|
1127lvyou
|
জুহাই দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশে অবস্থিত। প্রাচীনকালে এলাকাটি ছিল একটি মত্স্যগ্রাম। এ শহরটি ছোট-বড় ১৪৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ৩০ বছর আগে চীনের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট তেং সিয়াও পিংয়ের উন্মুক্ততা ও সংস্কার নীতির ফলে এ এলাকা দ্রুত উন্নত হয় এবং এখন তা একটি আধুনিক ও সুন্দর শহরে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে জুহাই বেড়াতে যাবো এবং স্থানীয় লোকদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করবো।
আলিম. 'জুহাই' চীনা শব্দ। এর অর্থ 'মণির সমুদ্র'। কথিত আছে, প্রাচীনকালে বিদেশের একটি মালবাহী জাহাজ জুহাইয়ের কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় ডুবে গিয়েছিল। জাহাজটিতে ছিল অনেক মণি-মুক্তা। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা তখন থেকেই একে ডাকে জুহাই বা মণির সমুদ্র। জুহাই চীনের একটি দারুণ সুন্দর ও নতুন শহর। এখানে পাহাড়, সমুদ্র, পুরনো গ্রাম ও দ্বীপপুঞ্জ সবই দেখা যায়। কুয়াংতুং প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে এখানকার লোকসংখ্যা সবচে কম। জাতিসংঘের 'বসবাসের জন্য সবচে আরামদায়ক শহর' হিসেবে পুরষ্কার লাভ করেছে এ শহরটি।
সুবর্ণা. শহরের সৈকত রাস্তা বা মেরিন ড্রাইভের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারেরও বেশি। সৈকত এলাকার কাছে জলাভূমি, পাইন গাছের বন ও প্রাণী সংরক্ষণ এলাকা আছে। প্রেমিক-প্রেমিকারা সৈকত রাস্তায় হাঁটতে পারেন। এ রাস্তার আরেকটি রোমান্টিক নাম 'প্রেমের পথ'। সৈকতের কাছে এই রাস্তায় আপনারা যেকোনো সময় হাঁটতে পারেন এবং শহরের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। এখানকার সবচে বিখ্যাত দ্বীপের নাম শাংহাই দ্বীপ। সেখানে দর্শনীয় স্থান বেশি এবং অন্যান্য দ্বীপে বেড়াতে চাইলে আপনাকে জাহাজে চেপে ভ্রমণ করতে হবে কয়েক ঘন্টা। সেসব দ্বীপেও আছে দেখার মতো অনেক কিছু।
আলিম. জুহাই-এর আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। এখানে পাবেন সুমুদ্রের টাটকা খাবার। বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি আপনারা এখানে পাবেন বৈশিষ্ট্যময় ক্যাটনিস এবং নাস্তা চা। পাবেন নানা ধরনের চিংড়ি মাছ, ঝিনুক, এবালন ইত্যাদি। সমুদ্রের কাছে এসব খাবারের দামও অনেক কম। বন্ধুদের সঙ্গে এখানে বেড়াতে এলে সৈকতের কাছে রেস্তোরাঁয় সমুদ্রের বিভিন্ন মাছ বা মাছজাতীয় প্রাণির রোস্ট খেতে ভুলবেন না যেন।
সুবর্ণা. মজার খাবার খাওয়া শেষে প্রেমের রাস্তা ধরে হাঁটতে পারেন। প্রেমের রাস্তা তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। তিনটি অংশ শহরের তিন দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যটকরা সাইকেল ভাড়া করে এ রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারেন। রাস্তার দু'পাশে বড় বড় গাছের নিবিড় বন আছে; আছে সৈকত রাস্তার অপর দিকে সুন্দর চিংশান পার্ক। সেখানে পাহাড়ি রাস্তা ধরে ২০ মিনিট এগুলেই পৌঁছে যাবেন পাহাড়ের চূড়ায়। সেখান থেকে নিবিড় বন ও সমুদ্রের অপরূপ দৃশ্য আপনার মন ভালো করে দেবে। পাহাড়ের বাতাস নির্মল; আপনার শরীরে বুলিয়ে দেবে প্রশান্তির পরশ। এখানে আপনি চাইলে চুমুক দিতে পারেন স্থানীয়ভাবে তৈরি চায়ের কাপে। আর, অবশ্যই সেই স্বর্গীয় পরিবেশে তুলে নিতে পারেন স্মৃতি হিসেবে কিছু অসাধারণ ছবি। হ্যা, সঙ্গে ক্যামেরা নিতে কিন্তু ভুলবেন না।
আলিম. জুহাই-এর পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে যদি আপনি আগ্রহী হন, তবে চলে যেতে পারেন উপকন্ঠ এলাকার তৌমেন পুরনো রাস্তা এবং চিনথাই মন্দির দেখতে। তৌমেন পুরনো রাস্তায় যেতে বাসে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। এ পুরনো রাস্তার দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটারেরও বেশি। এ ছোট রাস্তায় ছিং রাজবংশের স্থাপত্য ও পাশ্চাত্য স্থাপত্য দেখা যায়। এখানে এলে আপনি প্রাচীনকালের লোকদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন। আপনি এখানে এলে আধুনিক কোনো চলচ্চিত্র দেখার আনন্দ পাবেন না, পাবেন পুরনো সাদা-কালো চলচ্চিত্র দেখার প্রশান্তি। দেখবেন, এখানে-সেখানে লোকজন বসে তাস খেলছেন, চা খাচ্ছেন, গল্প করছেন। কেউবা ছোট্ট মুদি দোকান থেকে কোমল পানীয় কিনে পান করছেন। গোটা চিত্রটা আপনাকে বলবে সুখী জীবনের গল্প। আপনি একটা অলস দুপুর কাটিয়ে দিতে পারবেন শুধু স্থানীয়দের অলস কর্মকাণ্ড দেখে।
সুবর্ণা. প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ শুনছিলেন গান। চলুন আবারো বেড়িয়ে পড়ি জুহাইয়ের রাস্তায়। তৌমেন পুরনো রাস্তা থেকে হুয়াংইয়াং পাহাড়ে গেলে চিনথাই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত এ মন্দিরের অদূরে পরিষ্কার পানির হ্রদ আছে। সেই সবুজ ও পরিষ্কার হ্রদের দৃশ্য দারুণ সুন্দর। হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে মন্দিরের ছবি ভেসে ওঠে। প্রাচীনকালে চীনের ছিং রাজবংশের ছিয়ানলোং আমলে এ চিনথাই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরটি আসলে হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের ভবন, প্যাগোডা ও প্রার্থনাকক্ষ নিয়ে গঠিত। মন্দিরের কাছে সুন্দর ও সবুজ হ্রদ, কালো পাহাড় ইত্যাদি মিলিয়ে সৃষ্টি করেছে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। পাহাড়ের পুরনো মন্দিরের দৃশ্য আর জুহাই শহরের দৃশ্যের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। শহরে না-গিয়ে এখানে প্রথমে এলে আপনার পক্ষে জুহাই শহর কল্পনা সম্ভব হবে না।
আলিম. রাজার উষ্ণপ্রস্রবণ তৌমেনের আরেকটি দর্শনীয় স্থান। এ সুদীর্ঘকালের উষ্ণপ্রস্রবণ যদিও দূরের উপকন্ঠ এলাকায় অবস্থিত, তবে এখানে পর্যটকের ভিড় হয় বেশি। এখানকার হোটেলের কক্ষে জাপানি স্টাইলের উষ্ণপ্রস্রবণ দেখতে পাবেন। অনেকে ব্যক্তিগত প্রাঙ্গণেও উষ্ণপ্রস্রবণ তৈরি করে নেন। সাধারণ মানুষের জন্য বড় উষ্ণপ্রস্রবণ পুকুরও দেখা যায়। উষ্ণপ্রস্রবণে গা ভিজিয়ে আপনি ভাবতে পারেন থাং রাজবংশ আমলের কথা।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |