Web bengali.cri.cn   
বিনিয়োগ কমছে বাংলাদেশে
  2013-01-14 15:20:44  cri
সদ্যসমাপ্ত বছরে বিনিয়োগ কমেছে বাংলাদেশে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার-ব্যবসায়ী দূরত্ব, ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি ইত্যাদি কারণে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়িরা। জ্বালানি সংকট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, তারল্য সংকট প্রভৃতি বাধা সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের প্রথম তিন বছর অর্থাত্ ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ বাড়লে গত বছর সে ধারা ধরে রাখা সম্ভব হয় নি। ফলে বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও বিনিয়োগ কমে গেছে।

বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যাঅনুসারে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছর এক হাজার ৫২৪টি প্রকল্পে নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৮ হাজার ২১৭ কোটি মিলিয়ন টাকা। সরকারের মেয়াদকালের দ্বিতীয় বছরে বিনিয়োগ নিবন্ধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ওই সময় এক হাজার ৭৮৫টি প্রকল্পে বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৩ কোটি মিলিয়ন টাকা। ২০১১ সালেও এ প্রবৃদ্ধি ধারা বজায় থাকে। ওই সময় মোট এক হাজার ৯৭৪টি নিবন্ধিত প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩১ হাজার ৭৫ কোটি মিলিয়ন টাকার।

তবে সরকারের চতুর্থ বছরে এসে বিনিয়োগ কমেছে। সাময়িক হিসেবে, ২০১২ সালে এক হাজার ৬০১টি প্রকল্প নিবন্ধিত হয়, যেগুলোতে বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল চার লাখ ৯৮ হাজার ১৮৭ মিলিয়ন টাকার।

শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা অনেক দিন থেকে সুবিধামতো জায়গার অভাব বোধ করছেন। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ নিয়ে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় নি। এছাড়া বিনিয়োগের পথে বড় বাধা হয়ে আছে উচ্চ সুদের হার, তারল্য সংকট এবং অপর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো। বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব বা পিপিপির আওতায় বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বাস্তবায়িত হয়নি কোনো প্রকল্প। অন্যদিকে পিপিপিতে কাজ করতে বেসরকারি খাত থেকেও দেওয়া হয়নি বড় কোনো প্রস্তাব। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেও গত বছর বিনিয়োগ কমার জন্য দায়ী করেন অনেকে।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি)-এর এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৪ থেকে ১২৯-এ নেমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগে বিরাজমান বাধাগুলো গত চার বছরেও দূর হয় নি। তাদের আশঙ্কা, বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের বাকি সময়ে এসব সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা নেই। বিশেষজ্ঞদেরও একই মত। তারা বলছেন, নানামুখী সমস্যার কারণে সরকারের শেষ বছরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমতে পারে।

বর্তমান সরকারের প্রথম বছর বিনিয়োগে নেতিবাচক ধারা ছিল, যার জন্য সরকার মূলত সে সময়ের বিশ্বমন্দাকে দায়ী করে। কিন্তু পরে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে, যদিও বিনিয়োগ-সহায়ক অনেকগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুখ দেখে নি। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিল্পপার্ক বা অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, মুন্সিগঞ্জের ওষুধ শিল্পপার্ক, মিরসরাইয়ে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পপার্ক, কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক শিল্পপার্ক, তৈরি পোশাক শিল্পের পার্কসহ ১৬টি শিল্পপার্ক বা অর্থনৈতিক অঞ্চল। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া অনেক দফা বৈঠক ও শিল্পপার্কগুলোর জন্য নির্ধারিত এলাকা পরিদর্শন করলেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয় নি এসব পরিকল্পনায়।

বিনিয়োগের ধারা বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদ ড. মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশের কালের কণ্ঠ সংবাদপত্রকে জানান, সরকার উদ্যোক্তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয় নি; তাদেরকে দেওয়া যায় নি নীতি-সহায়তাও। এসব কারণে বিনিয়োগ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি।

আজিজুল ইসলামের সাথে সহমত পোষণ করে অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান বলেন, সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতো না। এমন পরিকল্পনা সরকারের শেষ বছরে নেওয়া সম্ভব হবে কিনা সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন তিন।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এ বিষয়ে বলেন, বেসরকারি খাতকে উত্সাহিত করতে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারের নীতি-সহায়তা থাকে, কিন্তু বাংলাদেশে সরকার নিজে ব্যবসা করে। ফলে সরকার ও ব্যবসায়ীরা একে-অপরের প্রতিযোগী হয়ে পড়ে। আর এ কারণে ব্যক্তি খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা দেওয়া হয় না। এতে বাধাগ্রস্ত হয় বিনিয়োগ। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মতো উচ্চ সুদের হার পৃথিবীর কোনো শিল্পোন্নত দেশে নেই।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উত্পাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, জ্বালানি সংকটে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর কারণেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের জন্য একটা শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ফাইন্যান্স এশিয়া পত্রিকার গবেষণা বিভাগের ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক ব্যবস্থাপক ডেভিড ব্র্যাড ফোর্ড বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেমন বিনিয়োগবান্ধব নীতি-সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন, তেমনি বেসরকারি খাতের সহযোগিতামূলক মনোভাবও দরকার। তার মতে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিনিয়োগ-সহায়ক নয়; এখানে বাংলাদেশে সরকার এবং বেসরকারি খাত বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। এতে বিনিয়োগের স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হচ্ছে।

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সরকারের একার উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়, ব্যক্তি খাতের ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে এ জন্য। (সূত্র: কালের কণ্ঠ) (এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক