|
0703lvyou
|
আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন যে, দক্ষিণ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও মজার মজার সব খাবার পাওয়া যায়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে দক্ষিণ চীনের আরেকটি সুন্দর শহর 'লিশুই'-এ বেড়াতে যাবো। এটি হাংচৌ শহর ও উই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। চীনের অতি বিখ্যাত শহরগুলোর একটি না-হলেও, 'লিশুই'-এর প্রাকৃতিক দৃশ্য দারুণ সুন্দর।
আলিম. সুবর্ণা, আগের অনুষ্ঠানে আমরা লিচিয়াং নামক একটি জেলার সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। এই লিশুই শহরের সাথে কি লিচিয়াংয়ের কোনো সম্পর্ক আছে?
সুবর্ণা. না, আলিম ভাই, এই দুটো শহরের মধ্যে তেমন কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই। লিচিয়াং জেলা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউয়ুননান প্রদেশে অবস্থিত; অন্যদিকে, লিশুই শহর দক্ষিণ-পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে অবস্থিত। লিচিয়াং জেলার ইউলোং তুষার পাহাড় বিশ্ব বিখ্যাত; আর লিশুই শহরের সিঁড়ি ক্ষেত ও পুরনো গ্রামের দৃশ্য দারুণ সুন্দর।
আলিম. আচ্ছা, শুনেছি লিশুই শহরের পাহাড়ের দৃশ্য খুবই দৃষ্টিনন্দন। প্রাচীনকালে চীনের মিং রাজবংশের বিখ্যাত নাট্যকার থাং সিয়ান জু লিশুই-এর গভর্নরের দায়িত্ব পালন করার সময় বিখ্যাত নাটক 'পিওনি প্যাভিলিয়ন' রচনা করেছিলেন। এটি প্রাচীনকালে চীনের একটি অতি বিখ্যাত রোমান্টিক প্রেমের গল্প। এতে তুলে ধরা হয়েছে লিউ মেং মেই নামক একটি দরিদ্র ছাত্র এবং মিস দু লি নিয়াং নামের এক ধনীর মেয়ের প্রেম এবং সেই প্রেমের জন্য তাদের ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকারের কথা। এ-গল্প পাঠকের মনকে আবেগে আপ্লুত করে।
সুবর্ণা. বন্ধুরা, লিশুই'র সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার আগে আমরা একটি সুন্দর গান শুনবো। গানের নাম 'ইয়াংসি নদীর দক্ষিণ দিকে'। গানটি গেয়েছেন চীনের তাইওয়ান প্রদেশের শিল্পী লিন চুন চিয়ে।
আলিম. ভূস্বর্গ হাংচৌ শহরের তুলনায় লিশুই শহর অনেক শান্ত এবং এখানকার জীবনও ততোটা গতিশীল নয়। শহরের উপকন্ঠ এলাকায় নদী, বন, ছোট নৌকা, পুরনো বাসভবন ও সহজ-সরল গ্রামবাসীর দেখা মেলে। কুয়াশায় ঢাকা পুরনো রাস্তাগুলোকে দূর থেকে দেখলে হাতে আঁকা ছবির মতো মনে হয়। ২০ জনেরও বেশি চিত্রশিল্পী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসে বসবাস করছেন। কয়েক বছর আগে এখানে লিচিয়াং জেলার মতো চিত্রশিল্পীদের দোকান ও পাব স্ট্রিট গড়ে উঠেছিল। কিন্তু স্থানীয়রা হৈ চৈ পছন্দ করেন না বিধায়, পাব স্ট্রিট বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে এখানে শুধু আর্ট গ্যালারি ও কফি দোকান আছে।
সুবর্ণা. গ্রামাঞ্চলের সিঁড়ি ক্ষেতের চাষীরা শস্যক্ষেতে চাষের সময় সুন্দর নানন্দিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে, অনেকটা ট্যাটু শিল্পীদের মতো। লিশুই তেমন একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান নয়; তবে আপনারা এখানে বেড়াতে এলে তিন ধরণের সিঁড়ি ক্ষেত দেখতে পাবেন: প্রাকৃতিক সিঁড়ি ক্ষেত, সিঁড়ি ক্ষেত গ্রাম এবং হৃদয় আকৃতির সিঁড়ি ক্ষেত।
আলিম. ইউয়ুনহো জেলার মেইইউয়ান সিঁড়ি ক্ষেত এর মধ্যে অন্যতম। এ সিঁড়ি ক্ষেতের ধাপ ৭০০টিরও বেশি, উচ্চতা প্রায় এক হাজার মিটার। সিঁড়ি ক্ষেতের শীর্ষ স্থানে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। বৃষ্টি ও মেঘ থাকলে শীর্ষ স্থান থেকে গোটা সিঁড়ি ক্ষেত এলাকে স্বর্গের মতো রহস্যময় ও সুন্দর মনে হবে। সুইছাং জেলার তাখে গ্রাম স্থানীয় অঞ্চলের সবচে সুন্দর ও আরামদায়ক পর্যটন স্থানগুলোর অন্যতম। এখানকার মুরগির স্যুপ আর মিষ্টি আলু খেতে বেশি মজার। প্রতিদিন এ সুস্বাদু ও দুষণমুক্ত খাবার খেলে লোকজন নিশ্চিতভাবেই মোটা হয়ে যাবে। গাড়িতে বসে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ধরে খানিকটা দূর অতিক্রম করলেই হঠাত নজরে পরবে একটি পুরনো ও সুন্দর গ্রাম। গ্রামটি সিঁড়ি ক্ষেতের মাঝখানে অবস্থিত।
সুবর্ণা. এখানকার মুরগির স্যুপ অতি সুস্বাদু। কারণ, গ্রামের মুরগি সাধারণত সিঁড়ি ক্ষেতেই বড় হয়। এর মাংস খেতে বেশি মজার। হলুদ আঠালো ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি খেতেও অনেক মজা লাগে। সিঁড়ি ক্ষেতের সামনে বসে লাঞ্জ বা ডিনার খাওয়ার সময় মনে রোমান্টিক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। পুরনো গ্রামের পাথর পথ অনুসরণ করে গ্রামের ক্যান্টিনে পৌঁছানো যায়। ক্যান্টিনের বিভিন্ন দেয়ালে চিত্রশিল্পীদের আঁকা সিঁড়ি ক্ষেতের ছবি দেখা যায়। বসন্তকালে সিঁড়ি ক্ষেতে ফোটে হলুদ রঙয়ের ফুল; গ্রীষ্মকালে সবুজ রঙয়ের কাচা ধানের শীষ বাতাসে দোল খায়; শরত্কালে সোনালী ফসলে ছেয়ে যায় গোটা সিঁড়ি ক্ষেত এলাকা; আর শীতকালে তুষার পড়ার পর গোটা সিঁড়ি ক্ষেত একদম ধবধবে সাদা হয়ে যায়। সে এক দারুণ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। এভাবে বিভিন্ন ঋতুতে সিঁড়ি ক্ষেত এলাকায় দেখা যাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
আলিম. আচ্ছা, লিশুইয়ের পাহাড়াঞ্চলের সিঁড়ি ক্ষেত সম্পর্কেতো আমরা অনেককিছু জানলাম। এবার একটা গান শোনা যাক। গানের নাম 'লিশুই বাতাস'। চলুন একসঙ্গে গানটি শুনি।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |