Web bengali.cri.cn   
চীনা যুবক ওয়াং ফেংয়ের ই-কমার্স জীবন
  2013-10-21 18:57:28  cri


ওয়াং ফেং

চীনের ই-কমার্স খাতের যাত্রা শুরু হয় দশ বছর আগে। এখন এ খাত সমৃদ্ধ হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় অনেক লোকের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। চিয়াংসু প্রদেশের শাচি থানার ওয়াং ফেং হচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ওয়াং ফেং সুচৌ ও সিয়ামেনে চাকরি করেন। কিন্তু স্থানীয় পরিবেশের সাথে তিনি ভালোভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না। সে সময় তার জন্মস্থানে অনলাইন আসবাবপত্র ব্যবসা খুব ভালো ছিল। তাই তিনি সেখানে ফিরে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, "আমাদের এখানকার অনলাইন ব্যবসার গড় মাসিক আয় ৫ হাজার ইউয়ানের ওপর। বাইরে গিয়ে চাকরি করার চেয়ে অনেক ভালো। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মাসিক বেতন এর চেয়ে কম।"

বহু বছর আগে শাচি থানার অধিকাংশ অধিবাসী আলু দিয়ে তৈরি খাদ্য – শীট জেলি বিক্রি করতো অথবা বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করতো। কিন্তু এখন তারা অনলাইন আসবাবপত্র-সংযোজন ব্যবসা শুরু করেছে। 'চীনের পল্লী ই-কমার্সের প্রথম থানা' হিসেবে শাচির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। ওয়াং ফেং যেখানে বাস করেন সেই তোংফেং গ্রাম হচ্ছে শাচি থানার অনলাইন আসবাবপত্রের উত্স ও কেন্দ্র। এখানে ১ হাজার ১শ' ৮০টি পরিবার মোট ২ হাজার অনলাইন দোকান খুলেছে। ৭০ শতাংশ গ্রামবাসী এ খাতে কাজ করে।

ওয়াং ফেং ২০১০ সালে জন্মস্থানে ফিরে এসে ই-কমার্স দলে যোগ দেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে আসবাবপত্রের অনলাইন শপ খোলার মূল বিষয় জেনে নেন। অনলাইন শপের বিক্রয়ের পরিমাণ প্রতি বছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ওয়াং ফেং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাচি থানার আসবাবপত্রের সরবরাহ বাজার ভোক্তাদের চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে।

ওয়াং ফেং বলেন, "প্রথমে কেবল কাঠের তৈরি বইয়ের আলমারি বিক্রি করতাম। পরে দক্ষিণ কোরিয়া স্টাইলের আসবাবপত্র বিক্রি শুরু করি। দক্ষিণ কোরিয়া স্টাইলের আসবাবপত্র নানা ধরনের আছে। এর উত্পাদন ও মাল পরিবহণের গতি অপেক্ষাকৃত দ্রুত। ২০১১ সালের দ্বিতীয়ার্থ থেকে কাঠের তৈরি আসবাবপত্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময় আমরা কাঠের আসবাবপত্র বেশি করে বিক্রি করতাম।"

ওয়াং ফেংয়ের অনলাইন শপের আকার ধাপে ধাপে সম্প্রসারণের পর তিনি অর্থের অভাবের সম্মুখীন হন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ক্ষুদ্র ঋণের জন্য আবেদন করেন। যথেষ্ঠ অর্থ পাওয়ার পর তাঁর ব্যবসাও আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। গত দু'-তিন বছর তিনি প্রতি বছর এক থেকে দেড় লাখ ইউয়ানের ঋণ আবেদন করেন। ওয়াং ফেং বলেন, (রেকর্ডিং-৩)

"আমাদের এখানকার ক্ষুদ্র ঋণের জন্য কৃষি বাণিজ্য ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। এর মেয়াদ এক বছর। ভালোভাবে ঋণ পরিশোধ করা হলে এক বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার আবেদন করা যায়। তাদের জন্য সুবিধা আছে।"

ভালো ব্যবসা করার ফলে ওয়াং ফেং শাচি থানার অনলাইন ব্যবসা সমিতির উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে ওয়াং ফেংয়ের দৃষ্টি নিজের অনলাইন শপ থেকে শাচি থানার গোটা শিল্পের উন্নয়নের ওপর বিস্তৃত হয়েছে। ওয়াং ফেং আবিষ্কার করেছেন যে, শাচি থানার আসবাবপত্র খাতের টেকসই সমৃদ্ধ অর্জনের পিছনে মুনাফা হ্রাসের সমস্যা লুকিয়ে রয়েছে। অনেকের বিক্রির পরিমাণ ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে মুনাফা মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াং ফেং জানেন, অনলাইন ব্যবসার মুনাফা হ্রাস হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নেতিবাচক প্রতিযোগিতা। পরস্পরের প্রতিযোগিতার মধ্যে দাম দিন দিন হ্রাস পেয়েছে; মুনাফার অবকাশও সীমিত হয়ে এসেছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সাল থেকে শাচি থানায় ই-কমার্স শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওয়াং ফে বলেন, "ই-কমার্স শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার ফলে ভবিষ্যতে আমাদের অধিকাংশ উত্পাদন কারখানা ও কার্যালয় একসাথে থাকবে। তখন প্রতিটি কর্মশালা কেবল এক বা দু'টি পণ্য উত্পাদন করবে। এভাবে উত্পাদনের ব্যয় কমানো যায়। তারপর সমিতির গুদাম থেকে সেগুলো একসাথে বিক্রি করা হবে। এর পাশাপাশি একটি বিক্রি বন্টনের প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে। সব ফরমাশ এ প্লাটফর্মে আসবে এবং বিভিন্ন কারখানায় বন্টন করা হবে। আমরা আশা করি, কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা-পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে এক বড় ব্র্যান্ড গড়ে তোলা যাবো।"

এখন ওয়াং ফেং প্রতিটি দিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটান। তিনি নিজের জন্মস্থানে ফিরে এসে সম্পূর্ণ নতুন এক জীবন ও সুযোগ ভোগ করছেন। (ইয়ু / এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক