|
0205lvyou
|
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। এর কাছে কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ আছে। মিয়ানমার সেগুলোর অন্যতম। দেশটিকে অনেকে 'হাজার বুদ্ধের দেশ' বলে ডাকে। কারণ, মিয়ানমারের মানুষ মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং দেশটিতে বুদ্ধের হাজার হাজার মূর্তি আছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়াঞ্চলে চাকমাসহ অনেক সংখ্যালঘু জাতির লোক বসবাস করে থাকেন। তাদের চেহারার সাথে মিয়ানমারের লোকদের চেহারার অনেক মিল আছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে মিয়ানমারে বেড়াতে যাবো।
আলিম. মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। এর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ভারত ও বাংলাদেশসংলগ্ন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল চীনসংলগ্ন, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থাইল্যান্ড ও লাওসসংলগ্ন। ২০০৫ সালে মিয়ারমারের রাজধানী ইয়াংগুন থেকে নেইপিদোয় স্থানান্তরিত হয়। মিয়ানমার একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি লোক কৃষিকাজ করে।
সুবর্ণা. মিয়ানমারের আকার একটি হীরকখণ্ডের মতো। এর আয়তন প্রায় ৬.৮ লাখ বর্গকিলোমিটার। দেশটির উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে পাহাড় আর পাহাড়। পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়াঞ্চল এবং পূর্ব মালভূমির মধ্যে ইরাওয়াদ্দি সমতলভূমি (নাকি নদী?)। ইরাওয়াদ্দি (irrawaddy) নদীর দৈর্ঘ্য ২১৫০ কিলোমিটার। এ নদী দেশের দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত। মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশটির গড় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দেশটির মানদালেই'র (Mandalay) গড় তাপমাত্রা সবচে বেশি, প্রায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দেশটিতে জানুয়ারি মাসে সবচে ঠাণ্ডা এবং মে মাসে সবচে গরম পড়ে।
আলিম. ইয়াংগুনের প্রাকৃতিক দৃশ্য দারুণ সুন্দর। এখানকার বিশ্ববিখ্যাত 'বড় সোনার প্যাগোডা' প্রায় ২৫০০ বছর আগে নির্মিত। এর উচ্চতা প্রায় ১০০ মিটার। প্যাগোডার শীর্ষে আছে ৪৩০০টিরও বেশি মণি। এ প্যাগোডা ২০৫১৬টি সোনার স্লাইস দিয়ে সাজানো হয়েছে। দিনে বা রাতে প্যাগোডাটি উজ্জ্বল মনে হয়। মানদালেই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। লোকসংখ্যা ৮ লাখেরও বেশি। মিয়ানমারের ইতিহাসে অনেক পুরনো রাজবংশের অস্তিত্ব লক্ষ্যণীয়। কিন্তু শুধু মানদালেই'র রাজপ্রাসাদ ভালভাবে সংরক্ষিত আছে। এ রাজপ্রাসাদ পুননির্মাণ করা হয়েছে। দেখতে দারুণ সুন্দর। মানদালেই মিয়ানমারের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও ধর্মের কেন্দ্র। শহরে ছোট বড় ১০০০টিরও বেশি বৌদ্ধ ধর্মের প্যাগোডা আছে। অনেক সন্ন্যাসী, পণ্ডিত ও শিল্পী এ শহরে বসবাস করেন।
সুবর্ণা. বর্তমানে মানদালেই পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর প্রধান দর্শনীয় স্থান হল মানদালেই পাহাড়, মানদালেই রাজপ্রাসাদ, সোনার মন্দির, প্রেমিক সেতু ইত্যাদি। এ শহরে বেড়াতে আসলে বৌদ্ধ ধর্মের পুরাকীর্তি, প্রাচীনকালের সংস্কৃতি ও মধ্যাঞ্চলের গ্রামাঞ্চলের দৃশ্য আপনাকে আকৃষ্ট করবে। মিয়ানমারের লোকেরা সন্ন্যাসীদের সম্মান করে। Theravada buddism খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছিল। একাদশ শতাব্দীতে তা মিয়ানমারের জাতীয় ধর্মে পরিণত হয়। বৌদ্ধ ধর্মের দীর্ঘকালীন প্রভাবে মিয়ানমারের লোকজন আন্তরিক ও সরল। মিয়ানমারে একটি কথা অতি প্রচলিত; তা হল: আন্তরিকভাবে অন্যকে ক্ষুদ্র সাহায্য দিলেও, তার বিনিময় বেশি হবে; আন্তরিকতাশূন্য বড় সাহায্য দিলেও, তার বিনিময় হবে ক্ষুদ্র। মিয়ানমারবাসী মনে করে, গ্রীষ্মকালে পথিকদের ঠাণ্ডা ও পরিস্কার পানি পান করানো একটি খুবই ভালো কাজ। তাই গরমের সময় মিয়ানমারের বাসস্টেশন, পার্ক বা বৌদ্ধ প্যাগোডাসহ বিভিন্ন স্থানে পরিস্কার পানিসহ গ্লাস দেখা যায়। পথিক সে পানি বিনা পয়সায় পান করতে পারে। মিয়ানমারের অনেক প্যাগোডা ও মন্দির লোকদের দানে নির্মিত। দেশের ৩.২ লাখ সন্নাস্যীর থাকা-খাওয়া ও তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয় দানের অর্থ দিয়ে। মিয়ানমারের লোকদের অনেকেই সারাজীবনের উপার্জিত অর্থ প্যাগোডা নির্মাণে ব্যয় করে।
আলিম. মিয়ানমারের রাস্তায় বেরুলেই আপনার চোখে কোনো-না-কোনো সন্ন্যাসী চোখে পড়বেই। সাধারণত প্রতিটি পরিবারের ছেলেদের নির্ধারিত বয়সে মন্দিরে গিয়ে একবার সন্ন্যাসীর মতো জীবন কাটতে হয়। আগে কমপক্ষে এক বছর সময় ব্যয় করতে হতো সন্নাসী হিসেবে। বর্তমানে এ সময় ৭ দিনে কমিয়ে আনা হয়েছে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ শুনছিলেন মিয়ানমার সম্পর্কে কিছু তথ্য। মিয়ানমার ভাষার একটি গান শুনবো আমরা। গানের নাম 'সুন্দর চাঁদের আলো'।
সুবর্ণা. প্রাচীনকালে মিয়ানমারের লোকেরা বন্ধুদের বাসায় প্রবেশ করার সময় জুতা খুলে নিত। আর এখন বৌদ্ধ প্যাগোডা ও মন্দিরে প্রবেশ করার সময় অবশ্যই জুতা খুলে প্রবেশ করে তারা। আপনি যদি জুতা না-খুলে মন্দিরে বা প্যাগোডায় প্রবেশ করেন, তবে মিয়ানমারবাসী ক্ষুব্ধ হবেন; কারণ, তারা মনে করে, জুতা না-খোলার মানে বুদ্ধকে অসম্মান করা। মিয়ানমারের আকাঁবাকাঁ পাহাড়ি পথ ধরে খালি পায়ে লোকদের মন্দিরে যেতে দেখা যায়। দীর্ঘপথ খালি পায়ে হেঁটে তারা মন্দিরে বা প্যাগোডায় যায়, বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। তা ছাড়া, মিয়ানমারের লোকজন গরুকে পবিত্র পশু হিসেবে গণ্য করে। সেদেশে গরুকে চাবুক দিয়ে মারা বা হত্যা করা নিষেধ। মিয়ানমারে গরুর সম্মানে অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়।
আলিম. মিয়ানমারের লোকদের বাসায় সাধারণত বুদ্ধমূর্তি থাকে। ধনী পরিবারে সোনা, রুপা বা জেড পাথর দিয়ে তৈরী বুদ্ধমূর্তি রাখা হয়। সাধারণ পরিবারে দেখা যায় কাঠের বুদ্ধমূর্তি। বুদ্ধমূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা মিয়ানমারের লোকদের জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিদিন সকালে বাজারে গিয়ে নানা ধরনের সুন্দর ফুল কিনে বুদ্ধমূর্তির সামনে রেখে তার শ্রদ্ধা নিবেদন করে। রাতে ঘুমানোর আগে আরেকবার শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। বিভিন্ন উত্সবের ছুটিতে তারা মন্দিরে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের শাস্ত্র শোনার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধমূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মিয়ানমারের লোকদের জীবনের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
সুবর্ণা. ইয়াংগুন মিয়ানমারের সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ শহরের লোকসংখ্যা ৫০ লাখেও বেশি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি ছিল নদীর পাশে অবস্থিত একটি জেলেপাড়া। তবে বর্তমানে তা দেশের সবচে বড় বন্দরে পরিণত হয়েছে। বড় সোনার প্যাগোডার পূর্ব দিকে রাজপরিবারের হ্রদ এলাকা, হ্রদের পূর্ব দিকে সুন্দর কালাওয়ে প্রাসাদ(callaway palace), হ্রদের উত্তর দিকে আংসান পার্ক দেখার মতো। হ্রদের পাশ ঘেষে কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে পথ। এ পথ ধরে হাঁটলে হ্রদের চার দিকের সুন্দর প্যাগোডা ও স্থাপত্যের দৃশ্য উপভোগ করা যায় এবং সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত্ও দেখা যায়।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |