Web bengali.cri.cn   
ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আবার কমেছে
  2012-10-19 19:24:14  cri
গত ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রতিবেশী ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে গেছে। আর হ্রাসের মধ্য দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আবার ৫০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। এর আগের অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রপ্তানির পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যদিও তার আগের ২০১০-১১ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৫১ কোটি ২৫ লাখ ডলারে।

এর ফলে দুই বছর পর আবার ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে গেল। এর আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি করে ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় হওয়ার পরের অর্থবছরে (২০০৮-০৯) রপ্তানি আয় নেমে আসে ২৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারে। অবশ্য ওই অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানিও কমে যায়। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি আয় বেড়ে আবার ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার হয়।

গত অর্থবছরে মূলত পাটের রপ্তানিমূল্য ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার প্রভাবে ভারতে মোট রপ্তানি কমে গেছে বলে জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক প্রতিবন্ধকতাকেও এজন্য দায়ী করছেন তারা।

অবশ্য ভারত সরকার গত বছরের নভেম্বর থেকে মাদক ও তামাকজাতীয় পণ্য বাদে সব পণ্যে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। তবে এই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাংলাদেশ অবশ্য পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বাজার সুবিধা প্রদানের ইতিবাচক প্রভাব এখনো দেখা যায় নি। তবে আরও কিছুদিন পরে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে তাদের ধারণা।

এদিকে গত অর্থবছরে রপ্তানি কমার পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এর ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ঘাটতিও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছর ভারত থেকে বাংলাদেশ ৪৭৩ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্যসামগ্রী আমদানি করেছে। এর ফলে গত অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৪০৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের ৪ অক্টোবর ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রধানত কাঁচামাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশের চিন্তার জায়গাটি হলো ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো। ইতিমধ্যে ভারত সাফটার আওতায় অনেক বড় সুবিধা দিয়েছে। তামাক ও মাদক বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পণ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ এখন ভারতে শুল্কমুক্ত। বিষয়টি এখন এ রকম যে ভারতের যে কোনো রাজ্যের মতো বাংলাদেশও বাণিজ্য করতে পারে। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখনো নানা আধা শুল্ক ও অশুল্ক বাধা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলাদেশি পণ্যের মান পরীক্ষায় সমস্যা। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশি মাটি ভারতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য ব্যবহূত হয়। কিন্তু ভারতকে বিশ্বাস করতে হবে তাদের জন্য ক্ষতিকর কিছুতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।

চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এসব তথ্য উল্লেখ করে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন রেখেছিল যে, ভারত কবে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। উত্তরে জি এম কাদের বলেছেন, চীন থেকে অনেক সস্তা পণ্য আসছে, যার মধ্যে আছে খেলনা ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, যার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনের দিক থেকে বিবেচনা করলে, পণ্য আমদানিতে ভারতের মতো চীন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা, ভারত থেকে তুলার মতো কাঁচামাল ও খাদ্যসামগ্রী বেশি আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার বিশ্বাস বাণিজ্যে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড আরও জানতে চেয়েছিল, তিস্তা চুক্তি না হওয়ার প্রভাবে ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশের দিক থেকে আটকে গেলেও এখন এ নিয়ে অবস্থাটা কী। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা ভারতকে ট্রানজিট দিকে সম্মত। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের জন্যও আমরা ট্রানজিট চাই। দুই দেশের জন্য এটা যেন লাভজনক হয়, সেটাই আমরা চাই। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামোটাই চিন্তার বিষয়। সড়ক ও রেলের অবনতি ঘটেছে। যদি ভারতীয় ট্রাককে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তা আমাদের সড়ক অবকাঠামোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে।"

এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশ চায় ভারত আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যয়ে অংশীদার হোক। বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে।

নানা ধরনের অশুল্ক বাধা সত্ত্বেও গত এক দশকে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে রপ্তানি। অশুল্ক বাধা অপসারণ করা গেলে বা কমানো গেলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা। (এসআর)

মন্তব্য
মন্তব্য
লিঙ্ক