Web bengali.cri.cn   
ফুচিয়ান প্রদেশের উই পাহাড়ের চা বাগানের জীবন
  2013-05-29 16:58:00  cri

আলিম. সুন্দর গানটি শোনার পর এখন উই পাহাড়ের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের কিছু তথ্য জানাই। উই পাহাড় মধ্য-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় অবস্থিত। এর মধ্যে অনেক ছোট পর্বত রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ মিটারেরও বেশি উঁচু পর্বতের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। এখানে লম্বা সময়ধরে বৃষ্টি হয় এবং কুয়াশা থাকে। এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত বসন্তকাল, গ্রীষ্মকাল ও শরত্কাল---সব ঋতুই উই পাহাড়ের পর্যটন মৌসুম। যদিও গ্রীষ্মকালে এখানকার আবহাওয়া একটু গরম থাকে, তবে এসময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দারুণ সুন্দর। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য নামতালিকায় উই পাহাড়ের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন এই পাড়ার মানবজাতির অভিন্ন সম্পদ।

সুবর্ণা. উই পাহাড়ের জাতীয় পার্কে তিনটি গিরিখাত রয়েছে; আর এ-গিরিখাতগুলো নিয়ে গঠিত হয়েছে তিনটি পর্যটন লাইন। ড্রাগন ও ফিনিক্স গিরিখাতে একটি রহস্যময় ও চমত্কার জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখা যায়। দ্রুতগতিতে পানি এসে ঝাপিয়ে পড়ছে অনেক নীচে----জলপ্রপাতের এ-দৃশ্য অতি মনোহর। এ-জলপ্রপাতের সামনে এসে দাঁড়ালে মনে হয় স্বর্গে এসে গেছি। ফেইছুই গিরিখাতেও রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। 'ফেইছুই' এক ধরনের জেড পাথরের নাম। এ গিরিখাতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ছোট-বড় হ্রদের সংখ্যা ৩৬টি। এগুলোর মধ্যে ১৮টি হ্রদের পানি কমপক্ষে ৫টি রঙ ধারণ করে; দেখতে দারুণ সুন্দর।

চীনের সিছুয়ান প্রদেশের চিউজাইকৌ পর্যটন এলাকায়ও বহুবর্ণ হ্রদ দেখা যায়। ওপর থেকে দেখলে সবুজ গাছপালার মধ্যে লুকিয়ে থাকা বহুবর্ণ হ্রদ দেখা যায়; সে এক রহস্যময় সুন্দর দৃশ্য। এ ছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬৩০ মিটার উঁচু চিউছোংথিয়ান পর্বতসহ বিভিন্ন পাহাড়ের শিখরে সূর্যোদয়ের দৃশ্যও অপূর্ব। সুর্য আস্তে আস্তে পর্বতের শিখরে উঁকি দেয়; তখন সূর্যের আলো পড়ে মেঘ ধারণ করে রক্তবর্ণ। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য।

এখানকার নিবিড় বনে বিভিন্ন পশুপাখির আকৃতির পাথর দেখে আপনার আশ্চর্য হবেন। ব্যাং, কুমির ইত্যাদির আকৃতিতে প্রাকৃতিক পাহাড় দেখে আপনার মনে হবে প্রকৃতি এক দক্ষ ভাষ্কর। রহস্যময় গিরিখাত এ-পার্কের মধ্যে সবচে শান্ত গিরিখাত। আদিম বন ও অসীম বাঁশবনের মধ্যে অনেকটা যেন লুকিয়ে আছে এই গিরিখাত। গিরিখাতের দু'পাশে আদিম বন দেখা যায়। এই গিরিখাত অতি গভীর ও শান্ত। ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাহাড়তলি ও নদীর দৃশ্য যেন একটি সুন্দর দিগন্তরেখার মতো। যারা হাইকিং-ট্র্যাকিং পছন্দ করেন, তারা এ গিরিখাতে আসলে বেশ মজা পাবেন। একানকার বনে নানা ধরনের উদ্ভিদ ও পশুপাখি দেখা যায়। এখানকার বাতাসও অতি পরিস্কার; এতে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক বেশি। পর্যটকরা এ-গিরিখাতে বেড়াতে এলে অনেক সুস্থ ও চনমনে অনুভব করবেন।

আলিম. আচ্ছা, বন্ধুরা, উই পাহাড়ের গিরিখাতের কিছু তথ্য জানার পর এখন গানের পালা। গানের নাম 'চা বাগানের মেয়ে'।

আলিম: সুন্দর গানটি শোনার পর উই পাহাড় পর্যটন এলাকার থিয়ানইয়ৌ পর্বতের সঙ্গে চলুন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই। এ-পর্বতের শীর্ষে দাঁড়িয়ে মেঘের সমুদ্র দেখা একটি দারুন অভিজ্ঞতা। এসময় মনে হয় যেন স্বর্গে প্রবেশ করেছি। মেঘের সমুদ্রেও ঢেউ-এর মতো ওঠে অনেকটা পানির সমুদ্রের মতোই। আর দৃশ্যপট পরিবর্তিত হতে থাকে প্রতিনিয়ত। পর্বতটির উপরের দিকে একটি এবং নীচের দিকে একটি----এই দুইটি পরিদর্শন মঞ্চ রয়েছে। উপরের অংশে একটি পরিদর্শন প্যাভিলিয়ন আছে, যেখান থেকে পর্যটকরা গোটা উই পাহাড় এলাকা এক নজরে দেখতে পারেন। সেখান থেকে পাহাড়, বন, মেঘ আর নীচে বয়ে যাওয়া আকাঁবাকাঁ নদী দেখলে মনে একধরণের প্রশান্তি অনুভব করা যায়।

প্রাচীনকালে চীনের বিখ্যাত পর্যটক স্যু সিয়া খে তাঁর বইয়ে লিখে গেছেন: "যদিও থিয়ানইয়ৌ পবর্ত নদীর কাছাকাছি অবস্থিত নয়, তবে এর শীর্ষ থেকে উই পাহাড় অঞ্চলের বিভিন্ন নদীর সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় বলে একে উই পাহাড়ের 'প্রথম পর্বত' বলে ডাকা উচিত।"

সুবর্ণা. আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রোতাবন্ধুরা অবশ্যই জেনে গেছেন যে, উই পাহাড় একটি চা উত্পাদন-কেন্দ্র। প্রাচীনকাল থেকে স্থানীয় অঞ্চলের চা কৃষকেরা ফলন ভালো হবার আশায় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন। চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার মার্চ মাসের শুরুতে অর্থাত্ এপ্রিল মাসের শুরুতে কৃষকরা তেমনি একটি অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করে। এ-অনুষ্ঠানের নাম 'পাহাড় ডাকা'। আরেকটি অনুষ্ঠানের নাম 'পাহাড় খোলা'। সাধারণত প্রতি বছরের মে মাসে এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কৃষকরা ভোরবেলায় চা-দেবতার মুর্তির সামনে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। নাস্তার পর বিশেষ প্রতিনিধি কৃষকদের নিয়ে চা বাগানে যায়। সেখানে সবাই কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে নানা দিক থেকে চায়ের পাতা তোলে। সূর্যোদয়ের পর শিশির শুকিয়ে গেলে বিশেষ প্রতিনিধি চা-কৃষকদের সঙ্গে ধুমপান করেন। তখন সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারেন এবং এভাবেই 'পাহাড় খোলা' অনুষ্ঠান শেষ হয়। 'পাহাড় ডাকা' ও 'পাহাড় খোলা' অনুষ্ঠান দুটি হচ্ছে উই পাহাড়ের চা-কৃষকদের বৈশিষ্ট্যময় রীতিনীতি। তা ছাড়া, চা তোলা সম্পর্কে চা তোলার অপেরাও খুবই প্রচলিত এতদঞ্চলে।

আলিম. তাহলে আমরা শ্রোতাবন্ধুদের জন্য 'চা তোলার নাচ' গানটি প্রচার করবো। একসঙ্গে শুনি এ সুন্দর গানটি।

আলিম: বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়; আজকের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হবে। তবে শেষ করার আগে আমরা এ-সপ্তাহের ক্যুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন করি। প্রশ্নটি হচ্ছে: উই পাহাড়ের সবচে বিখ্যাত চায়ের নাম কী?

সুবর্ণা. প্রশ্নটি আবার বলি: উই পাহাড়ের সবচে বিখ্যাত চায়ের নাম কী?

আলিম. আমরা আপনাদের চিঠি অপেক্ষায় রইলাম। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn

সুবর্ণা. সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে আবার কথা হবে, যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম)


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040