|
সুবর্ণা. সুন্দর গানটি শোনার পর এখন ভারতের আরেকটি সুন্দর শহর জয়পুরের কিছু তথ্য তুলে ধরি। এ শহরের আরেকটি নাম pink city. সারা শহরে বিভিন্ন ভবনের ছাদ ও দেয়াল গোলাপী। এখানে অধিকাংশ নারীর শাড়ির রঙও গোলাপী। লোকেরা এ শহর ডাকে গোলাপী শহর বলে। জয়পুর যেন গোলাপের মতো রহস্যময় ও রোম্যান্টিক। জয়পুর নয়াদিল্লীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি রাজাস্থান অঙ্গরাজ্যের রাজধানী। প্রাচীনকালে ভারতের অনেক রাজা রাজধানী হিসেবে এ স্থানটিকেই পছন্দ করেছিলেন। জয়পুরের তিনদিকে পাহাড়। পাহাড়ের মধ্যে আছে নিবিড় বন, আর সে বনে বাস করে অনেক বানর ও ময়ুর। জয়পুর শহরে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণ লক্ষণীয়। এখানে মোটরগাড়ি আর গরুর গাড়ি একই রাস্তায় চলতে দেখা যায়।
আলিম. জয়পুর শহরে নানা ধরনের পুরনো কেল্লা দেখা যায়। এসব কেল্লার স্থাপত্যবৈশিষ্ট্য নানা রকমের। যদি আপনি ছবি তুলতে পছন্দ করেন, তাহলে বিভিন্ন কেল্লায় বেড়ানোর সময় ছবি তুলতে ভুলবেন না।
সম্প্রতি ভারত সরকার চীন ও রাশিয়াসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের পর্যটকদের জন্য ল্যান্ডিং ভিসার পরিসেবা দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তবে এটা বাস্তবায়নের জন্য ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন দরকার। যদি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে বিশ্বের অনেক দেশের পর্যটক আরো সহজে ভারতে বেড়াতে যেতে পারবেন, যা কিনা দেশটির অর্থনীতির জন্যও সহায়ক হবে।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে চীনের পর্যটকরা বিশেষ করে উপকৃত হবেন। কারণ, বর্তমানে চীনা নাগরিকরা ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করে কমপক্ষে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। তা ছাড়া, অনলাইনে ভিসা ফর্ম পূরণে জটিলতা আছে। ল্যান্ডিং ভিসার ব্যবস্থা থাকলে, পর্যটকরা স্রেফ হোটেলের বুকিং দিয়ে টিকিট কেটে চেপে বসতে পারেন বিমানে। বিষয়টা চীনা পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় বিষয় হবে।
আলিম. শুনেছি নীল রঙকে হিন্দু ধর্মে পবিত্র জ্ঞান করা হয়। উচ্চ শ্রেণির হিন্দুরা নিজেদের ঘর নীল রঙে রাঙিয়ে নেয়। নীল আকাশের রঙ; এটি দেবতাদের সবচে কাছের রঙ। কথিত আছে, প্রাচীনকালে ভারতে ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার লোকেরা নীল রঙয়ের রঞ্জক পদার্থ বাড়ির বাইরের দেওয়ালে ব্যবহার করতো। উদ্দেশ্য ছিল মশা ও রোগ প্রতিরোধ করা। নীল রঙ নিয়ে এতো কথা কেন বলছি? ভারতের যোধপুর এমন একটি শহর, যেখানে আছে নীলের সমারোহ। বিশ্বে মাত্র তিনটি নীল রঙয়ের শহর আছে; যোধপুর এর মধ্যে অন্যতম। এ শহরের নীল রঙয়ের বাসভবনগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হয় আকাশ যেন মাটিতে নেমে এসেছে। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা বহুবর্ণ রঙয়ের কাপড় পড়তে পছন্দ করেন। নীলের সাথে অন্য রঙের মিশ্রণে কাপড়কে অনেক সুন্দর লাগে।
সুবর্ণা. আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতা, সুন্দর গানটি শোনার পর ভারতের আরেকটি বিশ্ববিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের তথ্য তুলে ধরতে চাই। হ্যা, সেটি আর কিছু নয়, বিশ্বখ্যাত তাজমহল। ভারতের সবচে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত স্থাপত্যের অন্যতম হিসেবে তাজমহল বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে। কোনো কোনো পর্যটক স্রেফ আগ্রার তাজমহলকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যান ভারতে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম ওরফে মমতাজ মহলের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার মৃত্যুর পর নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল। এ চমত্কার স্থাপত্যটির আরেক নাম 'ভারতের মুক্তা'। ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল; আর শেষ হয় ১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে। এর নির্মাণশৈলীতে পারশ্য, তুরস্কা, ভারতীয় ও ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। সাদা রঙয়ের মার্বেল দিয়ে তৈরি এ স্থাপত্যকর্মটির অসাধারণ এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য রয়েছে। নির্মাণের পর থেকেই তাজমহল বহু পর্যটককে আকর্ষিত করেছে। এমনকি তাজমহলের দক্ষিণ পাশে ছোট শহর তাজ গঞ্জি বা মুমতাজাবাদ আসলে গড়ে তোলা হয়েছিল পর্যটকদের জন্য সরাইখানা ও বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে যাতে পর্যটক এবং কারিগরদের চাহিদা পূরণ হয়। বর্তমানে, তাজমহলে বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ পর্যটক আসে যার মধ্যে ২,০০,০০০ পর্যটক বিদেশি। তাজমহল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে ঠান্ডা মৌসুমে অক্টোবর, নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে। বায়ূ দূষণকারী যানবাহন তাজমহলের কাছে আসা নিষিদ্ধ। তাই, পর্যটকদের গাড়ি রাখার স্থান থেকে পায়ে হেঁটে অথবা বৈদুতিক বাসে করে তাজমহলে আসতে হয়। তাজমহলের ভেতরে জুতা পায়ে দিয়ে প্রবেশের নিয়ম নাই; খালি পায়ে ঢুকতে হয়।
আলিম. আচ্ছা, দেখতে দেখতে আমাদের অনুষ্ঠানের সময় ফুরিয়ে এল। তবে শেষ করার আগে একজন শ্রোতার চিঠি পড়ে শোনাতে চাই। লিখেছেন কুমিল্লা, বাংলাদেশ থেকে সালমা আক্তার সাথী। তিনি লিখেছেন: আলিম ভাইয়া ও সুবর্না আপু, চিঠির শুরুতে আমার স্কুলের নিস্পাপ শিশুদের মুখের হাসির শুভেচ্ছা নিবেন। আমি আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে 'ইন্টারন্যাশনাল সি আর আই নারী জাগরণ লিসেনার্স ক্লাব' গঠন করেছি। গত ৮-০১-২০১৪ তারিখ 'চলুন বেড়িয়ে আসি' আমার ও আমার শ্রোতা সংঘের সদস্যদের কাছে চমত্কার লেগেছে। সেদিন চলুন বেড়িয়ে আসি অনুষ্ঠানে বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থান মালদ্বীপের পরিচিতি শুনে অনেক খুশি হয়েছি। মালদ্বীপ সর্ম্পকে আমাদের অনেককিছুই অজানা ছিলো। অজানা সব আপনাদের মুখে শুনে ভীষণ খুশি হয়েছি। আমি এবং আমার শ্রোতাসংঘের সদস্যরা মালদ্বীপ সম্পর্কিত অনুষ্ঠানটি আবারো শুনতে চাই। আশা করি অনুষ্ঠানটি পুন:প্রচার করবেন।
সুবর্ণা. প্রিয় সালমা আক্তার সাথী। আপনার চিঠির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার শ্রোতা সংঘের সদস্যদের তথা আপনার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। সাধারণ আমরা অনুষ্ঠান পুন:প্রচার করি না। তবে, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে অনুষ্ঠানটি আবারো প্রচার করার চেষ্টা করবো, কথা দিচ্ছি।
(সুবর্ণা/আলিম)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |