|
1204lvyou
|
আলিম: ডিসেম্বর এসেছে। বিদায় নিতে যাচ্ছে ২০১৩ সাল। নতুন বছরের আগমনী বার্তা বয়ে আনছে যেন শীত। পেইচিংয়ে ধীরে ধীরে শীত বাড়ছে। রাস্তার দু'পাশের গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে গেছে। শহরের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এখন ব্যস্ত শুকনো পাতা সরানোর কাজে। রাস্তার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য দু'পাশে লাগানো ছোটো-ছোটো বাহারী গাছগুলোকে শীতের কবল থেকে রক্ষা করতে মোটা ও বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কাজও প্রায় শেষ। তুষারে ঢেকে যাওয়ার জন্য তৈরি রূপসী পেইচিং।
সুবর্ণা: শীতের পেইচিংয়েও দেখার মতো অনেক কিছু আছে। ন্যাড়া-মাথা গাছগুলো যখন তুষারের কাপড় গায়ে দেয়, তখন পেইচিংয়ের রাস্তায় এক অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। আর পেইচিংয়ের চারদিকের পাহাড়গুলোও তখন সাজে অন্যরকম সাজে। কিন্তু আজ আমরা শুধু পেইচিংয়ের বাইরে নয়, যাবো চীনের বাইরে। শীতকালে অপেক্ষাকৃত গরম পর্যটন স্থানগুলোতে বেড়াতে যাওয়া একটি দারুণ মজার ব্যাপার। তাই দেখা যায়, বাংলাদেশের কক্সবাজারে শীতের সময় বিদেশি পর্যটকদের ভীর বেশি থাকে। শীতপ্রধান দেশগুলোর অনেক মানুষ অপেক্ষাকৃত উষ্ণ কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে চলে আসেন অবকাশযাপনের জন্য। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপও তেমনি একটি পর্যটনকেন্দ্র। বালি দ্বীপের প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম। বিশ্বের সবচে আকর্ষণীয় ও রোম্যান্টিক দ্বীপগুলোর অন্যতম হিসেবে এটি পর্যটকদের কাছে প্রিয়। প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাকে নিয়ে এ সুন্দর দ্বীপে বেড়াতে যাবো।
আলিম. বালি দ্বীপ ইন্দোনেশিয়ার ১৩৬০০টি দ্বীপের মধ্যে সবচে আকর্ষণীয়। এর মোট আয়তন ৫৬২০ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ৩১.৫ লাখ। দ্বীপে ১০টিরও বেশি আগ্নেয়গিরি আছে। এখানে সূর্যালোক প্রচুর। বছরের ৬ মাসই এখানে গরমকাল। দ্বীপের মূল বাসিন্দারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এখানকার মন্দিরগুলো সুন্দর; স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য বিশ্ববিখ্যাত। পর্যটকরা তাই প্রতিবছর এখানে ছুটে আসেন।
সুবর্ণা. বালি দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে সবচে উঁচু আগ্নেয়গিরির নাম গুনুং আগুং (gunung agung)। এর উচ্চতা ৩১৪২ মিটার। আগ্নেয়গিরি এলাকা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বীপের মূল কৃষি এলাকা এখানে অবস্থিত। বালি দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলের লোকসংখ্যা কম। সেখানে বালি দ্বীপের জাতীয় উদ্যান আছে। নিবিড় বনে নানা ধরনের উদ্ভিদ ও পশুপাখি আছে। এখান থেকে সমুদ্রকে বড়ই রহস্যময় মনে হয়।
আলিম. সুপ্রিয় শ্রোতা এতোক্ষণ আপনারা যে গানটি শুনছিলেন, সেটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি চলচ্চিত্রের থিম সংগীত। চলচ্চিত্রের নাম 'বালি দ্বীপের গল্প'। চলচ্চিত্রের শ্যুটিং হয়েছে এই বালি দ্বীপে। যাই হোক, বালি দ্বীপের আবহাওয়া খুবই গরম। এখানকার গড় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে বর্ষাকাল। বাকিটা সময় গ্রীষ্মকাল। এ জন্য প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালি দ্বীপের পর্যটন মৌসুম। ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের পর্যটকরা প্রতি বছরের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বালি দ্বীপে বেড়াতে আসেন। তখন দ্বীপের হোটেলগুলোতে রুম পাওয়া মুশকিল; ভাড়াও বেশি।
সুবর্ণা. ভারতের সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রভাবে বালি দ্বীপের অধিকাংশ অধিবাসী হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস করেন। এটি ইন্দোনেশিয়ার একমাত্র স্থান যেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে এখানকার মানুষ যে হিন্দু ধর্ম পালন করে তা ভারতের হিন্দু ধর্মের চেয়ে কিছুটা আলাদা। বালি দ্বীপের সংস্কৃতির সাথে একাকার হয়ে এটি এখন হয়ে গেছে 'বালি হিন্দু ধর্ম'। এখানে প্রতিটি বাড়িতে মন্দির আছে। কমিউনিটিতে 'পবিত্র মন্দির' দেখা যায়। আর গ্রামের মধ্যে থাকে 'গ্রাম মন্দির'। বালি দ্বীপে মন্দিরের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি বলে, এর আরেক নাম 'হাজার মন্দিরের দ্বীপ'। পবিত্র মন্দিরের মধ্যে সবচে বিখ্যাত হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ 'বেসাকিহ্ মন্দির'। এ মন্দিরটি গুনুং আগুং পাহাড়ের কাছে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরি দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল।
আলিম. বালি দ্বীপের প্রাকৃতিক দৃশ্যই কেবল সুন্দর তা নয়, এখানকার সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতিও বিশ্ব বিখ্যাত। বালি দ্বীপের স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের ঐতিহ্যবাহী নাচ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এ নাচ বিশ্বের নৃত্য শিল্পাঙ্গনে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এর মধ্যে সিংহ আর তরবারী নৃত্য সবচে বিখ্যাত।
সুবর্ণা. প্রিয় শ্রোতা, শুনছিলেন গান। এখন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব বালি দ্বীপের বিভিন্ন হস্তশিল্পকর্মের সাথে। বালি দ্বীপে বেড়াতে আসলে, আপনাদের চোখে পড়বে পাথরের ওপর খোদাই-করা চিত্রকর্ম। দ্বীপের মধ্যাঞ্চলে একটি চিত্রকলা কেন্দ্র আছে। জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক চিত্রকর্ম। অদূরেই দেখবেন হাজার বছরের পুরনো একটি গুহা। গুহাটি চার কোণাকৃতির। এ গুহার গভীরতা মাত্র ২.৩ মিটার। গুহায় আছে দেবতার মূর্তি।
আগেই বলেছি, বালি দ্বীপে অসংখ্য মন্দির আছে। অনেক পর্যটক এ দ্বীপে এসে মন্দির পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে সবচে বিখ্যাত মন্দিরের নাম তানাহ লত (tanah lot)। কথিত আছে, বালি দ্বীপে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত বন্ধ করতেই এখানে ৭টি পবিত্র মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। এ মন্দির ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়। সমুদ্রের পাশে একটি বিশালাকৃতির পাথরের ওপর মন্দিরটি গড়ে তোলা হয়। জোয়ারের সময় মন্দিরটির ভিত্তিমূল পানির নীচে চলে যায়। তখন মনে হয় সমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সেটি। ভাটার সময় ভিত্তিসহ মন্দিরটি দৃষ্টিগোচর হয়। মন্দিরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। অনেক পর্যটক এখানে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখেন।
আলিম. বৈশিষ্ট্যময় নৃত্য ও ধর্ম ছাড়া বালি দ্বীপের সংগীতও নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এখানকার মানুষ ঢোল ও বাঁশ দিয়ে সুর সৃষ্টি করে। চীনের প্রাচীনকালের ঐতিহ্যিক সংগীতের সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উবুদ (ubud) আর আর্মায় (arma) নানা ধরনের শিল্পকলা জাদুঘর আছে। পর্যটকরা এখানে বালি দ্বীপের চিত্রকলা উপভোগ করতে পারেন। বালি গলফ্ এবং কাউন্টি ক্লাব এশিয়ার সবচে ভালো গলফ মাঠগুলোর অন্যতম। গলফ মাঠের সামনেই ভারত মহাসাগর। আর মাঠের কাছে আছে স্পা এবং হোটেল।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |