|
0911lvyou
|
পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড স্বর্গের মতো। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের আবহাওয়াতে সুস্বাদু খাবার, কোমল পরিসেবা, সুন্দর দ্বীপ ও সমুদ্র এবং আরামদায়ক মাসাজ—সবই পাওয়া যায় এ দেশে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে উত্তর থাইল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চল ছিয়াংমাই শহরে বেড়াতে যাবো এবং স্থানীয় অঞ্চলের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও রীতিনীতি জানিয়ে দেবো।
আলিম. আচ্ছা, আগের অনুষ্ঠানে আপনি সামুই দ্বীপ সম্পর্কে আমাদের বলেছিলেন। এরই মধ্যে ছিয়াংমাই বেড়িয়ে এলেন। আপনি বলেছেন, এবারের ভ্রমণ আপনার মনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। কী ধরণের প্রভাব ফেলেছে? থাইল্যান্ডের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ছিয়াংমাই-এর কী পার্থক্য আছে?
সুবর্ণা. সামুই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপের মতো। এর সমুদ্র ও সৈকত দারুণ পরিস্কার ও সুন্দর। তবে ছিয়াংমাই পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত একটি ছোট শহর। এর আবহাওয়া সামুই দ্বীপের তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক। স্থানীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য ঠিক চীনের ইউয়ুন্নান প্রদেশের মতো। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের চীন ও এশিয়ায় অতি জনপ্রিয় ও বিখ্যাত গায়িকা মিস তেং লি চুন বহুবার ছিয়াংমাইতে বেড়াতে গেছেন এবং তিনি এ সুন্দর ও শান্ত শহরটি বেশ ভালবাসেন। ছিয়াংমাই'র জন্য তিনি একটি সুন্দর গান গেয়েছেন। গানের নাম 'ছোট জেলার গল্প'। গানের কথা মোটামুটি এমন, 'ছোট জেলায় হলেও গল্প বেশি থাকে, এর মধ্যে দুঃখ ও সুঃখের ব্যাপার সবই আছে/ আপনারা এ ছোট জেলায় বেড়াতে আসলে, অনেক গল্প শুনতে পাবেন/ দূর থেকে দেখলে জেলাটি ছবির মতো, কাছে চলে আসলে জেলাটি মিষ্টি গানের মতো/ দুর্নিবার ভালবাসার গল্প এখানে শুনতে পাবেন/ বন্ধু নিয়ে ছোট এই জেলায় বেড়াতে আসতে ভুলবেন না যেন....
আলিম. আচ্ছা, মিষ্টি কন্ঠে এই মিষ্টি গানটি শোনার পর এখন ছিয়াংমাইয়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের তথ্য জানাই। আমরা তো জানি, থাইল্যান্ডের লোকেরা মূলত বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাস করে। এ জন্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা রকমের সুন্দর সোনালী মন্দির দেখা যায়। ছিয়াংমাই জেলার পুরনো নগর এলাকায় ৩০০টিরও বেশি মন্দির আছে। থাইল্যান্ডের অন্যান্য শহরের মন্দিরগুলোর চেয়ে এখানকার মন্দিরের ডিজাইন ভিন্ন রকমের। এগুলো ১৩ আর ১৪ শতাব্দীর মিয়ানমারের মন্দিরের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এসব মন্দিরে ছাতার মতো তিন স্তরের ছাদ দেখা যায়; প্রবেশপথে দেখা যায় সিংহের মূর্তি। মিয়ানমারের ধনী লোকেরা ছিয়াংমাইতে অভিবাসন করার সময় প্রচুর পরিমাণে সেগুন কাঠ নিয়ে এসেছিলেন। সেসব কাঠ দিয়েই মন্দিরের কাঠামো নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা নিয়মিতভাবে মন্দির মেরামত ও সাজানোর কাজ করে, যাতে সবসময় মন্দিরের পবিত্রতা ও সৌন্দর্য্য বজায় থাকে।
সুবর্ণা. ছিয়াংমাই শহরের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। ১২৯৬ সালে লামফুন (lamphun) রাষ্ট্রের রাজা মেংরাই (king mengrai) সর্বপ্রথম এ শহর প্রতিষ্ঠা করেন। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এ-শহরে দু'দেশের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সংমিশ্রণ করে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে, দু'দেশের মধ্যে যখনই যুদ্ধ হতো, তখনই এ-শহর তার শিকার হতো। শহরের ইতিহাস ৭০০ বছরেরও বেশি। শহরের অনেক পুরাকীর্তি যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বংস্ত হয়েছে। ১৫৫৮ সালে মিয়ানমারের রাজা পেগু (pegu) ছিয়াংমাই দখল করেন এবং পরবর্তী প্রায় ২০০ বছর ছিয়াংমাই মিয়ানমারের শাসনে ছিল। বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাচীনকালে ছিয়াংমাই ও ব্যাংককের মধ্যে যোগাযোগ ছিল খুবই কম। তাই স্থানীয় অঞ্চলের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, পোশাক ও খাবারের সাথে দক্ষিণ ও মধ্য-থাইল্যান্ডের অনেক পার্থক্য রয়েছে।
আলিম. আচ্ছা, ছিয়াংমাইয়ের খানিকটা ইতিহাসতো জানা হলো। এখন গানের পালা। গানের নাম 'চমত্কার ছিয়াংমাই'।
আলিম. সুন্দর গানটি শোনার পর এখন ছিয়াংমাইয়ের কয়েকটি বিশ্ব বিখ্যাত মন্দিরের তথ্য জানাই। প্রথমটি ফারা সিং মন্দির (phra singh)। এটি ছিয়াংমাই পুরনো নগরের সবচে সুন্দর মন্দিরগুলোর অন্যতম। ১৩৪৫ সালে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। এটি লানা স্টাইলের স্থাপত্য। প্রতি বছরের ১৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের পানি বিচ্ছুরণ উত্সবের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে অনেক পর্যটক আকর্ষণ করে।
সুবর্ণা. ছিয়াংমান (chiang man) মন্দির পুরনো নগরের সবচে পুরনো মন্দির। ১২৯৬ সালে ছিয়াংমাই শহরের প্রতিষ্ঠাতার নির্দেশে এ-মন্দির নির্মিত হয়। দুটি অতি বিখ্যাত বুদ্ধ মূর্তি এ মন্দিরে স্থাপন করা হয়, এর মধ্যে একটি মূর্তি ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি। কথিত আছে, এ মূর্তি বাতাস প্রবাহিত করতে ও বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। আরেকটি পুরনো মন্দিরের নাম শেদি লুয়াং (chedi luang)। ১৫৪৫ সালের এক ভূমিকম্পে এ মন্দিরের একটি বড় আকারের বুদ্ধ মূর্তি বিধ্বংস্ত হয়। পরে এটি মেরামত করা হয়।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |