Web bengali.cri.cn   
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিতে পরিবর্তনের ধারা
  2013-11-11 19:13:08  cri


সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় পর চীনের অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি-হার দাঁড়িয়েছে ৯.৬ শতাংশের ওপরে। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল অর্থাত্ দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা চলাকালে চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি-হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি চীনের সমাজবিজ্ঞান অ্যাকাডেমি প্রকাশিত 'চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাস' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে জিডিপি গত বছরের তুলনায় ৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চিত উপাদান এখনো অপেক্ষাকৃত বেশি বলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ২০১৪ সালে চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি-হার প্রায় ৭.৫ শতাংশ হবে।

চীনা ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছাও ইউয়ান চাং বলেন, "চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাওয়া থেকে বোঝা যায়, অর্থনীতি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এ নতুন পর্যায়ে কেবল প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে - এমন নয়, এ পর্যায়ের আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাঠামোগত পরিবর্তন। অতীতে আমরা কেবল খাওয়া-দাওয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতাম, পরিবেশ সুরক্ষার ওপর তেমন মনোযোগ দিতাম না। কিন্তু এখন আমরা খাওয়া-দাওয়া ও পরিবেশ সুরক্ষাকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা এক নতুন পরিবর্তন।"

আসলে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি সবসময় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। এখন বিশ্ব অর্থনীতি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের আগেকার দ্রুত উন্নয়ন-যুগ থেকে গভীর রূপান্তর ও সুবিন্যাসের যুগে প্রবেশ করেছে। এর পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধি-যুগ থেকে মধ্য দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধি-যুগে প্রবেশ করেছে। নতুন পর্যায়ে থাকবে নতুন পরিবর্তন আর নতুন সমস্যা। অতীতে চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়, পরিবেশদূষণ এবং বাড়তি উত্পাদন ক্ষমতাসহ নানা সমস্যা মোকাবিলা করেছে। এখন মন্থর প্রবৃদ্ধি-গতির মধ্যে অর্থনৈতিক কাঠামো সুবিন্যাস্ত করা চীনের জন্য মন্দ কাজ নয়।

এবছর প্রকাশিত 'মানবসম্পদ নীলপত্র' অনুযায়ী, দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা চলাকালে প্রতিবছর চীনে স্নাতক হওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০ লাখ। চীনের গ্রামাঞ্চলে আরো ১০ কোটি উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি আছে। তা ছাড়া শহরে কর্মরত ২০ কোটি গ্রামীণ কর্মীর মধ্যে অনেকের চাকরি স্থিতিশীল নয়।

কিছু দিন আগে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খে ছিয়াং ব্রিটেনের 'ফাইনান্সিয়াল টাইমস' পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের জরিপকৃত বেকারত্বের হার ৫ শতাংশ। বেকারত্বের হার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি-হার আর মুদ্রাস্ফীতির হারসহ নানা সূচক সঠিক পর্যায়ে ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। চীন সরকারের উচ্চপর্যায় এই প্রথম বারের মতো এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করলো। চীন সরকার আগে নিবন্ধিত বেকারত্বের হার ব্যবহার করতো।

চীনা ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ছাও ইউয়ান চাং বলেন, 'আমরা বলি, চীনের অর্থনীতি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই নতুন পর্যায় আর পুরনো পর্যায়ের মধ্যে বেশ তফাত্ আছে। সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হচ্ছে চীনের শিল্পের কাঠামো অতীতে এককভাবে নির্মাণশিল্পের ওপর নির্ভর করা থেকে প্রথম পর্যায়ের শিল্প, মধ্যম পর্যায়ের শিল্প আর তৃতীয় পর্যায়ের শিল্পের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের দিকে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশেষ করে পরিসেবা শিল্প অতি দ্রুত বিকশিত হয়েছে।"

বিনিয়োগ ছিল চীনের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। কিন্তু এখন বিনিয়োগ দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। দশ বছর আগে চীনের স্থাবর সম্পত্তি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। অনুমান অনুযায়ী, এ বছর এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ৪৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। অর্থাত্ এ খাতে বিনিয়োগ প্রায় দশ গুণ বেড়েছে। কিন্তু এতো বেশি অর্থ কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে? নতুন অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি খুঁজে বের করা হবে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কাঠামো সুবিন্যাস্ত করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক