|
1211lvyou
|
সুবর্ণা. দ্বীপে অবশ্যই সৈকত থাকবে। বালি দ্বীপেও সৈকত আছে। 'জিমবারান' সমুদ্রসৈকত বালি দ্বীপের সবচে আকর্ষণীয় সৈকতগুলোর অন্যতম। একসময় এখানে শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই বাস করতেন। বর্তমানে এখানে সুন্দর সুন্দর পাঁচতারকা হোটেল নির্মিত হয়েছে। পর্যটকদের প্রিয় স্থান এখন এটি। এখানকার সূর্যাস্তের দৃশ্য তারা পছন্দ করেন। সূর্যাস্ত দেখার সময় গান শোনা এবং আগুনে-ঝলসানো সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার মজাই আলাদা।
আলিম. কুতা সৈকত বালি দ্বীপের সবচে সুন্দর সৈকত হিসেবে চিহ্নিত। এখানে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্তরিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের স্বাগত জানায়। এখানকার সৈকত সমতল, বালির রঙ সাদা। যারা সার্ফিং ও ওয়ার্টার স্কিয়িং ভালোবাসেন, তাদের জন্য এ স্থানটি স্বর্গের মতো। সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত মার্কেটে বালি দ্বীপের বিভিন্ন ঐতিহ্যিক হস্তশিল্পকর্ম, বর্ণিল জাতীয় পোশাক এবং নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। সৈকত থেকে কাছাকাছি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যেতে গাড়িতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। তাই এখানে পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এ সৈকতের কাছাকাছি হোটেলের সংখ্যাও বেশি। তবে অধিকাংশই দুই বা তিন তারা হোটেল।
সুবর্ণা. আগের অনুষ্ঠানে আমরা বলেছি যে, কাঠ খোদাই শিল্পকর্ম বালি দ্বীপের বৈশিষ্ট্যময় হস্তশিল্পকর্ম। এখানে অনেক চমত্কার কাঠ খোদাই শিল্পী দেখা যায়। তাঁরা হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনীর দেবতা ও বালি দ্বীপের বাসিন্দাদের ঐতিহ্যিক জীবনযাপনের ওপর ভিত্তি করে নানা ধরনের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন। তারা টেবিল ও চেয়ারসহ নানা ধরনের আসবাবপত্রেও ফুটিয়ে তোলেন সুন্দর সুন্দর চিত্র।
আলিম. বালি দ্বীপের ইয়োং নদীর স্রোতে ভেসে চলা একটি দারুণ মজার ব্যাপার। নদীটির দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। নদীর অন্তত ২২টি স্থানে স্রোতের টান তুলনামূলকভাবে বেশি। এ স্থানগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিনোদনের ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থায় পর্যটকদের নিরাপদে নদীর স্রোতে ভেসে চলার আনন্দ দেওয়া হয়। নদীর দু'পাশে আদিম বনের রহস্যময় দৃশ্য দেখা যায়। পর্যটকরা চাইলে রিভার ক্রুজিং করতে পারেন। এই সেবা দেওয়ার জন্যও প্রস্তত বিভিন্ন কোম্পানি। স্থানীয় অঞ্চলে দুটি বড় কোম্পানি আছে। একটির নাম 'ক্যুইক সিলভার' এবং অন্যটি 'বালি হাই'। এই দুটো কোম্পানি পর্যটকদের নদীভ্রমণের সুযোগ করে দেয়। সাধারণত নদীভ্রমণের জন্য সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া করা যায়।
সুবর্ণা. বালি দ্বীপের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি বনে বহু বানরের বাস। দেনপাসার থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই বনের আয়তন ৬ হেক্টর। এখানকার উদ্ভিদ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বনে শুধু বানর বাস করে। বালি দ্বীপের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে, হনুমান হচ্ছে দেবতা। তাই তারা বানরের কদর করে। বনের বাইরে একটি মন্দির আছে। সেখানেও অনেক বানরের বাস। মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল সপ্তাদশ শতাব্দীতে। এ মন্দিরে পর্যটকরা যেতে পারেন না। এটি শুধু বানরদের জন্য।
আলিম. প্রিয় শ্রোতা, এতোক্ষণ শুনছিলেন গান। এখন চলুন জেনে নিই বালি দ্বীপের মজার মজার খাবার সম্পর্কে। 'গাদো গাদো' ইন্দোনেশিয়ায় বহুল প্রচলিত একটি বিশেষ ধরনের সালাদ। এই সালাদের উপাদানের মধ্যে আছে আলু, টমেটো, সিদ্ধ ডিম, শসা ও শাকসবজি। গরম আবহাওয়ায় এ সালাদ খেতে দারুণ। বালি দ্বীপে শুধু ফল দিয়ে একটি সালাদের পদ তৈরি করা হয়। এর নাম 'রুজাক'। এটি বালি দ্বীপের বৈশিষ্ট্যময় খাবারগুলোর অন্যতম। রুজাক তৈরি হয় আম, আনারস ও পেঁপের টুকরার সাথে বিশেষ ধরনের ঝাল সস মিশিয়ে। এর স্বাদ বৈশিষ্ট্যময় এবং শুনেছি এ খাবার খেলে লোকে স্লিম হয়। অর্থাত শরীরের ফ্যাট কমে যায়; মানুষ মোটা থেকে চিকন হয়।
সুবর্ণা. আরেক ধরনের খাবার আছে যা খেতে সুস্বাদু। এ খাবারের ইন্দোনেশীয় নাম 'মিয়ে গোরেং'। আসলে এটি ইন্সটান্ট নুডলস দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার। সাধারণত নারিকেলের জ্যুস বা ঝাল সস দিয়ে নুডলস ভাজা হয়। এর মধ্যে একটি ভাজা ডিম বা চিংড়ি মাছের প্যানকেক যোগ করা যেতে পারে। তাতে খাবারের স্বাদ বাড়বে। শুনেছি দূর থেকে এ খাবারের সুগন্ধ পাওয়া যায়।
মানুষ দিন শুরু করে নাস্তা বা ব্রেকফাস্ট দিয়ে। বালি দ্বীপে নাস্তা হিসেবে যে প্যানকেক পাওয়া যায়, তার তৈরির কৌশল এসেছে পাশ্চাত্য থেকে। তবে স্থানীয়রা প্যানকেকের সাথে কলা, নারিকেলের কুচি, টাটকা ফলের টুকরা ইত্যাদি পরিবেশন করে। বহুবর্ণ ও মিষ্টি স্বাদের প্যানকেক দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন একটি সুন্দর দিন।
আলিম. প্রিয় শ্রোতা, এবার রয়েছে আপনাদের জন্য কিছু 'পর্যটন টিপস'। এপ্রিল মাসে বালি দ্বীপে সবচে বেশি গরম অনুভূত হয়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালি দ্বীপের আবহাওয়া সবচে আরামদায়ক। সময়টা বালি দ্বীপের পর্যটন মৌসুম। বালি দ্বীপের মধ্যাঞ্চলের তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে একটু ঠাণ্ডা। সৈকতের কাছাকাছি এলাকায় তাপমাত্রা সবচে গরম।
সুবর্ণা. বালি দ্বীপে বেড়াতে চাইলে চীনা নাগরিকরা সেখানে পৌঁছে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। ভিসা ফি ২৫ মার্কিন ডলার। পর্যটন ভিসার মেয়াদ থাকে ১০ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। বালি দ্বীপে রুপি ও মার্কিন ডলারের প্রচলন আছে। ২০১৩ সালের বিনিময় হার অনুযায়ী ১ মার্কিন ডলার ৯৫০০ রুপির সমান। তবে বিমান বন্দরে মুদ্রা বিনিময় করলে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বালি দ্বীপের মানি এক্সচেঞ্জগুলো আপনাকে তুলনামূলকভাবে ভালো রেট দেবে।
আলিম. বালি দ্বীপের বৈশিষ্ট্যময় পণ্যদ্রব্যের মধ্যে আছে খোদাইকৃত কাঠের পণ্য, হাতে তৈরি কাপড়, কফি, শুকনো নারিকেল আর সুগন্ধীদ্রব্য। তবে সেখানে কেনাকাটার সময় দামাদামি করতে ভুলবেন না। বিক্রেতা আপনার কাছে যে দাম চাইবে, আপনি দরদাম করে তা অনেক কম মূল্যে কিনতে পারবেন। কখনো কখনো যে মূল্য চাওয়া হয়, আসল মূল্য হয় তার ১০ থেকে ২০ শতাংশ মাত্র।
চীনারা বালি দ্বীপে বেড়াতে গেলে হংকং হয়ে যায়। হংকং থেকে বিমানে বালি দ্বীপে পৌঁছাতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা। আপনি যদি রাজধানী জাকার্তা হয়ে যেতে চান, তাহলে জাকার্তা থেকে বালি পৌঁছাতে আপনাকে বিমানে দেড় ঘন্টা ভ্রমণ করতে হবে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |