|
কাংশা গ্রামের প্রধান নিমা ইয়েশে দোর্জি
নিমা ইয়েশে দোর্জি জানান, তীর্থযাত্রীরা আসলে সাধারণত প্রথমে গ্রামে নিবন্ধিত হন। তারপর গ্রাম কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রীদেরকে বিভিন্ন পরিবহন গ্রুপে পাঠায়। গ্রুপের প্রধান যথাক্রমে গ্রামের পরিবারগুলোর মধ্যে পরিবহন দায়িত্ব বন্টন করেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেবার মান উন্নত করার জন্য কাংশা গ্রামের চমরি গাই পরিবহন দল কঠোর সেবার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। পরিবহন দলের সদস্যরা পর্যটকের সাথে পাহাড় ঘোরার জন্য রওনার দেওয়ার আগে অফিস থেকে একজনের জন্য একটি নম্বর নিতে হয়। যদি কোনো পর্যটক কোনো গ্রামবাসীর সেবায় অসন্তুষ্ট হন, তাহলে ফিরে এসে গ্রাম কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারেন। গ্রাম প্রধান নিমা ইয়েশে দোর্জি বলেন, 'পর্যটক সেবার ফি গ্রাম কমিটির কাছে জমা দিতে হয়। যদি কোনো গ্রামবাসীর সেবা ভালো না হয়, তাহলে পর্যটক অভিযোগ করলে আমরা সে টাকা ফেরত দিবো। যদি মারামারি বা অন্যান্য গুরুতর সমস্যা ঘটে, আমরা তা সমাধান করতে পারি না। তাহলে সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক বিভাগে গিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। ভালো কথা হলো, এ পর্যন্ত কাংশা গ্রাম এ রকম ঘটনা কখনো ঘটে নি।'
কাংশা গ্রামের পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিমা ইয়েশে দোর্জি গর্বিত কণ্ঠে বলেন, আগে অধিকাংশ গ্রামবাসী তাঁবুতে থাকতেন। আর্থিক অবস্থা একটু ভালো হলে মাটির ঘরে থাকতে পারতেন। এখন সব গ্রামবাসী বড় ও আরামদায়ক ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। তিনি বলেন, 'আগের তুলনায় এখন গ্রামবাসীদের জীবন অনেক সুখী ও সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন প্রতি পরিবারে কমপক্ষে দুটি মোটর (?) আছে। কোনো কোনো পরিবারে গাড়িও আছে। তাদের বাড়িতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও মোটামুটি আছে। আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।'
কাংশা গ্রামের তিব্বতী জাতির যুবক জাশি চমরি গাই পরিবহন দলে যোগ দেওয়ার পর তাঁর পরিবারে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি বলেন, 'কেবল এ বছরের মে থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেড় মাস ধরে আমি পরিবহন দলে কাজ করে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার ইউয়ান রোজগার করেছি।'
কাংশা গ্রামের পর্যটন উন্নয়ন স্থানীয় রেস্তোঁরা ও হোটেলসহ নানা সেবা শিল্পের উন্নয়নকেও এগিয়ে নিয়েছে। গ্রামবাসীদের বাড়ির আয়তন সাধারণত ৮০ থেকে ১২০ বর্গমিটার। অনেক গ্রামবাসী নিজ বাড়ির অতিরিক্ত ঘরকে পারিবারিক-হোটেলে রূপান্তর করেছেন অথবা রাস্তার পাশে ছোট দোকান খুলেছেন।
গ্রামবাসী ছোদ্রোন গ্রামের প্রবেশ মুখে একটি ক্ষুদ্র সুপার মার্কেট খুলেছেন। সেখানে পশমী কম্বল, টর্চ, হাঁড়ি ও গামলা থেকে নানা রকম সামগ্রী, খাদ্য ও পানীয় - সব পাওয়া যায়। সুপার মার্কেটের পিছনে এক সারি নতুন বাড়ি আছে। ছোদ্রোন সংবাদদাতাকে বলেন, তিনি কয়েকটি বাড়িকে পারিবারিক হোটেলে রূপান্তর করেছেন। তিনি বলেন, 'এখানে ৫৫টি শয্যা আছে। একজনের এক রাতের খরচ ১৫ থেকে ২০ ইউয়ান। তীর্থযাত্রীরা নিজেরা রান্না করে খেতে পারেন। আমরা গ্যাস ও গরম পানি সরবরাহ করি।'
ছোদ্রোনের হোটেলে তিব্বতের নাছু থেকে আগত পশুপালক গাগের সাথে দেখা হয় সংবাদদাতার। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, এখানে থাকার ব্যবস্থা ভালো। সেবা ও সরঞ্জাম সুবিধাজনক।'
ছোদ্রোন আনন্দচিত্তে সংবাদদাতাকে বলেন, এখন হোটেলের ব্যবসা খুব ভাল। প্রতিদিন অতিথিতে ভরপুর থাকে। গত ২০ দিনে হোটেলের আয় হয়েছে ১৫ হাজার ইউয়ান। তাঁর ছোট সুপারমার্কেটের বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ইউয়ানে।
আলি খুনশা বিমানবন্দর আর ২১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক চালু হওয়ার পর অতীতের দূরবর্তী আলি অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে কাংশা গ্রাম এক আন্তর্জাতিক ধাবক স্টেশনে পরিণত হয়েছে। এখন কাংশা গ্রামে ডাক অফিস, টেলিযোগাযোগ অফিস, ইন্টারনেট ব্যবস্থা আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সুসম্পন্ন সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর কাংশা গ্রামের পর্যটন আয় ৪৭ লাখ ইউয়ান পৌঁছায়। বার্ষিক মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ৬০০০ ইউয়ানেরও বেশি। চলতি বছর গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ৭০০০ ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে। পবিত্র পাহাড় ও হ্রদে অবস্থিত কাংশা গ্রামের গ্রামবাসীদের জীবন দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হবে। (ইয়ু/এসআর)
| ||||
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |