|
আলিম. বন্ধুরা, ব্যাংককের কেন্দ্রীয় এলাকায় আরেকটি ছোট যাদুঘর আছে। জাদুঘরটির নাম জিম থমসনস্ হাউজ। জিম থমসন্স ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থাইল্যান্ডে এসেছিলেন। তিনি সেখানে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছেন। থাইল্যান্ডের লোকেরা সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং শান্তিপ্রিয়। তাদের দেখে জিম আকৃষ্ট হলেন এবং থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে যাওয়ার কয়েক বছরের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলেন যে, বাকি জীবন থাইল্যান্ডেই কাটিয়ে দিবেন। সুবর্ণা. এবার ব্যাংককে বেড়ানোর সময় আমি জিম থমসনের বাড়ি তথা জিম থমসনস্ জাদুঘরে গিয়েছি। তাঁর বাড়িটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। সেখানে দেখার মতো অনেককিছু আছে। আমি যে-হোটেলে ছিলাম, সেখান থেকে হেঁটে যেতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে। নদীর তীরে অবস্থিত একটি শান্ত গলিতে নির্মিত তার বাড়িটি সত্যিই সুন্দর। লাল রঙয়ের বাড়িটি থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যিক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। পেশাদার গাইড পর্যটকদের নিয়ে বাড়িটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখান। তারা ইংরেজী, জাপানি ও ফরাসি ভাষায় পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেন বাড়ির বিভিন্ন জিনিসের সাথে। এই বাড়ি বা জাদুঘরে ঢুকতে হলে খালি পায়ে ঢুকতে হয়, এটাই নিয়ম। এ নিয়ম সবাই মেনে চলেন।
আলিম. শুনেছি জিম থমসন থাইল্যান্ডের রেশম শিল্পের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন। আমি কি ঠিক শুনেছি?
সুবর্ণা. হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। জিম থমসন থাইল্যান্ডের রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তিনি থাইল্যান্ডের রেশম শ্রমিকদের আবাসিক এলাকায় নিজের বসবাস করতেন এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রেও তিনি থাইল্যান্ডের রেশমের পণ্য ও কাপড়ের পরিচয় তুলে ধরেন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে থাই রেশমের পণ্য খ্যাতি অর্জন করে। তার নামে প্রতিষ্ঠিত রেশমের থাই পণ্য এখন থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ট্রেডমার্কে পরিণত হয়েছে।
আলিম. শুনেছি তাঁর বাসায় চীন থেকে সংগ্রহ করা অনেক পুরাকীর্তি আছে। সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলুন।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, প্রচুর পুরাকীর্তি দেখেছি; যেমন গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, চীনা মাটির বোতল ইত্যাদি। এগুলো তো আমার খুবই পরিচিত। দেখে মনে হচ্ছিল যেন চীনের কোনো জাদুঘরে প্রবেশ করেছি। চীনের পুরাকীর্তিগুলো দিয়ে বাড়ির বিভিন্ন কক্ষ সাজানো হয়েছে। তবে মর্মান্তিক ব্যাপার হচ্ছে, এই সুন্দর বাড়ির নির্মাণকাজ ১৯৫৮ সালে শেষ হওয়ার মাত্র ৯ বছর পর ১৯৬৭ সালে থমসন মালিয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলের বনে অভিযান চালানোর সময় নিখোঁজ হন। এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি বা পাওয়া যায়নি তার মৃতদেহ। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৯৯ বছর।
আলিম. আচ্ছা, বন্ধুরা, রেশমের রাজা জিম থমসনের কিছু তথ্য জানার পর এখন গান শোনার পালা। গানের নাম থাইল্যান্ডের প্রেম গান। গানের সুর দারুণ সুন্দর, চলুন একসঙ্গে গানটি শুনি।
সুবর্ণা. সুন্দর গানটি শোনার পর ব্যাংককের আরেকটি মজার ও আরামদায়ক স্থানের সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। বিশেষ করে যারা দুপুরে চা খেতে পছন্দ করেন, তারা অবশ্যই সেখানে যাবেন। জায়গাটি হচ্ছে ব্যাংককের সবচে পুরনো ও ঐতিহ্যিক ৫ তারা হোটেল ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল। সাবওয়েতে সাফান তাক সিন স্টেশনে নেমে বন্দরের কাছে হোটেলের নৌকায় করে মেনেন নদীর অপর দিকে হোটেলে পৌঁছানো যায়। নদীতে ব্যাংককের লম্বা নৌকা দেখা যায়। এ-নৌকা থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী পরিবহন যান। আমরা তো জানি যে, ব্যাংককের রাস্তায় সবসময় ট্রাফিক জ্যাম থাকে। এ নৌকায় পথচলার সময় জ্যামের কোনো চিন্তা নেই। এ জন্য প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ব্যাংককের অনেক নাগরিক নৌকায় করে অফিস যায়। নৌকার ভাড়া জনপ্রতি ২০ থাই বাথ অর্থাত্ ৪ ইউয়ান। টেক্সি বা সাবওয়ের চেয়ে এ-ভাড়া অনেক কম।
আলিম. নদীর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই বেশ মজার। আপনি কি এ হোটেলে বেড়াতে গিয়েছেন?
সুবর্ণা. হ্যাঁ, অবশ্যই। দুপুরের চা আমারও প্রিয়। এ হোটেলটির সুদীর্ঘকালের ইতিহাস রয়েছে। এটি ব্যাংককের প্রতীক। ১৮৭৬ সালে হোটেলটি চালু হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা থাইল্যান্ড ভ্রমণের সময় এ হোটেলে থেকেছেন। হোটেলের পরিসেবা খুবই ভালো। সাদা রঙের হোটেলটির স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ইউরোপের মতো। এর মধ্যে অথরস্ লাউঞ্জটি দুপুরের চায়ের জন্য বিখ্যাত। তবে এখানকার দুপুরের চা খানিকটা দামী, দু'জন একসঙ্গে চা খেতে ৪০০ ইউয়ান খরচ হবে; বাংলাদেশি টাকায় যা পাঁচ হাজার টাকার মতো। এখানে বিভিন্ন ধরনের হাল্কা ধরনের খাবার ও মিষ্টি পাওয়া যায়। তা ছাড়া কফিও খাওয়া যায়। তবে দুপুরের চায়ের টেবিলের সংখ্যা খুবই কম। আগে থেকে বুকিং না-দিলে জায়গা পাওয়া যাবে না।
আলিম. বন্ধুরা, ব্যাংকক বেড়ানোর সুযোগ পেলে এ হোটেলে আসতে ভুলবেন না।
সুবর্ণা. সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হবে। যদিও আমরা দু'সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংককের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি; কিন্তু বাস্তবতা হচ্চে এখনো এমন অনেক দর্শনীয় স্থান ব্যাংককে রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে সময়ের অভাবে কিছু বলতে পারিনি।
আলিম. আচ্ছা, তাহলে আমি এখন এ সপ্তাহের ক্যুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন করি; প্রশ্নটি হচ্ছে: থাই রেশম রাজা জিম থমসন কোন দেশের লোক?
সুবর্ণা. প্রশ্নটি আবার বলি: থাই রেশম রাজা জিম থমসন কোন দেশের লোক?
আলিম. আমরা আপনাদের চিঠি অপেক্ষায় রইলাম। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn
(সুবর্ণা/আলিম)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |