|
1009lvyou
|
আগের কোনো এক অনুষ্ঠানে আমরা চীনের কয়েকটি প্রদেশের সিঁড়ি-ক্ষেতের পরিচয় তুলে ধরেছি। আসলে মালভূমির সিঁড়ি-ক্ষেত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের অনেক অঞ্চলে দেখা যায়। তবে ইউয়ুননান প্রদেশের চিয়ানশুই পুরনো নগরে সিঁড়ি-ক্ষেতের সুন্দর দৃশ্য ছাড়াও, এ অঞ্চলের রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। বিশেষ করে গত বছর চীনের ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্র 'মজার স্বাদের চীনা খাবার'-এ চিয়াশুই তৌফু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার পর, এ পুরনো নগর একরাতের মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে গেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাকে নিয়ে চিয়ানশুই পুরনো নগরে বেড়াতে যাবো।
আলিম. বাংলাদেশের সাথে কিন্তু ইউয়ুননান প্রদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা থেকে খুনমিং সরাসরি বিমান চলাচল করে। আমি বাংলাদেশ থেকে চীন আসার সময় এবং চীন থেকে বাংলাদেশে যাবার সময় এই রুটই ব্যবহার করি। প্রতিবারই খুনমিংয়ে নামতে হয়। কিন্তু আমি এখনো খুনমিং শহর ঘুরে দেখার সুযোগ পাইনি। চিয়ানশুই নগর তাই আমার দেখা হয়নি। শুনেছি এখানে চীনের সংখ্যালঘু হানি জাতির বসবাস। এখানে বিশ্ব ঐতিহ্যও রয়েছে এবং এখানকার তৌফুও অতি জনপ্রিয়।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। চিয়ানশুই শহর হুংহো জেলা ও ইউয়ানইয়াং জেলা যাওয়ার সংযোগ স্থানে অবস্থিত। এখানকার তৌফু বা বিনকার্ড অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে স্থানীয় অঞ্চলের রোস্ট তৌফুর স্বাদই অন্যরকম। চিয়ানশুই পুরনো নগরের পশ্চিম দরজার বাইরে একটি ছোট চত্বর আছে। সেখানে অনেক রোস্ট তৌফুর দোকান পাওয়া যায়। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা ভোর, সন্ধ্যা বা রাতে রোস্ট তৌফু খায়। ভোরবেলায় লোকেরা নাস্তার দোকানে এসে এক প্লেট রাইস নুডলস খাওয়ার পাশাপাশি রোস্ট তৌফুও মজা করে খায়। কয়লারা আগুনে লোহার জালির ওপর তৌফুর ছোট ছোট টুকরা ঝলসানো হয় এবং পরে অন্যান্য প্রিয় উপকরণের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এ খাবার সত্যিই সুস্বাদু।
আলিম. রাতের বেলায় তৌফু দোকান সবচে ব্যস্ত থাকে। তখন তৌফু ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাংসের কাবাব, ডিম ও সবজির রোস্ট পাওয়া যায়। অনেক লোক স্থানীয় অঞ্চলের উত্পাদিত মাশরুশ রোস্ট ও মাংসের রোস্ট তৌফু রোস্টের সাথে মিশিয়ে খায়। এভাবে মাংসের অতিরিক্ত তেল তৌফুর সাথে মিশে আলাদা স্বাদের সৃষ্টি করে; খেতে মজা লাগে। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা ভুট্টার দানা দিয়ে তৌফুর সংখ্যা হিসাব করে থাকে। এক একটি তৌফু খাওয়ার পর ছোট বাটির ভিতরে একটি ভূট্টার দানা রাখা হয়। এভাবে খাওয়া শেষে তৌফুর মোট খরচ হিসাব করা যায়। চিয়ানশুইতে তৌফু দোকানের একেকজন মালিক প্রতিদিন হাত দিয়ে প্রায় ২০ হাজার তৌফু টুকরা তৈরি করতে পারেন। কিন্তু সেগুলো কম সময়ের মধ্যে সবই বিক্রি হয়ে যায়।
সুবর্ণা. আসলে চিয়ানশুই তৌফুর কারখানা প্রধানত পুরনো নগরের বাইরে ছোট একটি গ্রামে অবস্থিত। গ্রামে দুটি পুরনো কুয়া আছে। লোকরা এ কুয়ার পানি দিয়ে তৌফু তৈরি করে। খেতে বেশ মজা লাগে। আলিম ভাই, আপনি জানেন চিয়ানশুই তৌফু অনেক ধরনের হতে পারে। যেমন, শুকনো তৌফু, রসময় তৌফু ইত্যাদি। রোস্ট করার পর রসসহ তৌফু খেতে অনেকটা লিচু খাওয়ার মতো মনে হয়। আর শুকনো তৌফু রোস্টের আকার থাকে খুব ছোট। এগুলো রোস্ট করার পর কম সময়ের মধ্যে বড় হয়ে যায় এবং তা খেতে তুলার মতো নরম। মুখে দিলেই তা যেন হারিয়ে যায়। চমত্কার এক অবাক-লাগা অনুভূতি হয় তখন।
আলিম. আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতা, চিয়ানশুই তৌফু সম্পর্কে অনেক তথ্য জানার পর এখন গান শোনার পালা। গানের নাম হানি জাতির মেয়ে। গানের কথা মোটামুটি এমন: 'তুমি সিঁড়ি-ক্ষেত্রের পাশে দাঁড়িয়ে কে অপেক্ষা করো?/ মনের কথা কার সঙ্গে বলতে চাও?/ তুমি কার কথা চিন্তা করো, সুন্দর কাপড় পড়ে কার জন্য অপেক্ষা করো?/ তোমার সুন্দর ছায়া সূর্যের নিচে পড়ে/ সুন্দর দৃশ্যে ফলের সুগন্ধ ভেঁসে যায়/ তোমার চোখে দুঃখ দেখা যায়/ এ সুন্দর ঋতুতে তোমার মিষ্টি কন্ঠ পাহাড়ে ভেসে বেড়ায়....
সুবর্ণা. গান শোনা হল। চলুন আবারো বেড়িয়ে পড়ি চিয়ানশুই-এর উদ্দেশে। খুনমিং থেকে চিয়ানশুই-এর দূরত্ব প্রায় ২২০ কিলোমিটার। গাড়িতে প্রায় ৩ ঘন্টার পথ। প্রতিদিন খুনমিং থেকে চিয়ানশুই যাওয়ার বাস পাবেন। টিকিট ৮০ ইউয়ান। চিয়ানশুই পুরনো নগরে কয়েকটি হোস্টেল রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের প্রতিদিনকার ভাড়া ১২০ ইউয়ান। এখানে হানি জাতির লোকেরা বসবাস করে। তারা সিঁড়ি-ক্ষেতে কৃষিকাজ করে এবং প্রকৃতির সাথে সুষম সহাবস্থান করে। চিয়ানশুইর অদূরে হোংহো জেলা অবস্থিত। ইসা নামক ছোট উপজেলা প্রাচীনকালে ছিল চীন থেকে ভিয়েতনাম ও লাওস যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্ত স্থান। পাহাড়ের ভিতরে অবস্থিত ইসা উপজেলার আবহাওয়া আরামদায়। এখানে ঠাণ্ডা পড়ে না। গ্রীষ্মকালে পাহাড়ের উপত্যাকায় প্রচুর কলার গাছ দেখা যায়।
আলিম. আসলে ইসা হল সংখ্যালঘু ই জাতির ভাষা। ইসা অর্থ পানির অভাবযুক্ত খরা স্থান। কয়েক শো বছর আগে এখানকার আবহাওয়া খুবই গরম ছিল। স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের জীবনযাপনও কঠিন ছিল। তারা ছিল দরিদ্র। লোকেরা ঘোড়ায় চড়ে বাইরের দুনিয়ার সাথে ব্যবসা করত। তারা ইউয়ুননান থেকে ভিয়েতনাম যেত এবং ভিয়েতনাম থেকে তুলা নিয়ে আসত। আর ইউয়ুননানের পণ্যদ্রব্য ভিয়েতনাম ও লাসওসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত ব্যবসার উদ্দেশ্যে। পরে এ ছোট উপজেলা আগের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। এখানে চীন ও পাশ্চাত্য দেশের বৈশিষ্ট্য সংমিশ্রিত অনেক স্থাপত্য নির্মিত হয়েছে।
সুবর্ণা. ইসা উপজেলায় সবচে ভালো সংরক্ষিত স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে নগরের পূর্বপথের তোরণ এবং ইয়াও পরিবারের বাড়ি। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা জানিয়েছে যে, প্রাচীনকালে ইয়াও পরিবারের লোক সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এ পরিবারের ঘোড়ার দল হোংহোতে অনেক বিখ্যাত। পরিবারটির প্রতি বছরের আয় কয়েক লাখ ইউয়ান। ইউয়াও পরিবারের লোক খুনমিংয়ে একটি টাকা বিনিময়ের দোকান দিয়েছে। ইয়াও পরিবারের বাড়ি দারুণ সুন্দর। প্রধান দরজা বৃটেন ও ফ্রান্সের স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন; তবে ভিতরে চীনের বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে। এখানে এলে প্রিয় শ্রোতা, ইয়াও পরিবারের বাসভবন পরিদর্শন করতে ভুলবেন না।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |