Web bengali.cri.cn   
মালিয়েশিয়ার সাবাহ্ দ্বীপে 'চলুন বেড়িয়ে আসি'
  2014-02-14 08:46:54  cri

 


নতুন বছরে আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সুন্দর সুন্দর পর্যটনস্থানের পরিচয়ও বেশি বেশি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। এ ব্যাপারে অনেক শ্রোতাবন্ধু আমাদের চিঠি লিখেছেন। তারা চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশের পর্যটনতথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রিয় শ্রোতা, আমরা অত্যন্ত খুশি যে আপনারা আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ বজায় রেখেছেন এবং আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনেক ভালো মতামত দিয়েছেন। গত বছরের মতো চলতি বছরেও 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠানটিকে আগের মতোই আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখবো। আশা করি আপনারা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।

আলিম. সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালিয়েশিয়ায় বেড়াতে যাবো। শীতকালে উষ্ণ সৈকতসমৃদ্ধ দেশে বেড়াতে যেতে আগ্রহী হন অনেকে। তাদের জন্য মালয়েশিয়া একটি উত্তম বেড়ানোর জায়গা। চলুন বেড়িয়ে আসি মালয়েশিয়া থেকে।

সাবাহ্ মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এর আয়তন ৭৪,৫০০ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটির সৈকত লাইনের দৈর্ঘ্য ১৪৪০ কিলোমিটার। এ দ্বীপের আবহাওয়া খুব ভালো। এখানে ঘূর্ণিঝড় বা টাইফুনের বালাই নেই। সাবাহ্ দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। এখানে আছে সাদা রঙয়ের সৈকত ও পরিস্কার সমুদ্র। সমুদ্রে বহুবর্ণ প্রবাল ও মাছ আছে। দেখে আপনার চোখ জুড়াবে।

সুবর্ণা. সাবাহ্ দ্বীপে যারা বেড়াতে আসেন, তাদের অনেকেই ডাইভিং করতে চান। সমুদ্রে ডাইভিং একটি চমত্কার অভিজ্ঞতা। আপনিও এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। তবে ডাইভিংয়ে নামার আগে আপনাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণের পর অক্সিজেন সিলিন্ডার কাধে ঝুলিয়ে ও সমুদ্রের পানির নিচে ঘুরে বেড়ানোর উপযোগী পোশাক ও যন্ত্রপাতি পড়ে নেমে পড়তে হবে সমুদ্রে। সমুদ্রের অগভীর জলে বহুবর্ণ মাছ আর প্রবাল খুব কাছ থেকে দেখার এই অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। মালিয়েশিয়ার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি বিশ্বমানের ডাইভিং এলাকা রয়েছে।

মালিয়েশিয়ার পূর্বাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের নিচে ৪০ মিটার দূরের দৃশ্যও দেখা যায়। সময়টা এখানে ডাইভিংয়ের খুবই উপযোগী।

আলিম. ডাইভিংয়ে নামার আগে প্রশিক্ষণের কথা বলেছে সুবর্ণা। সাধারণত দু'ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স আছে। সাধারণভাবে যারা মাঝেমধ্যে সমুদ্রের নিচে ডাইভিং করতে চান, তারা নিতে পারেন ৪ দিন থেকে এক সপ্তাহের একটি শর্ট কোর্স। এই কোর্সটি করেই আপনি নেমে যেতে পারেন সমুদ্রে। আর যদি ডাইভিংয়ে আপনি আরেকটু উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে চান, তবে সে ব্যবস্থাও আছে। উচ্চতর প্রশিক্ষণে ডাইভিংয়ের নানান জটিল বিষয় আপনাকে শেখানো হবে।

আলিম. মালিয়েশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে টিগা দ্বীপ (tiga island), মানটানানি দ্বীপ (mantanani island); উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাংকাইয়ান দ্বীপ (langkayan island); এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মাতাকিং দ্বীপ (mataking island), পোম পোম দ্বীপ (pom pom island), মাবুল দ্বীপ (mabul island), কাপালাই দ্বীপ (kapalai island), তুন সাকারান মারিন পার্কসহ (tun sakaran marine park) বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকটি চমত্কার ডাইভিং এলাকা রয়েছে।

সুবর্ণা. কুয়ালা পেনইউ থেকে জাহাজে টিগা দ্বীপে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত টিগা পার্কের মধ্যে টিগা দ্বীপটিই সবচে বড়। এর অদূরে কালামপুনিয়ান বেসার দ্বীপ (kalampunian besar island) 'সাঁপ দ্বীপ' নামে পরিচিত। কারণ, এ দ্বীপে নানা ধরনের সাঁপের বাস। দ্বীপটিতে সাঁপ ছাড়া বানর ও নানা ধরনের পাখিও দেখা যায়। তা ছাড়া, দ্বীপটিতে বিভিন্ন বর্ণের ফুল ফোটে। সার্বিকভাবে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ।

আলিম. কোটা কিনাবালু (Kota kinabalu) শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত মানটানানি দ্বীপ ডাইভিংয়ের জন্য একটি দারুণ সুন্দর জায়গা। শহর থেকে দ্বীপটিতে জাহাজে পৌঁছাতে সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো। দ্বীপে একটি ডাইভিং রিসোর্ট আছে। দ্বীপের কাছকাছি অঞ্চলের সমুদ্রগর্ভে ডুবে-যাওয়া তিনটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আছে। ডাইভিং করার সময় সাধারণত পর্যটকরা সমুদ্রের নিচে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করেন। মাঝে মাঝে এ অঞ্চলে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি ওজনের সামুদ্রিক প্রাণি 'ম্যানাটি' (manatee) দেখা যায়। কখনো কখনো এ অঞ্চলে এ প্রাণিগুলোকে কয়েক মাস ধরে দেখা যায়। এই সামুদ্রিক প্রাণির আরেক নাম 'সুন্দরী মাছ'। তাই, অনেকে দ্বীপটিকে 'সুন্দরী মাছের দ্বীপ' বলে ডাকেন।

সুবর্ণা. আসলে আমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে বেড়াতে যাওয়ার সময় একাধিকবার মালিয়েশিয়া সফর করেছি। কারণ, এয়ারএশিয়ার বিমান মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যায়। তো, মালিয়েশিয়া আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সেখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশের মতো গরম এবং সেটিও মুসলিমপ্রধান দেশ। তবে এদেশে লোকসংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দেশটিতে চীনা প্রবাসীর সংখ্যা প্রচুর। কুয়ালালামপুরের রাস্তায় বের হলে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের লোক আপনার চোখে পড়বে। রেস্তোরাঁর পরিসেবক ও টেক্সির ড্রাইভার হিসেবে তারা কাজ করেন। রাজধানী কুয়ালালামপুর একটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর। কুয়ালালামপুরের 'পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার' একটি দারুণ সুন্দর স্থাপত্য। শহরের যে-কোনো স্থান থেকে এই টাওয়ার দেখা যায়। টাওয়ার দুটির উচ্চতা ১৪৮৩ ফুট উচ্চতার টাওয়ার দুটি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচে উঁচু ভবন হিসেবে স্বীকৃত ছিল। আজো ৮৮ তলার ভবন দুটি বিশ্বের সর্বোচ্চ 'টুইন টাওয়ার' হিসেবে স্বীকৃত। টুইন টাওয়ারটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার। আপনি টাওয়ারের শীর্ষে আরোহণ করে কুয়ালালামপুর শহরটাকে একনজরে দেখে নিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট মূল্যের টিকিট কাটতে হবে।

আলিম. আমি শুনেছি, মালিয়েশিয়ার অন্যান্য শহরের সাথে, বিশেষ করে কয়েকটি দ্বীপ শহরের সাথে রাজধানীর অনেক পার্থক্য আছে। আমি কি ঠিক শুনেছি?

সুবর্ণা. হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। রাজধানী ছাড়া আমি পেনাং (penang) গিয়েছিলাম। সেখানকার দৃশ্য অন্যরকম। সেখানে দক্ষিণ চীন ও পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থাপত্য চোখে পড়ে। চীনের মহাবিপ্লবী সুন ইয়াত সান যুবক বয়সে এ শহরে বসবাস করেছিলেন। সেখানে সুন ইয়াত সানের স্মরণে একটি জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। তা ছাড়া, দক্ষিণ চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের অনেক লোক প্রাচীনকালে এ শহরে বসবাস করতেন। তাই এখানে নানা ধরনের 'পরিবার মন্দির' দেখা যায়। ফুচিয়ান প্রদেশের লোকজনের পরবর্তী বংশধররা এসব মন্দির স্থাপন করেছেন। এসব মন্দিরে গেলে তাদের পারিবারিক ইতিহাস জানা যায়। পর্যটকরা এসব মন্দির পরিদর্শন করতে পারেন। এ শহরটিকে দেখলে সিংগাপুরের কথা মনে পড়ে। সিংগাপুরেও প্রবাসী চীনাদের সংখ্যা অনেক বেশি।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040