|
আলিম. ইতিহাস বলছে যে, মিং রাজবংশ আমলের দূত চেং হো সাত বার জাহাজে করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তখন তিনি চীনা মাটির তৈরি অনেক তৈজসপত্র উপহার হিসেবে বিদেশি রাজাদের দিয়েছিলেন। এতে চীনা মাটির তৈজসপত্রের খ্যাতি আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে। চীনা মাটি ও মাটির তৈরি তৈজসপত্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও তখন বেড়ে যায়।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, তখন থেকেই ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলে চীনা মাটির হস্তশিল্পকর্ম দেখা যায়। বাংলাদেশের জাদুঘর পরিদর্শনের সময়ও আমি কয়েকটি চীনা মাটির হস্তশিল্পকর্ম দেখেছি। প্রাচীনকালের কিছু কিছু ফুলদানি ও প্লেট বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এগুলোর নকশা দেখে চীনা মাটির তৈজসপত্র বলে ঠিক চেনা যায়। বিদেশি শিল্পীরা চীনা মাটি দিয়ে তৈজসপত্র তৈরীর কৌশল শেখার পর নিজেরাই তা তৈরি করা শুরু করে এবং সেসবের মধ্যে জুড়ে দেয় খানিকটা নিজস্বতা। যেমন, ইরানে উত্পাদিত ছিংহুয়া হস্তশিল্পকর্মের মধ্যে মুসলমানদের জনপ্রিয় নকশা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেসব শিল্পকর্ম যদিও সাদা মাটি ও নীল রঙ নিয়ে গঠিত, তবে সেগুলো পুরোপুরি পার্সিয়ান বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
আলিম. শুনেছি, প্রাচীনকালে অনেক বিদেশি ব্যবসায়ী চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ছুয়ানচৌ বন্দরে জাহাজ নোঙর করতেন এবং চিংতেচেনের চীনা মাটি ও হাংচৌ শহরের রেশমের পণ্য কিনে স্বদেশে নিয়ে যেতেন। সেসব জাহাজের মাধ্যমে এসব পণ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব আফ্রিকায় পৌঁছে যায় এবং সেসব দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। জাপানের বিখ্যাত চীনা মাটিবিষয়ক প্রত্নতত্ত্ববিদরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় প্রাচীনকালে চীনা মাটি শিল্পকর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং 'চীনা মাটির পথ' নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তারা মনে করেন, সমুদ্রের রেশম পথ হল চীনা মাটির পথ এবং প্রাচীনকালে চিংতেচেন চীনা মাটি শিল্পকর্মের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ।
সুবর্ণা. আচ্ছা, চিংতেচেনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার আগে এবার একটি সুন্দর গান শোনা যাক। গানের নাম 'চীনা মাটি'।
আলিম. চিংতেচেন একটি সাংস্কৃতিক জেলা। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর অধিকাংশই চীনা মাটির তৈজসপত্র তৈরির চুল্লি। যেমন, হুথিয়ান চুল্লি। এই পুরাকীর্তিটি প্রাচীনকালে চীনের তিনটি রাজবংশ আমলে ব্যবহৃত চুল্লি। চিংতেচেন সরকারি চুল্লিতে, ইউয়ান, মিং ও চিং রাজবংশ আমলে রাজপ্রাসাদের জন্য বিশেষভাবে চীনা মাটির তৈজসপত্র উত্পাদন করা হতো। এখানে উত্পাদিত চীনা মাটি শিল্পকর্ম দেখতে দারুণ সুন্দর।
সুবর্ণা. আরেকটি দর্শনীয় স্থানের নাম 'সিয়াংচি অঞ্চল'। এটি চিংতেচেনের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত। প্রাচীনকালে চীনের মিং রাজবংশ আমলে নির্মিত এবং এ-পর্যন্ত ভালভাবে সংরক্ষিত অঞ্চলগুলোর মধ্য অন্যতম। এখান মিং রাজবংশ আমলের কয়েকটি বাসভবন আছে। এসব বাসভবনের ইতিহাস ৫০০ বছরের।
আলিম. আরেকটি দর্শনীয় স্থান চিংতেচেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের 'সানবাও আন্তর্জাতিক চীনা মাটি গ্রাম'। এখানে প্রাচীনকালের স্থানীয় গ্রামবাসীদের বাসভবন আছে, আছে চীনা মাটির তৈজসপত্র তৈরির কারখানা। বাইরে থেকে দেখলে গ্রামটিকে পুরনো ও সাধারণ বলে মনে হবে। তবে, এর ভেতরে প্রবেশ করলে চীনা মাটি দিয়ে তৈরি অনেক শিল্পকর্ম দেখা যায়।
সুবর্ণা. এ-গ্রামের মালিকের নাম লি চিয়ান শেন। যুবক বয়সে তিনি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেছেন। তারপর চীনে ফিরে এসে চিংতেচেনে 'চীনা মাটি গ্রাম' প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গ্রামের ভেতরে চীনা মাটির জাদুঘরও নির্মাণ করেছেন। এটি গ্লাস দিয়ে তৈরি বড় একটি ভবন। বাইরে থেকেই ভবনের ভেতরে রাখা প্রাচীনকালের নানা ধরনের চীনা মাটির শিল্পকর্ম দেখা যায়। চীনা মাটি সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি গ্রামে আর্ট গ্যালারি, রেস্তোরাঁ ও পাব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা হয়েছে। চীনা মাটি শিল্পীদের হোটেলে খালি কক্ষ থাকলে, সাধারণ পর্যটকরাও সেখানে অবস্থান করতে এবং সামনে থেকে শিল্পীদের কাজ দেখার সুযোগ পেতে পারেন। গোটা বিষয়টি খুবই মজার।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |