|
সুবর্ণা. ২০০৫ সালের শুরুতে তুং জাতির সংস্কৃতিসম্পদ জাদুঘর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এটি হংকংয়ের একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় নির্মিত পশ্চিম চীনের প্রথম সংস্কৃতিসম্পদ যাদুঘর এবং খুব সম্ভবত তা চীনের বৃহত্তম যাদুঘর। এর আয়তন ১৭২ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ১৫টি প্রশাসনিক গ্রাম এবং ৪৬টি প্রাকৃতিক ছোট গ্রাম। এখানকার লোকসংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। যাদুঘর হিসেবে এ-অঞ্চলটিকে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হল, স্থানীয় অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপন পদ্ধতি ও সংস্কৃতি রক্ষা করা।
আলিম. তুং জাতির গ্রাম থেকে আরও ৩০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে থাংআন গ্রামে পৌঁছানো যাবে। এখানকার তুং জাতির গ্রামের প্রবেশ এলাকায় 'ঢোল ভবন' দেখা যায়। 'ঢোল ভবন' তুং জাতির বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্য। থাং আন গ্রামের 'ঢোল ভবন' একটি ২০ তলার প্যাগোডার মতো কাঠের তৈরি স্থাপত্য। কোনো পেরেক ব্যবহার না-করে তৈরি করা হয় এ 'ঢোল ভবন'। তুং জাতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখানে আয়োজন করা হয়।
সুবর্ণা. তা ছাড়া, ঢোল ভবনের কাছেই থাকে একটি বর্গাকৃতির কুয়া। এই কুয়া-ই স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের পানিয় জলের উত্স। এখানকার কুয়ার পানির গুণগতমানও খুবই ভালো। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা প্রতিদিন ঢোল ভবনের সামনে এসে পানি সংগ্রহ করে। এ-ধরনের জীবনযাপন পদ্ধতি চীনের অন্যান্য জায়গায় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসলে কুইচৌ প্রদেশের মিয়াও জাতি ও তুং জাতির গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সংরক্ষণ গোটা বিশ্বের জন্যই তাত্পর্যপূর্ণ। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থানের ধারণা পেশ করেছিল। কুইচৌ প্রদেশের মিয়াও জাতি ও তুং জাতির লোকেরা প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিজেদের জীবনযাপন পদ্ধতি গড়ে তুলেছে; বিষয়টি খুবই তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার।
আলিম. আচ্ছা, তুং জাতির 'ঢোল ভবনের' কিছু তথ্য জানার পর এখন আমরা আরেকটি গান শুনবো। গানের নাম 'তুং জাতির ঝর্ণা'।
সুবর্ণা. সুন্দর গানটি শোনার পর চাও শিং জেলার তুং জাতির গ্রামের কিছু তথ্য জানাই। তিমেন তুং জাতির গ্রাম থেকে অদূরে একটি বিখ্যাত জেলা অবস্থিত। এর নাম চাও শিং। এখানকার তুং জাতির গ্রাম সবচে বড়। এর আয়তন ১.৮ লাখ বর্গমিটার। পরিবারের সংখ্যা ৮০০টিরও বেশি এবং লোকসংখ্যা ৪০০০ জনেরও বেশি। এর চারদিকে পাহাড়। চাও শিং তুং জাতির গ্রাম পাহাড়ের মাঝখানে সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা মাচান ঘরে বসবাস করে। এসব ঘর কাঠ দিয়ে তৈরি। ঘরগুলোর ছাদ কালো টালির। চাওশিং জেলার তুং জাতির লোকদের পারিবারিক নাম লু। তাদের বসবাসের স্থান ৫টি প্রাকৃতিক এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানকার ঢোল ভবনও খুবই বিখ্যাত এবং পর্যটকদের মধ্যে চাওশিং তুং জাতির গ্রাম খুবই জনপ্রিয়।
আলিম. সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়া, স্থানীয় অঞ্চলের তুং জাতির খাবারও খুবই সুস্বাদু। প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা টক ও ঝাল স্বাদের খাবার খেতে বেশ পছন্দ করে। তুং জাতির লোকদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে। কথাটি হচ্ছে: 'মাছ-মাংস খেলে স্বাস্থ্যবান হবে না; টক স্যুপ ভাতের সাথে মিশিয়ে খেলে বেশি পুষ্টি পাবে এবং স্বাস্থ্যবান হবে।' এ-জন্য স্থানীয় অঞ্চলে আপনারা পাবেন টক মাংস, টক মাছ ও টক হাঁস-মুরগীর তরকারি। এ-ধরনের খাবারের গন্ধ ও স্বাদ একটু টক টক; তবে খেতে বেশ মজা লাগে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মাংস বিশেষ টক স্যুপে কমপক্ষে ২ বা ৩ মাস রেখে দেয়া হয়। পরে তা লাল মরিচের সাথে ভেজে খেতে খুবই সুস্বাদু লাগে।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, আপনার বর্ণনা শুনে আমার কিন্তু জিভে জল এসে গেল। পেইচিংয়ে আজকাল টক ও ঝাল স্যুপের মাছ পাওয়া যায়, যা খেতে অনেকটা কুইচৌ প্রদেশের খাবারের মতো। তরকারিতে মাছের টুকরা শেষ হয়ে গেলে, রয়ে-যাওয়া টক স্যুপে নুডলস্ সেদ্ধ করে খেতেও বেশ মজা লাগে।
আলিম. প্রতি বছর বসন্ত উত্সবের সময়টা লিপিং তুং জাতির গ্রামের পর্যটনের মৌসুম। স্থানীয় অঞ্চলের ৮০টিরও বেশি তুং জাতির লোক বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত নাচ-গানের প্রদর্শনী বা তুং জাতির অপেরা প্রদর্শনী নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। তাদের প্রাচীন রীতিনীতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সাধারণত পর্যটকরা প্রতিদিন ৫০ ইউয়ান দিয়ে তুং জাতির খাবার খেতে পারেন; রাতে তুং জাতির মাচান ঘরে থেকে শুনতে পারেন যুবক-যুবতীদের প্রেমের গান।
সুবর্ণা. তুং জাতির একজন অতি জনপ্রিয় দেবী আছে, তার নাম 'সামা সিংনি'। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উত্সবে তুং জাতির লোকেরা তার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। যদি আপনারা বসন্ত উত্সবের ছুটিতে তুং জাতির গ্রামে বেড়াতে যান, তাহলে একসঙ্গে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন।
আলিম. বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আমরা আজকের অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এখন আমি এ-সপ্তাহের ক্যুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্নটি করি। প্রশ্নটি হচ্ছে: তুং জাতির সবচে বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্যের নাম কী?
সুবর্ণা. প্রশ্নটি আবার বলি: তুং জাতির সবচে বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্যের নাম কী?
আলিম. আমরা আপনাদের চিঠির অপেক্ষা রইলাম। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn
সুবর্ণা. বন্ধুরা, অনুষ্ঠান শেষ করার আগে আরেকটি সুন্দর গান শুনবো আমরা। গানের নাম 'তুং জাতির গান পেইচিংয়ে দিকে ছড়িয়ে পড়ে'।
(সুবর্ণা/আলিম)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |