|
0904lvyou
|
বিশ্ব বিখ্যাত আবিস্কার ও পর্যটক ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার সারা জীবনে পৃথিবীর অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছেন এবং নতুন নতুন দেশ-মহাদেশ আবিস্কার করেছেন। তিনি আবিস্কার করেছেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, সেন্ট লুশিয়া, সেন্ট মার্টিন, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা কলম্বাসের পর্যটন রুট অনুসরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দ্বীপে বেড়াতে যাবো।
আলিম. ইতিহাস বলছে, ১৪৯২ সালের ২৮ অক্টোবর কলম্বাসের জাহাজবহর কিউবার বারিয়া (bariay) উপসাগরে পৌঁছায়। সেখানে তিনি স্বর্ণ খুঁজে পাননি, পেয়েছিলেন তামাক। তারপর ৫০০ বছরের মধ্যে তামাক ক্যারিবীয় দেশগুলোর আয়ের প্রধান উত্সে পরিণত হয়। আগে বারিয়ার কাছে পাইন বন, সুন্দর ফুল ও নানা ধরনের পশুপাখি ছিল, বর্তমানেও আছে। কলম্বাস সেখানে সোনার সন্ধান পাননি, তবে তিনি স্থানীয় অঞ্চলের কৃষিজমিতে প্রচুর আখ চাষ করেছেন। কিউবার গরম আবহাওয়া আখ উত্পাদনের জন্য অনেক সহায়ক। বর্তমানে তা বিশ্বের সবচে বড় আখ উত্পাদনকেন্দ্রগুলো অন্যতম। কিউবার হলগুইন (holguin) প্রদেশের আয়তন ৯৩০০ বর্গকিলোমিটার, যেখানে ৯টি চিনি উত্পাদন কারখানা রয়েছে। এখানে চিনির বার্ষিক উত্পাদন ১০ লাখ টনের বেশি বলে কিউবাকে বিশ্বের সবচে 'মিষ্টি দেশ' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
সুবর্ণা. স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা পুরনো পদ্ধতিতে আখের শেষাংশ দিয়ে 'তাফিয়া' (tafia) নামক একধরনের মিষ্টি মদ তৈরী করে। এ মদের স্বাদ অনেকটা 'রাম'-এর (rum) মতো। পরে রাম নাবিক ও জলদস্যুদের প্রিয় পানীয়তে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর উপন্যাসে লিখেছিলেন, 'আমার মোজিটো (mojito) পাঁচ সেন্ট পাবে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটক পাবে এসে দেয়ালে বা দরজায় নিজের কথা লেখে। আসলে মোজিটো লেবুর জুস ও রাম দিয়ে তৈরি একধরণের ককটেইল পানীয়। এর উপর অল্প পরিমাণে পুদিনার পাতা ও বরফ দেয়া হয়। গরম আবহাওয়ায় এ-ককটেইল খেতে বেশ ভালো লাগে।
আলিম. সুবর্ণা আপনি যেভাবে পানীয়র বর্ণনা দিলেন, তাতে চেখে দেখতে পারলে মন্দ হতো না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমি মুসলিম। আমার জন্য মদ খাওয়া নিষেধ। তবে হ্যা, আমি ক্যারিবিয় দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি; তাতে কোনো বাধা নেই। এ পর্যন্ত এসে চলুন আমরা শ্রোতাদের একটি সুন্দর গান শোনাই। গানটির শিরোনাম ক্যারিবিয়ান ব্লু। আশা করি গানটি সবার ভালো লাগবে।
সুবর্ণা. সুন্দর গানটি শোনার পর এখন কলম্বাসের দ্বিতীয় আবিষ্কারের সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দিই। সেটি হচ্ছে 'সিগার'। যখন তিনি রেড ইন্ডিয়ান নেতার সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন, তখন তিনি লক্ষ্য করলেন যে, ইন্ডিয়ান নেতা একটি লম্বা পাইপ টানছে এবং তার মধ্য থেকে প্রচুর ধোঁয়া উত্পন্ন হচ্ছে। এটা দেখে পরে তিনি সিগার আবিষ্কার করেন এবং সিগার অল্প সময়ের মধ্যে স্পেনে প্রচলিত হয়। আরো পরে সারা বিশ্বেও জনপ্রিয় হয়।
আলিম. কিউবার পশ্চিমাঞ্চলের পিনারদেরিও শহরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। স্থানীয় অঞ্চলের আবহাওয়া তামাক চাষের জন্য সহায়ক। সিগার তৈরি পদ্ধতি অনেক জটিল। কর্মীরা হাত দিয়ে সিগার তৈরি করে। সিগার উত্পাদনের পর ৩ থেকে ৫ বছর রেখে খেলে তার সুগন্ধ আরো সহজভাবে উপভোগ করা যায়। যদিও সিগারের দাম অনেক বেশি, তবে তা ক্যারিবীয় পুরুষদের প্রতীক—রহস্যময়, বুদ্ধিমান ও আরামপ্রিয়।
সুবর্ণা. ২০০ বছর আগে কিউবা ছিল স্প্যানিশ ঔপনিবেশিকদের সোনা পরিবহনের বন্দর। জাহাজের বহর এখানে যখন থামত তখন স্প্যানিশ নাবিক ও আফ্রিকান দাসেরা আফ্রিকার তবলা সাথে ল্যাটিন সঙ্গীত মিশিয়ে নিজেদের মনের দু:খ প্রকাশ করতো।
আলিম. বন্ধুরা এতোক্ষণ আপনারা 'দ্বীপ' শিরোনামের একটি গান শুনলেন। তো, ১৪৯৩ সালে কলম্বাস কিউবায় অবস্থানকালে জ্যামাইকায় সোনা উত্পাদনের গল্প শুনেছিলেন। তারপর তিনি জাহাজবহর নিয়ে ১৪৯৪ সালের মে মাসে জ্যামাইকায় পৌঁছান। তিনি বলেন, "সেটি আমার দৃষ্টিতে সবচে সুন্দর দ্বীপ। সেখানে পাহাড় ও পবর্ত বেশি, মাটি ও আকাশ সংলগ্ন। নানা জায়গায় নদী, কৃষিক্ষেত ও সমতলভূমি দেখা যায়।" ১৫০৩ সালে তার চতুর্থ সমুদ্রযাত্রায় জাহাজ মেরামতের জন্য কলম্বাস জ্যামাইকায় আরো এক বছর ছিলেন। তা থেকে বোঝা যায় জ্যামাইকার প্রতি তাঁর ভালবাসা ছিল।
সুবর্ণা. জ্যামাইকার দান'স জলপ্রপাত (dunn's river falls) একটি দারুণ সুন্দর পর্যটন স্থান। ১৮৩ মিটার উঁচু স্থান থেকে জলপ্রপাতের পানি পড়ে। দান'স জলপ্রপাত জ্যামাইকার উত্তর উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। প্রাচীনকালে তা 'সেন্ট আন' (saint ann) শহরের একটি মত্স্যগ্রাম ছিল। তবে বর্তমানে এ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের কারণে তা বিশ্ববিখ্যাত দর্শনীয় স্থান ও বন্দর শহরে পরিণত হয়েছে।
আলিম. বস্তুত কলম্বাসের কারণেই জ্যামাইকার ব্যবসা ও বাণিজ্য শিল্প ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। তা ছাড়া, জ্যামাইকার একজন গায়কের নাম বিশ্ব বিখ্যাত। তাঁর নাম বব মার্লে, যিনি দারিদ্র লোকদের প্রতিনিধি ও বৈষম্য-বিরোধী। তিনি তার বৈশিষ্ট্যময় কন্ঠে রেগে (reggae) সংগীত গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। পরে তিনি জ্যামাইকার রাস্তাফারি (Rastafari religion) ধর্ম গ্রহণ করেন। এ ধর্মের স্লোগান হচ্ছে: এক স্রষ্টা, এক উদ্দেশ্য, এক নিয়তি।
সুবর্ণা. ১৯৭৪ সালে বব মার্লে ও তাঁর সংগীত দল ব্রিটেনে কনসার্ট করার সময় তাঁর রচনা একটি বিশ্ব বিখ্যাত গান গেয়েছেন। তখন থেকে এ গান সারা বিশ্বে প্রচলিত হয়েছে। গানের নাম no women no cry. তাহলে আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একসাথে এ সুন্দর গানটি শুনি।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |