Web bengali.cri.cn   
চীনের শিল্পায়ন থেকে শিখতে পারে আফ্রিকা: বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা
  2013-12-23 19:05:03  cri

বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক মার্সেলো গিওগাল আফ্রিকা থেকে প্রকাশিত 'দ্য ইস্ট আফ্রিকান' পত্রিকায় সম্প্রতি 'পূর্বযাত্রা: আফ্রিকার নীতিনির্ধারকদের জন্য চীনের শিল্পায়ন শিক্ষা'শীর্ষক এক নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধে বলা হয়েছে, যদিও আফ্রিকান দেশগুলো হুবহু চীনের শিল্পায়নের পথ গ্রহণ করতে পারবে না, তবে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি সঞ্চার, সক্রিয় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বিনিয়োগে উত্সাহ প্রদানসহ চীনের নানা অভিজ্ঞতা থেকে আফ্রিকান দেশগুলো শিখতে পারে।

নিবন্ধে গিওগালে বলেন, "চীন সরকার গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে গ্রামাঞ্চলে 'পারিবারিক চুক্তি-ভিত্তিক ঠিকা ব্যবস্থা' চালু করার মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি উত্পাদনের স্বাধীনতা দিয়েছে। প্রতিটি পরিবার নিজ নিজ অবস্থা অনুসারে কৃষি উত্পাদন ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এ ব্যবস্থা কার্যকর করার ফলে চীনের বিপুল সংখ্যক কৃষকের উত্পাদন-সক্রিয়তা এসেছে, গ্রামীণ উত্পাদনশক্তি মুক্তি পেয়েছে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এর ফলে কৃষক-শ্রমিক শহরে গিয়ে চাকরি করার সুযোগ পেয়েছে। গত ৩০ বছর ধরে চীন পর্যাপ্ত ও সস্তা শ্রমশক্তি পেয়েছে।"

নিবন্ধে চীনের অনবরত আন্তর্জাতিক সমাজ এবং নিকটবর্তী অঞ্চলের সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রয়াসের প্রশংসা করা হয়েছে। লেখক মনে করেন, এর ফলে চীন ধারাবাহিকভাবে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ, উচ্চ ও নতুন প্রযুক্তি, পেশাগত জ্ঞান ও অন্যান্য সম্পদ পেয়েছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে এক 'মূল্য চেইন' প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব ব্যবস্থা চীনের রপ্তানি খাতকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। রপ্তানি আবার চীনের শিল্পায়নের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিবন্ধে আরো বলা হয়, চীনের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার অবিচলভাবে বিদেশমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ করে। নতুন শিল্পপ্রকল্প পাওয়ার জন্য তারা প্রশাসন ও অফিসসহ নানা ক্ষেত্রের বাধা-বিপত্তি নির্মূল করেছে। তারা যৌথ উদ্যোগী কোম্পানি আর শিল্পএলাকা প্রতিষ্ঠাসহ নানা পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে।

সম্পদ ব্যবহার ক্ষেত্রে গিওগালে মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে - এমন নয়। বরং এক একটি আবাদী জমির চাষ, এক একটি শিল্পপণ্য উত্পাদন এবং এক একটি দোকান খোলার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে। যদিও চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ পর্যাপ্ত নয়, তবে দেশটি মানবসম্পদ লালন, বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সড়ক ও বন্দরসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিসেবা উন্নত করার ক্ষেত্রে তার সীমিত সম্পদ ব্যবহার করেছে। এটা চীনের অর্থনীতির টেকসই ও স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গিওগালে জোর দিয়ে বলেন, আফ্রিকান দেশগুলো হুবহু চীনের অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারবে না। কারণ এটা শিল্প আর অন্য ক্ষেত্রের বাস্তব রাষ্ট্রীয় অবস্থার ওপর নির্ভর করে। যেমন, এখন আফ্রিকার কৃষি অধিকাংশ হচ্ছে ক্ষুদ্র আকারের আত্মনির্ভরশীল কৃষি। আফ্রিকার শ্রমশক্তির আকার, মান আর সচলতাকে চীনের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ তার মোট বাণিজ্যের পরিমাণের কেবল ১০ শতাংশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে এ হার হচ্ছে ৪০ শতাংশ। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিস্থিতি ভেঙ্গে দেওয়া আফ্রিকার শিল্পায়ন বাস্তবায়নের জন্য খুব জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে আফ্রিকা অনেক কিছু শিখতে পারে। চীনের সাফল্য থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, শিল্পায়নের কোনো সোজা পথ নেই। (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক