|
1225lvyou
|
'বড় দিন' খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি আনন্দের দিন। কারণ, এদিন যীশু খ্রীষ্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। চীনারাও দিবসটি উত্সবের আমেজে পালন করে থাকে। এ দিন বন্ধুরা উপহার বিনিময় করে। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। যে সময়টায় 'বড় দিন' আসে, সাধারণত সেসময় পেইচিংয়ে তীব্র ঠাণ্ডা থাকে; মাঝে মাঝে তুষারপাতও হয়। পেইচিংয়ে এবার এখনো তুষার পড়েনি; তবে তাপমাত্রা প্রায়ই চলে যাচ্ছে হিমাঙ্কের ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। তাই পেইচিং বেশি ঘোরাঘুরি না-করে চলুন গরমের দেশ শ্রীলংকা থেকে ঘুরে আসি।
আলিম. শ্রীলংকা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী। সিংহলী ভাষায় 'শ্রী লংকা' অর্থ সুখী ভূমি বা উজ্জ্বল ও ধনী মাটি। ইতালির পর্যটনবিদ মার্কো পোলো একে 'সবচে সুন্দর দ্বীপ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখানকার প্রাকৃতিক ঐতিহ্য প্রচুর এবং দেশটি বৈশিষ্ট্যময় ইতিহাস ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ। শ্রীলংকা বিশ্বের তিনটি বড় চা উত্পাদনকারী দেশের অন্যতম। দেশটির অর্থনীতিও চা উত্পাদন শিল্পের ওপর নির্ভর করে। এ দেশের আরেকটি সুনাম আছে। এখানে পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর থেকে আহরিত উন্নতমানের মুক্তা।
সুবর্ণা. শ্রীলংকার আবহাওয়া গরম। উপকন্ঠ এলাকায় গড় তাপমাত্রা ৩১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাহাড়াঞ্চলের তাপমাত্রা একটু কম, গড়ে ২৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে বছরে মাত্র দুটি ঋতু: বর্ষাকাল ও গ্রীষ্মকাল। প্রতি বছরের মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এবং নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। পর্যটন শিল্প শ্রীলংকার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতি বছর ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। আলিম ভাই, আপনি কি কখনো শ্রীলংকায় বেড়াতে গেছেন?
আলিম. সুবর্ণা এটা আমার জন্য বিব্রতকর একটা প্রশ্ন। কারণ, আমি ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরেছি, কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত-শ্রীলংকা-নেপাল ঘুরে দেখার সুযোগ এখনো পাইনি। আমি প্রথম সুযোগেই এই তিনটি দেশ এবং মালদ্বীপ বেড়াতে যেতে চাই।
সুবর্ণা. আশা করি আপনি খুব শিগগিরই সে সুযোগ পাবেন। তো, শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আমি আপনাদের জন্য শ্রীলংকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের কিছু তথ্য তুলে ধরছি। পিননাওয়েলা হাতি পার্ক রাজধানী কলম্বোর ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি হাতির সংরক্ষণ এলাকা এবং দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম। শ্রীলংকার পশু সংরক্ষণ ব্যুরো ১৯৭৫ সালে হাতি সংরক্ষণ পার্ক প্রতিষ্ঠা করে।
আলিম. 'অনুরাধাপুর' শ্রীলংকার সবচে পুরনো শহর। এর ইতিহাস ২৫০০ বছরের পুরনো। খৃষ্টপূর্ব ৩৮০ সালে শ্রীলংকার রাজধানী ছিল এটি। এখানকার পুরনো রাজপ্রাসাদ ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কার করা হয় এবং পরে তা মেরামত করা হয়। প্রাসাদের দূর্গ-এলাকা পতুর্গালের ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত স্থাপত্য। বর্তমানে এখানে শ্রীলংকার জাতীয় সংসদ, সচিবালয়, ব্যাংক, দোকান, পর্যটন বিভাগ ও বিমান আর জাহাজ কোম্পানির অবস্থান। এ এলাকায় ঘন বন আছে, আছে সুন্দর রঙয়ের ফুল। এখানে গেলে আপনাদের চোখে পড়বে সারি সারি নারিকেল গাছ এবং প্রচুর কাক। এ এলাকার পাশেই সৈকত এলাকা। সৈকতে সমুদ্রের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন আপনারা।
সুবর্ণা. 'আদম পর্বত' শ্রীলংকায় অবস্থিত একটি পবিত্র পাহাড়। এটি দেশের রাজধানী কলম্বোর ৪০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এর উচ্চতা ২২৪৩ মিটার। এটি দক্ষিণ শ্রীলংকার সবচে উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লোহার চেইন দিয়ে ঘেরা রাস্তা আছে। এই রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা যায়। কথিত আছে, এই পাহাড়ের চূড়ায় পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম-এর পদচিহ্ন আছে। পর্যটকরা সেই পদচিহ্ন দেখার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় ওঠেন।
আলিম. শ্রীলংকা ভ্রমণে গেলে অবশ্যই আপনাকে জাতীয় জাদুঘরে যেতে হবে। এটি না-দেখলে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। জাদুঘরটি ১৮৭৭ সালে নির্মিত হয়। শ্রীলংকার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে রাখা হয়েছে। যেমন বিভিন্ন তাম্র পাত্র, খোদাই করা পাথর, জেড, চীনা মাটির পাত্র এবং চমত্কার সব হস্তশিল্পকর্ম। জাদুঘরটি ঘুরে দেখলে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে শ্রীলংকার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস। জাদুঘরে একটি পাথরের ভাস্কর্য আছে। কথিত আছে, ১৪০৯ সালে চীনের মিং রাজবংশ আমলের পর্যটক চেং হো শ্রীলংকা সফরকালে এ ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়। তা ছাড়া, জাদুঘরে বৌদ্ধ ধর্ম সংক্রান্ত চার হাজারেরও বেশি শাস্ত্র ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ সংগৃহীত আছে।
সুবর্ণা. পোলোন্নারুভা পুরনো নগর কলম্বোর ২১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবস্থিত। ১৯৮২ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানকার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তিতে সংস্কৃত ও সিংহলী ভাষার ব্যবহার লক্ষণীয়।
আলিম. সময় দ্রুত চলে যায়, আমাদের ভ্রমণও তাড়াতাড়ি শেষ হবে। এখন আমি কয়েকজন শ্রোতার চিঠি পড়ে শোনাবো। আমাদের লিখেছেন বাংলাদেশের নঁওগা থেকে মো. মোস্তাহিদুল ইসলাম। তিনি লিখেছেন: 'মনির সমুদ্র' হলো চীনা শব্দ 'জুহাই' এর অর্থ।এই নামকরণ সম্পর্কিত গল্পটি আমার মনে দারুণভাবে রেখাপাত করেছে। জুহাই হচেছ কুয়াংতুং প্রদেশের সবচেয়ে কম লোকসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকা। ইতিমধ্যেই সবচেয়ে আরামদায়ক শহর হিসাবে জাতিসংঘ কর্তৃক এই শহরটি পুরস্কৃত হয়েছে। শহরের সৈকত রাস্তার দৈর্ঘ্য ২০ কি মি'এর বেশি। সৈকত এলাকার কাছেই জলাভূমি, পাইন গাছের বন, প্রাণী সংরক্ষণ এলাকা। 'প্রেমের পথ' হলো এ রাস্তার একটি রোমান্টিক নাম। শাংহাই হলো এখানের একটি বিখ্যাত দ্বীপ। এই দ্বীপের কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা আমাকে আবেগাপ্লুত করেছে। বিশেষ ধন্যবাদ সুবর্না আপু ও আলিম ভাইয়াকে। কি আর বলবো, সত্যি কথা হলো: আপনাদের পরিবেশিত প্রতি সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠানের মান অতুলনীয়। 'জুহাই'-এ সমুদ্রের টাটকা খাবার পাওয়া যায়। এটি দামেও অনেকটা সস্তা। এখানকার রেঁস্তোরাগুলোতে মাছ বা মাছজাতীয় প্রাণীর রোস্ট খেতে দারুণ মজা লাগে। চলুন বেড়িয়ে আসি অনুষ্ঠান থেকে এসব তথ্য জেনে আনন্দ পেয়েছি। আবারো অনেক ধন্যবাদ 'চলুন বেড়িয়ে আসি'র পুরো পরিবারকে। প্রেমের রাস্তাটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। আর এই তিনটি অংশ শহরের তিনদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর বর্ণনা ছিল সাবলীল, আকর্ষণীয় ও অনবদ্য। এই পর্যায়ে বাজানো গানটি ছিল মিষ্টি ও বেশ শ্রুতিমধুর। আমার খুব পছন্দ হয়েছে তা। জুহাই শহরের ক্যাটলিস খাবার আর নাস্তা চা সম্পর্কে জেনে খেতে ইচ্ছে করছে। অনুষ্ঠান থেকে জানলাম, এখানকার চিংড়ি মাছের ডাম্পলিং, রাইস নুডুলস, স্টিম রাইস নুডুলস আর সবজি অনেক সুস্বাদু ও মজার। জানলাম জুহাই থেকে সহজেই মাকাও যাওয়া যায়। আবারো অনেক ধন্যবাদ সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |