|
আলিম. প্রতিবছর মে মাসের গোড়ার দিকে উই পাহাড়ে বসন্তকালের চা-তোলার মৌসুম শুরু হয়। বছরের এই সময়টায় উই পাহাড়ে সবচে আকর্ষণীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। চীনের বসন্ত উত্সবের আগে থেকে শুরু হয়ে বর্ষাকাল পর্যন্ত চা-তোলার কাজ অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। চা-তোলার সেই দৃশ্য সত্যিই মনোহর। অবশ্য চা-শ্রমিকরা নিজেরা সে-দৃশ্য দেখতে পায় না, কারণ, তারা নিজেরাই প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে সেই দৃশ্যের সৃষ্টি করে থাকেন। তাদের ব্যস্ততাও দেখার মতো। তাদের অবশ্য ব্যস্ত না-থেকে উপায়ও নেই। সময়মতো চা-পাতা তোলা না-হলে যে বড় ক্ষতির আশঙ্কা!
সুবর্ণা. বন্ধুরা, ভোরবেলায় চা-শ্রমিকদের সঙ্গে উই পাহাড়ে প্রবেশ করে আপনারা তাদের কাজ কাছ থেকে দেখতে পারেন। উই পাহাড়ের উচ্চতা বেশি নয়। তাই পাহাড়ে আরোহণ করতে তেমন কষ্ট হবে না।
পাহাড়ের মধ্যে উই চা তোলার বাগান ছাড়া একটি রহস্যময় মন্দিরও আছে। মন্দিরটির নাম হুইইউয়ান মন্দির। এ-মন্দির উই পাহাড়ের ইউচু পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। বাঁশবনের ভেতরে নির্মিত মন্দিরটি দেখতে গ্রামাঞ্চলের বাসভবনের মতো। মন্দিরে মাত্র দুজন সন্ন্যাসী থাকেন। বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর বয়স ৮০ বছরেরও বেশি। যুবক সন্ন্যাসীর ডাক নাম থিয়ানসি। অতিথি আসলে তাঁরা তাদের চা খেতে দেন। মন্দিরের প্রাঙ্গণে পুরনো চেয়ার-টেবিলে বসে ধর্মীয় সঙ্গীত শুনতে শুনতে চা খাওয়ার আনন্দই আলাদা। বৃদ্ধ সন্ন্যাসী লিউ নিজের সবজি ক্ষেতে কাজ শেষ করে মন্দিরে ফিরে আসেন। প্রতিদিন ভোর ৪টায় তিনি জেগে ওঠেন এবং বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র পাঠ করেন। তারপর সবজি ক্ষেতে কাজ করে মন্দিরে ফিরে আসেন। বিশ্রামের সময় সুগন্ধী চা-এর স্বাদ নেন। খুবই সাধারণ জীবন কাটান এই দুই সন্নাসী; কিন্তু নিজেদের জীবন নিয়ে তাঁরা খুশি।
আলিম. আচ্ছা, উই পাহাড়ের মন্দিরের তথ্য জানার পর চলুন একটা গান শোনা যাক। গানের নাম 'চা-তোলা মেয়ে চা পাহাড়ে আরোহণ করে'। চলুন একসঙ্গে গানটি শুনি।
সুবর্ণা. হুইইউয়ান মন্দির থেকে ঘন্টা খানেক পায়ে হেঁটে উই পাহাড়ের তাও ধর্মের মন্দিরে পৌঁছানো যায়। এখানে উই পাহাড়ের শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় 'ইয়ান চা' পাওয়া যায়। কারণ, মন্দিরের কাছেই আছে এই চা-এর গাছ। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ঝুড়ি নিয়ে সেই গাছ থেকে পাতা তোলেন এবং সেগুলো মন্দিরের প্রাঙ্গনে সূর্যালোকে শুকিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ইয়ান চা প্রস্তুত করেন। সেই চা পাতা পাহাড়ের ঝর্ণার পানিতে সিদ্ধ করার পর যে চা তৈরি হয় তা সুগন্ধীযুক্ত ও মজাদার।
আলিম. উই পাহাড় দক্ষিণপূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের দক্ষিণ উপকণ্ঠ এলাকায় অবস্থিত। এলাকাটি চীনের অতি জনপ্রিয় ও বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের অন্যতম। উই পাহাড় একটি ইতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পাহাড়। প্রাচীনকাল থেকে চীনের বিভিন্ন রাজবংশের কবি এখানে এসে সুন্দর হস্তলিপিতে কাব্য রচনা করতেন। আগেই বলা হয়েছে, উই পাহাড়ের ইয়ান চা চীনে বিখ্যাত। এ-ধরনের চা পাহাড়ের শিলায় জন্ম নেয় বিধায়, একে ইয়ান চা বলে ডাকা হয়। চীনা ভাষায় 'ইয়ান' অর্থ 'শিলা'। ইয়ান চা-এর আরেকটি নাম তাহোংপাও। এই চা চীনের উলোং চায়ের প্রতীক।
সুবর্ণা. আমি ফুচিয়ান প্রদেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আসার পর থেকে উলোং চা খেতে বেশ পছন্দ করি। কারণে এ-চায়ের গন্ধ খুবই ভালো। ছোট কাপ দিয়ে ধীরে ধীরে একটু একটু করে এই চা খেতে দারুণ লাগে। বন্ধুরা, এবার চলুন আরেকটি গান শোনা যাক। গানটি ইয়ান চা-এর সাথে সম্পর্কিত। গানের নাম 'লাল'। মনে রাখতে হবে, ইয়ান চা-এর পাতা ও ইয়ান চায়ের রঙ লাল।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |