|
1106lvyou
|
সিচিয়াংয়ের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে শ্রোতাদের পরিচয় করিয় দেয়ার আগে, এ স্থানটি সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য তুলে ধরছি। চীনের কুইচৌ প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মিয়াও জাতি ও তং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্যের লেশান জেলার অধীনে সিচিয়াং উপজেলা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সিচিয়াংয়ের পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১০ লাখেরও বেশি। ২০০০ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৭,৫০০ জন। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সিচিয়াং দেশ-বিদেশে বিখ্যাত মিয়াও জাতির গ্রামে পরিণত হয়েছে।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, পাহাড়ের মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে এই গ্রামটি। প্রাচীনকালে বলতে গেলে এটি ছিল একটি দুর্গম এলাকা। বাইরের দুনিয়ার সাথে গ্রামবাসীদের যোগাযোগ ছিল না বলা যায়। তবে পরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। গ্রামের যুবকেরা আরো বেশি টাকা অর্জন করার জন্য চীনের উপকূলীয় এলাকার শহরে চাকরি করতে শুরু করে। একসময় দেখা যায় যে, একমাত্র বৃদ্ধ আর শিশু ছাড়া, বাকি সবাই কাজের সন্ধানে গ্রামের বাইরে চলে গেছে। অবশ্য পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের এলাকায় প্রায় ১২০০ জন যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এখন অনেক যুবকই জন্মস্থানে ফিরে এসেছে এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছে। বর্তমানে সিচিয়াং উপজেলার মিয়াও গ্রামের লোকসংখ্যা ৬০০০ জনেরও বেশি। পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ-গ্রাম এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত পেয়েছে।
আলিম. শ্রোতা, গান শোনা হল। এটি মিয়াও জাতির একটি লোকসংগীত। গানে ফুটে উঠেছে মিয়াও জাতির লোকদের আন্তরিকতা ও সারল্য। এখন সিচিয়াং পর্যটন শিল্প উন্নয়ন সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানাই। ২০০৮ সালে সিচিয়াং-এ কুইচৌ প্রদেশের তৃতীয় পর্যটন শিল্প উন্নয়ন সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের পর সিচিয়াংয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধারও ব্যাপক উন্নতি ঘটনো হয়। এখন অনেক পর্যটক সিচিয়াং-এ বেড়াতে আসেন। পর্যটন শিল্পের উন্নতির ফলে, স্থানীয় অঞ্চলের গ্রামবাসীদের বার্ষিক গড় আয় ১৭০০ ইউয়ান থেকে ৮৫২০ ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে।
সুবর্ণা. সিচিয়াং পর্যটন শিল্পের সফল উন্নয়নের পেছনে ক্রিয়াশীল ছিল দুটি প্রধান কারণ। এক. মিয়াও জাতির আদি বাসস্থান ও পাহাড়ি গ্রামের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মিয়াও জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতি; দুই. সরকারের সাহায্য ও সহায়তা। পর্যটন সম্মেলনের পর স্থানীয় সরকার সিচিয়াংয়ের রাস্তা-ঘাট এমনভাবে উন্নত করেছে যাতে বাইরে থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে আসতে পর্যটকদের কোনো অসুবিধা না হয়। যাতায়াত-ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় এখন সিচিয়াং-এর বাসিন্দারা সহজেই বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং চীনের অন্যান্য প্রদেশের লোকেরা এখানে এসে চাকরিও করে।
আলিম. শানতুং প্রদেশের লিউ বিন সিচিয়াং-এ আসার আগে শাংহাইয়ের একটি বিশ্ব-বিখ্যাত বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের মতো সিচিয়াং বেড়াতে আসেন। ২০০৩ সালে তিনি পুনরায় সিচিয়াং আসেন এবং এখানকার দুটি ভবন ও একটি প্রাঙ্গণ ক্রয় করেন। তখন থেকেই শুরু করেন হোস্টেলের ব্যবসা। তখন স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা মনে করেছিলেন যে, এক লাখেরও বেশি ইউয়ান খরচ করে পাহাড়ঞ্চলে দুটি ভবন কেনা পাগলামী ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছেন যে, লিউ বিন একটি ভাল খাতে তখন পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলেন।
সুবর্ণা. আসলে শুরুর দিকে হোস্টেলের ব্যবসা কঠিন ছিল। ২০০৫ সালের কথা। সে বছরের প্রথম ৫২ দিন লিউ বিনের হোস্টেলে কোনো অতিথি আসেনি। তখন তার অবস্থা হয়েছিল এমন যে, তিনি চাইছিলেন অন্তত একজন অতিথি আসুক, যাক কাছ থেকে কোনো অর্থ নেবেন না, স্রেফ তার সঙ্গে গল্প করবেন। তাতে তার একাকীত্ব ঘুচবে। তবে ২০০৮ সালের পর পর্যটন সম্মেলনের পর স্থানীয় অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নতির সাথে সাথে তার ভাগ্য খুলে যায়। তিনি চীনের বিখ্যাত পর্যটন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের হোস্টেলের ছবি ও তথ্য প্রচার করেন। পর্যটকরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোস্টেলের রুম বুকিং দিতে শুরু করে। এখন প্রতিদিন তাঁর হোস্টেলের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ বুক করা থাকে। এখন তার হোস্টেল ব্যবসা বেশ রমরমা।
আলিম. পর্যটকদের আরো মানসম্পন্ন পরিসেবা দেয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার পারিবারিক হোস্টেল ব্যবসার ওপর স্থানীয় গ্রামবাসীদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দিয়েছে; প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতাও দিয়েছে। এ ছাড়া, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য টেলিভিশনে সিচিয়াং-এর বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। পর্যটন এজেন্সিগুলোও এক্ষেত্রে রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। সিচিয়াং-এ পর্যটকদের জন্য আয়োজন করা হয় পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে নাচ-গানের আসর। এর মাধ্যমে সিচিয়াং-এর সংস্কৃতি সম্পর্কেও বিশ্ববাসী জানতে পারছে।
সুবর্ণা. সিচিয়াং শুধু কুইচৌ প্রদেশের নয়, এটি চীনের ও বিশ্বের। এখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাই উপভোগ করতে পারেন। এখানে বলে রাখি, মিয়াও জাতির একটি সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে রচিত অপেরার কথা। এই অপেরার মাধ্যমেই পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা গ্রামটি সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানতে পারে। গ্রামটি এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বখ্যাত।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |