Web bengali.cri.cn   
চীনের পোশাক শিল্পে ব্র্যান্ড তৈরীর কৌশল
  2013-10-28 15:28:45  cri


ডিজাইনার ইয়োমহাক সেওন

ইয়োমহাক সেওন হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একজন পোশাক ডিজাইনার। তিনি সানশোং, ইলিয়ানসহ সে দেশের বিখ্যাত তৈরী পোশাক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি চীনের বিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড- হোংতোং কোম্পানীর একজন বিদেশী ডিজাইনার, যার অধীনে রয়েছে আরও একদল সুদক্ষ ও স্বাধীন ডিজাইনার। তিনি বলেন, "আমি হোংতোং কোম্পানীতে আসার মূল কারণ অধিক বেতন নয়। আমি চীনের বাজারে সুযোগ খুঁজতে চাই, সেখানে আমার ভাবনার বিকাশ ঘটাতে চাই। চীনের বাজার দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে অনেক বড়। বর্তমান চীনের পোশাক শিল্পের যা অবস্থা, তা কয়েক বছর আগেকার দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থার মতো। সুতরাং আমি মনে করি, চীনের পোশাক শিল্পের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আমি হোংতোং কোম্পানীকে সাহায্য করতে পারি। যদিও এই কাজ অত্যন্ত ক্লান্তিকর, তবুও আমি এই কাজে অনেক মজা পাই।"

ইয়োমহাক সেওন বলেন, বিশ্বায়ণের দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে চীনের পোশাক বাজার আর আন্তর্জাতিক বাজারের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বিশ্বে চীনের ব্র্যান্ড আর শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য স্পষ্ট। তিনি জানান, হোংতোং কোম্পানীসহ চীনের অনেক পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন এককভাবে ও.ই.এম. রপ্তানি পরিত্যাগ করে নিজেই একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইয়োম হাক সেওন বলেন, "ব্র্যান্ডিং হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যদি তোমরা একটি দোকানে গিয়ে কাপড় কিনতে যাও, শুরুতে তোমাদের মাথায় অবশ্যই কোন না কোন ব্র্যান্ডের নাম ভেসে উঠবে। গত কয়েক দশক ধরে হোংতোং কোম্পানী শুধু পুরুষের পোশাক তৈরি করে আসছে এবং ২০০৮ সাল থেকে এ কোম্পানির ব্র্যান্ডিং গড়ে উঠে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর লস এ্যাঞ্জেলেসে এর দুটি শাখা কোম্পানিও আছে। এ কোম্পানির পণ্য এখন বিশটির বেশি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়।"

ইয়োম হাক সেওন ছাড়া হোংতোং কোম্পানী ইতালি ও ফ্রান্স থেকেও বহু ডিজাইনার, নকশাকার, টি-শার্ট বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বর্তমানে এ কোম্পানিটির কাঠামোগত সমন্বয় বিশ্বমানে উন্নীত হয়েছে। চীফ ডিজাইনার হিসেবে তিনি হোংতোং কোম্পানির সাথে ফ্রান্সের প্যারিসের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসমোদের  সঙ্গে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

হোতোং গ্রুপের তৈরি পোশাক

হোংতোং কোম্পানীর বোর্ডের স্থায়ী সদস্য মাদাম ওয়াং চু ছিয়েন মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি ব্র্যান্ড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক বিকাশে মন্দাভাব ছিল, পোশাক শিল্পের ওপরেও এই মন্দার বড় প্রভাব পড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্র্যান্ড পোশাক কোম্পানীগুলোর ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়ে নি। পক্ষান্তরে যে সব কোম্পানীর কোনো ব্র্যান্ড নেই, বলতে গেলে সেগুলোর সবই বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ বন্ধ হওয়া অধিকাংশ পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রপ্তানির ওপর নির্ভর করতো। অন্যদিকে ব্র্যান্ড শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধি অর্জনে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। যেমন গত বছর আমাদের কোম্পানি দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাহলে ব্র্যান্ড নেই, এর মানে কি? আসলে সেটা হচ্ছে অন্যের জন্য পোশাক উত্পাদন করা। যদি ফরমাশ না পায়, তাহলে তো আর বাঁচতে পারে না। কেন ব্র্যান্ড শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর অর্থনৈতিক মন্দার কুপ্রভাব পড়েনি? কারণ এদের নিজস্ব এবং স্বয়ং-সম্পূর্ণ বিক্রয় দল আছে, নিজের বাজার আছে, নিজস্ব ব্র্যান্ড আছে। সুতরাং ব্র্যান্ড থাকা না থাকা মধ্যে বড় তফাত্ আছে।"

চীনের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়া হোংতোং কোম্পানী আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজের ব্র্যান্ডের সুনাম অর্জনের পরিকল্পনা করেছে। ২০০৬ সালে চীন সরকারের সমর্থনে হোংতোং কোম্পানী চিয়াংসু প্রদেশের অন্য চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে ক্যাম্বোডিয়ায় সিহানুক বন্দরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। বস্ত্র ও পোশাক, যন্ত্রপাতি, হালকা শিল্প ও গৃহস্থালী বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সহ নানা চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এ প্রসঙ্গে হোংতোং কোম্পানীর ভাইস চেয়ারম্যান চেন চিয়ান কাং জানান, "বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের 'বাইরে যাওয়ার' ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। এর পাশাপাশি চীনের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোরও বাইরে যাওয়ার জন্য একটি প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিদেশে সংস্কৃতি, আইন ও ভাষার বাধা অতিক্রম করেছে।"

চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম হিসেবে হোংতোং কোম্পানী সক্রিয়ভাবে নিজের ব্র্যান্ড ও প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলার সামর্থ্য আর আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণের দক্ষতা জোরদার করে আসছে। (ইয়ু / লিপন)

মন্তব্য
লিঙ্ক