Web bengali.cri.cn   
চীনের দারিদ্রবিমোচনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা
  2013-12-16 16:15:21  cri


কয়েক মাস আগে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের ডিংশি শহরে গিয়ে এক নতুন দারিদ্রবিমোচন প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন।

কানসু হচ্ছে চীনের সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশগুলোর অন্যতম। দরিদ্র জনসংখ্যা এ প্রদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। কঠোর প্রাকৃতিক অবস্থা আর অনুন্নত অর্থনীতির কারণে ডিংশি 'বিশ্বের সবচেয়ে কষ্টময়' স্থান নামে পরিচিত। দরিদ্র অঞ্চলের উন্নয়ন চাইলে আর্থিক ঘাটতির সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। সেটা কীভাবে সম্ভব? কানসু প্রদেশের দারিদ্রবিমোচন কার্যালয়ের উপপ্রধান লি লোং চি বলেন, "দশ-বারো বছর আগে বিশ্বব্যাংক কানসু প্রদেশে দারিদ্রবিমোচন প্রকল্প শুরু করে। এ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দরিদ্র এলাকাগুলোর আর্থিক সংকটের সমাধান হয়েছে। গত নব্বইয়ের দশকে ১৪০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি সত্যি কোনো ছোট অঙ্ক ছিল না। তখন বড় বড় জেলা ১০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি সহায়তা অর্থ পেতো। যেমন ডিংশি শহরের মিন জেলা টানা ছয় বছর ধরে বছরে দুই কোটি ইউয়ান সহায়তা অর্থ পেয়েছে।"

এ ১৪০ কোটি ইউয়ান সহায়তা অর্থের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছিল অর্ধেক, বাকী অর্থেক ছিল চীন সরকারের বরাদ্দ। বহু বছরের প্রচেষ্টার পর কানসু প্রদেশে বিশ্বব্যাংকের দারিদ্রবিমোচন বিষয়ক ঋণদান প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। কৃষকদের মাথাপিছু আয় আর খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ স্থিতিশীল গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কানসু প্রদেশের চাংচিয়াছুয়ান জেলার দারিদ্রবিমোচন কার্যালয়ের উপপ্রধান মা হুই বলেন, "১৯৯৭ সালে দারিদ্রবিমোচন প্রকল্পের জন্য ৬ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করা হয়। এ অঙ্ক সেই সময় ওই জেলার প্রায় দশ-বারো বছরের আয়ের সমান। এ সহায়তা অর্থ আমাদের জেলার দরিদ্র পরিবার আর গোটা জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন প্রতি বছর জেলা সরকার গ্রামের সড়ক এবং খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প নির্মাণের জন্য ৩ কোটি ইউয়ান অর্থ সংগ্রহ করে। তা ছাড়া দরিদ্র পরিবার উন্নয়নের জন্য বিশেষ তহবিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতি বছর দশটি গ্রাম বাছাই করে প্রতি গ্রামকে ৫ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ দেওয়া হয়।"

বিশ্বব্যাংকের দারিদ্রবিমোচন বিশেষজ্ঞ উলরিচ স্মিত দীর্ঘ দিন ধরে চীনে দারিদ্রবিমোচন কাজ করেন। তিনি কানসু প্রদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের ব্যাপারে সন্তুষ্টু। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের দারিদ্রবিমোচনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে নিজের দরিদ্র হওয়ার কারণ সম্পর্কে উপলব্ধি জাগিয়ে তোলা এবং দারিদ্রবিমোচনে সচেতন সৃষ্টি করা। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র লোকদের ব্যাপকভাবে দারিদ্রবিমোচন কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া; কেবল সহায়তা প্রদান নয়।"

উলরিচ স্মিত বলেন, "কানসু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাজ হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া এবং কৃষকদের উন্নয়নের চাহিদা আর তাদের উন্নয়ন পথের নানা সমস্যা জেনে নেওয়া। এর পাশাপাশি কী কী পুঁজি বিনিয়োগ প্রকল্প এবং কেমন পরিমাণের বিনিয়োগ দরকার – সে সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ জেনে নেওয়া, যাতে বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে তাদের মুনাফা অর্জনের সামর্থ্য নিশ্চিত করা যায়।"

স্মিত জানান, এ বছরের জুন মাসের শেষ দিক পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক চীনকে মোট ৫২.৩৯ বিলিয়ান ইউয়ান ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দারিদ্রবিমোচন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্র। তারা কেবল দরিদ্র অঞ্চলের সড়ক, বিদ্যুত ও টেলিযোগাযোগসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে তা নয়; বরং দারিদ্রবিমোচন আর শিল্প পরিকল্পনার জন্যও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রস্তাব দিয়েছে। স্মিত দারিদ্রবিমোচন খাতে চীনের প্রয়াসের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "গোটা পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দারিদ্রবিমোচন ক্ষেত্রে চীনের অগ্রগতি অন্যান্য দেশের চেয়ে দ্রুত হয়েছে। চীন অন্য দেশকে কিছু গ্রহণযোগ্য পরামর্শ দিতে পারে। প্রথম, চীনের একটি অতি স্পষ্ট দারিদ্রবিমোচন লক্ষ্য আছে এবং দরিদ্র অঞ্চল নির্ধারণের মাধ্যমে দারিদ্রবিমোচনে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এর পাশাপাশি চীন নতুন ধরনের গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সাবিমা ব্যবস্থা এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থাসহ নানা সামাজিক নিশ্চয়তাবিধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। এ ব্যবস্থাগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্র জনসাধারণকে গোটা সমাজের নিরাপত্তা নেটে অন্তর্ভুক্ত করা। দ্বিতীয়ত, চীন দরিদ্র মানুষের মধ্যে সক্রিয়তা সঞ্চার করার ওপর গুরুত্ব দেয়। তাদের উন্নয়নের প্রয়োজন আর সমস্যা জেনে নিয়ে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাহায্য করেছে এবং প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়েছে।"

তবে ২০১১ সালে চীন সরকার নির্ধারিত বার্ষিক আয় ২৩০০ ইউয়ানের দারিদ্রবিমোচনের মানদণ্ড অনুসারে চীনে আরো ১০ কোটি দরিদ্র জনসংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে কানসু প্রদেশে রয়েছে ২৩ লাখ দরিদ্র মানুষ।

চীন সরকার নির্ধারিত দারিদ্রবিমোচনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২০ সাল পর্যন্ত দরিদ্র লোকদের আহার, বাধ্যতামূলক শিক্ষা, মৌলিক চিকিত্সা ও বসতবাড়ির নিশ্চয়তা বিধান করা।

স্মিত বলেন, ভবিষ্যতেও বিশ্বব্যাংক চীন সরকারের সঙ্গে দারিদ্রবিমোচন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে যাবে। তিনি আরো জানান, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক চীনে মোট ৪৪টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। এর মধ্যে ১৫ কোটি ডলার ঋণ কানসু ও কুইচৌ প্রদেশের দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কৃষির জন্য দেওয়া হবে।

স্মিত বলেন, "এ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে প্রধানত অতি দূরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষিশিল্প উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হবে। যেমন ফসল উত্পাদন, গৃহপালিত পশু পালন ও কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। এখন চীন সরকার ব্যাপক আকারের অবকাঠামো নির্মাণের দ্বারা দারিদ্রবিমোচন থেকে বাজার-ভিত্তিক নির্দেশনা নীতির দিকে রূপান্তরের পরিকল্পনা করছে। অর্থাত্ দরিদ্র কৃষক, দারিদ্রবিমোচনের কাজে নিযুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আর সরকার একসাথে আয় বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। যেমন, সম্প্রতি আমি কুইচৌ প্রদেশ সফরকালে দেখেছি কৃষকদের একটি সাদা চা সমবায় আর শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে উত্পাদিত চায়ের দাম প্রতি কেজি ১০০০ ইউয়ান। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক কৃষকদের প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং অবশেষে তাদের পণ্য বিক্রি হয়েছে।"

কানসু প্রদেশের সর্বশেষ লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালের আগে ২০ লাখ অতি দরিদ্র মানুষের দারিদ্র বিমোচন করা। বিশ্বব্যাংকের সাহায্য এ লক্ষ্য অর্জনের গতি দ্রুত হবে। (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক