Web bengali.cri.cn   
চীন ও মধ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার ভবিষ্যত বিস্তীর্ণ
  2013-09-09 15:55:28  cri


চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৩ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর চারটি মধ্য এশীয় দেশে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন। দেশগুলো হলো তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তান। এছাড়া তিনি ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত অষ্টম জি-টোয়েন্টি শীর্ষসম্মেলন যোগ দেন এবং আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তানের বিশকেকে অনুষ্ঠেয় শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর নেতা পরিষদের ১৩তম অধিবেশনে অংশ নেবেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সি চিন পিং এই প্রথম বার মধ্য এশিয়া সফর করছেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক আবার জনগণের দৃষ্টিতে এসেছে বিশেষভাবে। এবারের সফরকালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পরিবহণ, টেলিযোগাযোগ ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর করবেন। এর মাধ্যমে চীন ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।

এ বছর অনুষ্ঠিত একাদশ কাজাখস্তান-চীন পণ্য মেলায় ওই দেশটির রাজধানী আলমা-আতার শিল্প ও বাণিজ্য ব্যুরোর উপপ্রধান আদিস সেইদাকমাতোভ সংবাদদাতাকে জানান, চীনের তৈরি পণ্য কাজাখস্তানের বাজারে খুব জনপ্রিয়। তিনি বলেন, "আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, কাজাখস্তানের বাজারে 'চীনের তৈরি' যে কোনো পণ্যের চাহিদা আছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পণ্যের গুণগত মান অনেক উন্নত হয়েছে। আগে ক্রেতারা চীনের তৈরি ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো কেনার সময় খুব সাবধান থাকতো। গত দু'বছরে চীনে উত্পাদিত গাড়ি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা চীনের গাড়ির গুণগত মানের দ্রুত উন্নয়ন দেখেছি। আমি চীনা গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর নাম বলতে পারি।"

চীন কেবল মধ্য এশিয়ায় পণ্য রপ্তানি করে তা নয়; বরং মধ্য এশিয়া চীনের এক গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি আর কাঁচামাল আমদানির উত্সও বটে। চীনের আন্তর্জাতিক সমস্যা গবেষণালয়ের মধ্য এশিয়া গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক মাদাম চেন ইয়ু রো বলেন, "২০১২ সাল পর্যন্ত চীন আর মধ্য এশীয় দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০১ সালের তুলনায় এ পরিমাণ দশ গুণ বেড়েছে। বোঝা যায়, দশ-বারো বছর পারস্পরিক উপকারিতামূলক অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চীন ও মধ্য এশীয় দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্রুত বিকশিত হয়েছে।"

কাজাখস্তানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কলেজের অধ্যাপক, চীন বিষয়ক গবেষক ভালিখান তুলেশোভ বলেন, "আমাদের দু'দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন দ্রুত বেড়েছে। তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র হচ্ছে দু'দেশের সহযোগিতার চালিকাশক্তি। প্রযুক্তিগত সহযোগিতা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আমরা জানি, চীন হচ্ছে ২০১৭ সালের আসতানা বিশ্ব মেলার সহযোগিতার অংশীদার। এ ক্ষেত্রে চীনের প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। আমরা আশা করি, চীন আমাদেরকে উন্নত প্রযুক্তি যোগাবে।"

চীন ও মধ্য এশীয় দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা দ্রুত বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি কিছু নতুন সমস্যাও আবির্ভূত হয়েছে। চীনের আন্তর্জাতিক সমস্যা গবেষণালয়ের মধ্য এশিয়া গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক চেন ইয়ু রো বলেন, "মধ্য এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিতে ব্যবধান আছে। ফলে তাদের বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার চাহিদাও পরিবর্তিত হয়েছে। কাজাখস্তান হচ্ছে মধ্য এশিয়ার একটি উন্নত অর্থনৈতিক সত্তা। অন্যদিকে তুর্কমেনিস্তান ও কিরগিজস্তান হচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও দরিদ্র দেশ। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কাঠামোতে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক একত্রীকরণ আর বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে চাইলে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তা ছাড়া, মধ্য এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আরেকটি সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। সেটা হচ্ছে পানিসম্পদ সমস্যা। এ কারণে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উত্তেজনাময় হয়ে ওঠে। এ দ্বন্দ্ব নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের বহুপক্ষীয় সহযোগিতার অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলবে।"

চেন ইয়ু রো বলেন, যদিও চীন ও মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় চ্যালেঞ্জ আছে, তবে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক খাতে চীন আর মধ্য এশিয়ার সহযোগিতার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকবে। (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক