|
0925lvyou
|
গেল সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কিছু পর্যটন স্থান ও মজার মজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তবে সময়ের কারণে তখন অনেক তথ্যই আমরা তুলে ধরতে পারিনি। আজও তাই আপনাদের নিয়ে ব্যাংককের বাকি অংশে ঘুরতে যাব।
আলিম. একদম সত্যি কথা। আসলে এক-দুটো অনুষ্ঠানে পর্যটন-নগরী ব্যাংকক সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা দেওয়াও মুশকিল। তো, সুবর্ণা, চলুন তাহলে আরেক দফা বেড়িয়ে আসি ব্যাংকক থেকে।
সুবর্ণা. আলিম ভাই, আজ প্রথমেই শ্রোতাদের নিয়ে যাব থাইল্যান্ডের পঞ্চম রাজার রাজপ্রাসাদ ওয়েইমানমেক প্যালেস্টে (weimanmek palest)। এটি সেগুন কাঠ দিয়ে তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম প্রাসাদ। এর আরেকটি নাম সোনার সেগুন কাঠের প্রাসাদ। এই প্রাসাদেই আছে থাইল্যান্ডের জাতীয় শিল্পকর্মের জাদুঘর। রাজপ্রাসাদে প্রবেশের টিকিট কিনলে, বিনা পয়সায় আপনারা জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারেন। জানা গেছে, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক রাজবংশের পঞ্চম রাজা চুলাকংয়ের নির্দেশে সেগুন কাঠ দিয়ে এই প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল। ১৯০০ সালে তা প্রথমত শিছাং দ্বীপে নির্মিত হয়, পরে ব্যাংককের উপকন্ঠ এলাকায় স্থানান্তরিত হয়।
আলিম. কথিত আছে রামা অর্থাত্ ব্যাংকক রাজবংশের পঞ্চম রাজার একজন রাজকুমার ছিল। রাজা তাকে খুতব ভালোবাসতেন। তবে ছোটবেলা থেকে রাজকুমারের শরীর ছিল অতি দুর্বল। একবার এক সন্ন্যাসী রাজাকে বললেন, শিছাং দ্বীপে সেগুন কাঠ দিয়ে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করতে হবে এবং রাজকুমারকে সে-প্রাসাদে রাখলে তার স্বাস্থ্য ভালো হবে। পরে ওই প্রাসাদের রহস্যময় ও শান্ত পরিবেশে রাজকুমারের স্বাস্থ্য সত্যি সত্যি ভালো হয়েছিল। রাজা খুবই খুশি হন এবং রাজকুমারকে নিয়ে ব্যাংককে ফিরে আসেন। কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই রাজকুমার আকস্মিকভাবে মারা যান। রাজা খুবই দুঃখ পান এবং শিছাং দ্বীপ থেকে সেগুন কাঠের প্রাসাদটি ব্যাংককে নিয়ে আসেন। তাই বর্তমানে এ দ্বীপে শুধু প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
সুবর্ণা. আচ্ছা, বন্ধুরা, সেগুন কাঠের প্রাসাদের আরোকিছু তথ্য জানার আগে আমরা একটি সুন্দর গান শুনবো। গানের নাম স্বর্গের দূত। আপনারা জানেন, ব্যাংককের আরেক নাম স্বর্গের দূত। চলুন একসঙ্গে গানটি শুনি।
আলিম. ১৯২৬ সাল থেকে এ প্রাসাদ বন্ধ ছিল। ১৯৮২ সালে ব্যাংকক রাজবংশ প্রতিষ্ঠার ২০০তম বার্ষিকীতে তত্কালীন রানী মনে মনে ভাবলেন, এত সুন্দর সেগুন গাছের প্রাসাদটি বিশ্বের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। যেই ভাবা, সেই কাজ। তিনি প্রাসাদটি জনসাধারণের জন্য খুলে দিতে রাজার কাছে আবেদন করলেন। রাজা অনুমতি দিলেন। তখন থেকে প্রাসাদে সংরক্ষিত রাজ পরিবারের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম, রাজাদের ছবি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রাসাদটির আকৃতি ইংরেজি অক্ষর 'L'-এর মতো। তিন তলা প্রাসাদটিতে কক্ষের সংখ্যা ৮১টি। যদিও প্রাসাদের বাইরের ও ভিতরের কাঠামো সবই সেগুন কাঠের তৈরি হলেও, প্রাসাদের ভিতরের আসবাবপত্র ইউরোপীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। প্রাসাদে আছে বসার, পড়ার, খাবারের ও শোবার ঘর। এর মধ্যে পঞ্চম রাজার শোবার ঘর ও বৈঠকখানা আগের মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
সুবর্ণা. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মার্কিন সামরিক বিমান থাইল্যান্ডে অবস্থানরত জাপানি বাহিনীর ওপর আঘাত হেনেছিল। সে-সময় প্রাসাদটির মাঝখানে একটি বোমা পড়েছিল। কিন্তু সৌভাগ্যবশত বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি। বুঝতেই পারছেন, বোমাটি তখন বিস্ফোরিত হলে আজকের এই প্রাসাদের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না এবং আমরাও হয়তো প্রাসাদ নিয়ে আজকের অনুষ্ঠান করতাম না।
সে যাক, প্রাসাদ পরিদর্শনকারীদের জন্য কিছু টিপস জানিয়ে রাখি। ব্যাগ বা ক্যামেরা নিয়ে প্রাসাদের ভিতরে যাওয়া নিষিদ্ধ। ছবি তোলার তো প্রশ্নই আসে না। গাইডের সহায়তায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রাসাদ পরিদর্শন করতে হয়। পরিদর্শনের সময় প্রায় এক ঘন্টা। রাজপ্রাসাদ পরিদর্শন করতে হলে আপনাকে পুরো শরীর ঢেকে নিতে হবে। অর্থাত এমন পোষাক পড়েত হবে যাতে মোটামুটি শরীরের সকল অংশ ঢাকা থাকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রাসাদ খোলা থাকে।
আলিম. আচ্ছা, সেগুন গাছের প্রাসাদের তথ্য জানার পর এখন গান শোনার পালা। গানের নাম ব্যাংককের রাত । চলুন একসঙ্গে গানটি শুনি।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |