাদনের প্রযুক্তিগত সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করে। যন্ত্রনির্মাণ শিল্প হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষ করে শিল্প উন্নয়নের ভিত্তি।

উপমন্ত্রী সু পো বলেন, "আমি সবসময় মনে করি, যন্ত্রনির্মাণ শিল্প, বিশেষ করে উচ্চ-মানের যন্ত্রনির্মাণ শিল্প হচ্ছে একটি দেশের গোটা শক্তির প্রতিফলন। কারণ যন্ত্রনির্মাণ শিল্প গোটা জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন শিল্প আর প্রতিরক্ষা নির্মাণের জন্য কিছু কৌশলগত সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করে। যন্ত্রনির্মাণ শিল্প হচ্ছে গোটা দেশের অর্থনৈতিক প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার মৌলিক শিল্প।"

১৯৯৮ সালে চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনীতি সংক্রান্ত কর্মসম্মেলনে প্রথম বারের মতো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, 'জোরালোভাবে যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন সাধন করা হবে।" ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় পরিষদ 'যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন-সংক্রান্ত কতগুলো প্রস্তাব' প্রকাশ করে।

বহু বছরের বিকাশের পর চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্প ব্যাপক আকারের আর বৈচিত্র্যময় শিল্পব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং চীনের জাতীয় অর্থনীতির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ শিল্পে পরিণত হয়েছে।

২০০০ সাল থেকে মোটরগাড়ি চীনের সাধারণ পরিবারে প্রবেশ করতে শুরু করে। তবে চীনের গাড়ি উত্পাদনের মূল সরঞ্জাম মোটামুটি আমদানি-নির্ভর ছিল। ব্যক্তিগত গাড়ির দাম বেশি এবং ব্র্যান্ডের সংখ্যা কম ছিল। এমন অবস্থায় চীনের চিনান দ্বিতীয় মেশিন যন্ত্রপাতি গোষ্ঠির উত্পাদিত যন্ত্রপাতিগুলো বাজারে স্বীকৃতি পায়। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান চাং চি কাং বলেন,"আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রযুক্তি আমদানি করেছি এবং আমাদের নিজের প্রযুক্তি রূপান্তর করেছি। প্রযুক্তির ওপর আমাদের আস্থা তৈরি হওয়ার পর এখন আমাদের আর কোনো দেশের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। এখন চিনান দ্বিতীয় মেশিন যন্ত্রপাতি গোষ্ঠির নিজস্ব প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে।"

গত দশ-বারো বছর এ কোম্পানি প্রতিবছর তার মোট আয়ের ছয় শতাংশ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে ব্যয় করে। এ হার এ ক্ষেত্রে চীনের গড় হার ১.৯ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। নকশা আর উত্পাদন ক্ষেত্রে নিরন্তর উদ্ভাবন করার দরুণ বিশ্বে গাড়ির চাপ দেওয়ার যন্ত্রের বাজারের কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে। এখন চীনের ৮৫ শতাংশ গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের নিজের তৈরি চাপ দেওয়ার যন্ত্রের উত্পাদন লাইন ব্যবহার করে। এর ফলে চীনের গাড়ি উত্পাদনের ব্যয় অনেক হ্রাস পেয়েছে। মোটরগাড়ি কাঙ্খিত সময়ের কমপক্ষে তিন বছর আগে সাধারণ চীনা পরিবারে প্রবেশ করেছে।

পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলো শ্রমঘন নির্মাণশিল্প চীনে স্থানান্তর করার পাশাপাশি চীন বৃহত্তম বিশ্ব কারখানায় পরিণত হয়েছে। এক সময় চীনের উত্পাদনের কথা বললে মানুষ টি-শার্ট, জুতা আর ব্রেকারসহ বিভিন্ন নিম্ন-পর্যায়ের পণ্যের কথা মনে করতো। কিন্তু এখন চীনের নির্মাণশিল্প মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে।

বিগত দশ বছরে চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্প প্রতি বছর ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে অনেক প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান হয়েছে। ২০০৯ সালে চীনের যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের উত্পাদন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রথম স্থান দখল করে। এর মধ্য দিয়ে চীন যন্ত্রনির্মাণ খাতের বড় দেশে পরিণত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজার দখল করেছে। তবে এখন পর্যন্ত চীন যন্ত্রনির্মাণের শক্তিশালী দেশ নয়। যন্ত্রনির্মাণের কিছু কিছু মূল খুচরা যন্ত্রাংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ প্রসঙ্গে চীনের প্রকৌশল অ্যাকাডেমির অ্যাকাডেমিশিয়ান লিউ পাই চেং বলেন, "আমাদের দেশ শিগগির সি-৯১৯ নামে বড় আকারের যাত্রীবাহী বিমান নির্মাণ করবে। এ বিমানের আসন সংখ্যা ১৮০ থেকে ২০০। ২০১৫ সালে সেটার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হবে। তবে এ বিমানের ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। আমার এ উদাহরণ টানার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা এখনো উচ্চ-মানের যন্ত্রপাতি নির্মাণের মূল প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারিনি।"

চীন কীভাবে আসল যন্ত্রনির্মাণের শক্তিশালী দেশ হতে পারে – এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শিল্প ও তথ্যায়ন মন্ত্রী মিয়াও ইয়ু। তিনি বলেন, "আমার মনে হয়, যন্ত্রনির্মাণ ক্ষেত্রের একটি সত্যিকারের শক্তিশালী দেশ হতে হলে কমপক্ষে তিনটি প্রতীক থাকতে হবে। প্রথম, কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি আয়ত্ত করা। দ্বিতীয়, যন্ত্রনির্মাণ খাতের বিশ্ববিখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানি থাকা। এবং তৃতীয়, আন্তর্জাতিক যন্ত্রপাতি বাজারে নিজের স্থান থাকা। কেবল এ সব শর্ত থাকলে আমরা যন্ত্রনির্মাণ শিল্পের আসল বড় দেশ হতে পারবো।" (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক