Web bengali.cri.cn   
গন্তব্য: 'রেশম পথ'
  2013-06-26 16:33:22  cri

সুবর্ণা. সুন্দর গানটি শোনার পর এখন রেশম পথের কাছাকাছি অবস্থিত কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দিই। বাওজি শহর থেকে বাওথিয়ান হাইওয়ে ধরে এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে মাইজি পাহাড়ের গুহার। সেই গুহা একটি শিল্পকলা জাদুঘরের মতো। যদিও পাহাড়ের উচ্চতা মাত্র ১৪২ মিটার, তবে পাহাড়ের হাজার হাজার পাথর গুহা ও বুদ্ধের মূর্তি দেখতে দারুণ সুন্দর ও রহস্যময় লাগে। প্রাচীনকালে চীনের অনেক সন্ন্যাসী এ-পাহাড়ে বসবাস করেছিলেন।

আলিম. বাওজি শহর থেকে আরও পশ্চিম দিকে এগিয়ে কানসু প্রদেশের রাজধানী লানচৌতে পৌঁছানো যায়। হুয়াংহো নদী এ শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ শহরটি যেন মরুভূমিতে একটি মরুদ্বীপ। লানচৌ শহরের একটি খাবার গোটা চীনে অতি জনপ্রিয়। এর নাম লানচৌ নুডলস। লানচৌ শহরে চীনের মুসলমানদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের বাস। এই নুডলস চীনের মুসলমানদের জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি।

সুবর্ণা. লানচৌ গরুর মাংসের নুডলস একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে এখন চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এ খাবারের ইতিহাস মহা প্রাচীরের মতো অতি সুদীর্ঘকালের। আসলে লানচৌ গরুর মাংসের নুডলস চীনের হোনান প্রদেশের বোআই জেলার গরুর মাংসের নুডলস থেকে এসেছে। প্রাচীনকালের ছিং রাজবংশের সময় অষ্টাদশ শতাব্দীতে তোসিয়াং জাতির মুসলমান মা লিউ ছি হোনান প্রদেশ থেকে গরুর মাংসের নুডলসের রান্নার উপায় শিখে নিয়ে তা লানচৌ শহরে নিয়ে এসেছিলেন। সেই সাথে তারা লানচৌ গরুর মাংসের নুডলসের রান্নার উপকরণ নির্ধারণ করছিলেন। উপকরণগুলো হচ্ছে: স্বচ্ছ স্যুপ, সাদা মূলা , রসুনের সবুজ পাতা, লাল মরিচের গুড়ো ও হলুদ নুডলস। লানচৌ গরুর মাংসের নুডলস হল গরুর মাংসের স্যুপের মধ্যে থাকা এক ধরনের নুডলস। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল স্যুপের স্বচ্ছতা। পাচকরা আলাদা পাত্রে নুডলস সিদ্ধ করার পর, পেয়ালায় গরুর মাংসের স্যুপ ও সিদ্ধ নুডলস দিয়ে দেন এবং এ স্যুপের মধ্যে সয়াসস থাকে না।

আলিম. শুনেছি এ-নুডলস তৈরির পদ্ধতিও খুবই মজার। পাচকরা ঐতিহ্যিক পদ্ধতি অনুযায়ী প্রথমে ময়দা মেখে পিন্ড তৈরী করেন। তারপর এ ময়দার পিন্ড দু'হাতে টেনে টেনে লম্বা করে নুডলস তৈরি করা শুরু করেন। এভাবে একটার পর একটা ময়দার পিন্ড থেকে সুতার মতো টেনে লম্বা করে তা মালার মতো পেচিয়ে নেন। আর এভাবেই গুণিতক হারে টেনে টেনে তা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা করে নেন। দেখতে দেখতে নুডলস তৈরি হয়ে যায় এবং এসব নুডলস অতিথিদের চাহিদা অনুযায়ী মোটা অথবা চিকন করা হয়। ময়দার পিন্ড তৈরির পদ্ধতি হল নুডলস তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। পাচকরা পিন্ডটি কমপক্ষে ৮০ বার দলে নেয়ার পর এ পিন্ড ব্যবহার করেন। পিন্ড তৈরির সময় কতোটুকু পানি দেয়া হবে, সেটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিন্ড যদি শক্ত হয়, তাহলে তা দিয়ে চিকন নুডলস তৈরি করা যাবে না। যদি আপনারা এ-নুডলস তৈরির প্রক্রিয়া দেখেন, আপনাদের কাছে অবশ্যই তা বিস্ময়কর মনে হবে। একজন পেশাদার পাচক এক মিনিট ৬ বা ৭ পেয়ালা নুডলস তৈরি করতে পারেন।

সুবর্ণা. চীনা খাবারের স্বাদ, রঙ ও সুগন্ধ সবই গুরুত্বপূর্ণ। লানচৌ গরুর মাংসের নুডলসে এ-তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা খেতে সবার কাছেই অনেক সুস্বাদু লাগবে। মুসলমানদের অভ্যেস অনুযায়ী, নুডলসের মধ্যে গরুর মাংস ও প্রাকৃতিক সুগন্ধী উপকরণ দিয়ে রান্না করা হয়। অতিথিরা চাহিদা অনুযায়ী গরুর মাংসের স্লাইস ও মাংসের টুকরার অর্ডার দিতে পারেন। এতে ব্যবহৃত গরুর মাংস নরম, সাদা মূলা মিষ্টি, লাল মরিচের তেল ঝাল, রসুনের পাতা সুগন্ধযুক্ত। খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণে চীনা ভিনেগার মাখিয়ে নিলে খেতে আরো মজা লাগবে।

আলিম. চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোকজন ঝাল খাবার খেতে বেশ পছন্দ করেন। যদি লানচৌ গরুর মাংসের নুডলস খাওয়ার সময় ঝাল মরিচের তেল না-দেয়া হয়, তাহলে তা মজাদার হবে না। লানচৌ শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত নুডলসের দোকানের নাম হল 'মাচিয়া তা ইয়ে'। এর অর্থ হল 'মা পরিবারের দাদা'র নুডলস'। নিয়মিত বড় পেয়ালার নুডলসের দাম মাত্র তিন ইউয়ান এবং দুই মিনিটের মধ্যে গরম ও সুস্বাদু নুডলস তৈরি করে পরিবেশন করা হয় এই দোকানে। এই নুডুলস অফিসের ব্যস্ত কর্মীদের জন্য একটি খুবই সুবিধাজনক ও মজার খাবার।

সুবর্ণা. বন্ধুরা, মজার মজার লানচৌ গরুর মাংসের নুডলসের পরিচয় দেয়ার পর এখন গানের পালা। আমরা একসঙ্গে 'রেশম পথ' শীর্ষক গানের একটি সুন্দর সুর শুনবো।

আলিম. সুন্দর গানটি শোনার পর আমারা আবারো রেশম পথে ভ্রমণ শুরু করি। লানচৌ শহর থেকে রওয়ানা হয়ে কানসু প্রদেশের আরেকটি সুন্দর শহর সিনিংতে পৌঁছানো হয়। প্রায় ৭০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেশম পথে পরিবাহিত চীনা মাটি ও রেশম পণ্য ধনী পরিবারের আভিজাত্যের প্রতীক। এ-পথের মাধ্যমে মধ্য-এশিয়া ও ইউরোপের ফুল এবং সবজিও চীনে পরিবহন করা হয়, যেমন: আঙ্গুর, গাজর, পিপার, পালং শাক, শসা, ডালিম ইত্যাদি। তা ছাড়া, চীনের কাগজশিল্প পাশ্চাত্যের দেশের চেয়ে অনেক উন্নত। প্রত্নতত্ত্ববিদরা চীনের লৌলান পুরাকীর্তিতে দ্বিতীয় শতাব্দীতে উত্পাদিত পুরনো কাগজ খুঁজে বের করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় চীনের কাগজ তৈরির প্রযুক্তি রেশম পথের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্য-এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল।

সুবর্ণা. জানা গেছে, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইউরোপের অনেক পর্যটক রেশম পথে চীনে বেড়াতে আসেন এবং এ-প্রযুক্তি ইউরোপে নিয়ে যান। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপের লোকেরা প্রেস প্রযুক্তি দিয়ে প্রথম বাইবেল ছাপায়। ১৪৬৬ সালে ইউরোপের প্রথম ছাপাখানা ইতালিতে নির্মিত হয় এবং এ-প্রযুক্তি অল্প সময়ের মধ্যে গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

আলিম. আচ্ছা, বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আজকের অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি শেষ হবে। এখন এ-সপ্তাহের ক্যুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন করি। তা হল: চীনের রেশম পথের মোট দৈর্ঘ্য কতো?

সুবর্ণা. প্রশ্নটি আবার বলি: চীনের রেশম পথের মোট দৈর্ঘ্য কতো? আমাদের ইমেল যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn

(সুবর্ণা/আলিম)


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040