|
পাহাড়গুলোর মধ্যে সড়ক পার হয়ে আমরা উ ইয়ুন শান চা পার্কে প্রবেশ করি। এখানকার কবি ও ছবির মতো দৃশ্য সত্যি নিজের সুনাম রক্ষা করে চলেছে। দূরে তাকালে মনে হয় জায়গাটি পাহাড়ে পরিবেষ্টিত। লাল টালি ও সাদা দেয়ালের কৃষক ভিলা এর মধ্যে রয়েছে। অস্পষ্টভাবে দেখা যায় লাল ও সবুজ রঙের কাপড় পরা কৃষক নারী ঝুড়িতে করে চা তুলে নিচ্ছেন। নিচে হ্রদের পানি সবুজ ও উদাত্ত। নীল আকাশ ও সাদা মেঘ আর সবুজ গাছের ছায়া পানিতে পড়ে। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক দৃশ্য মিলেমিশে উ ইয়ুন শান চা পার্কের বৈশিষ্ট্যময় আকর্ষণীয় শক্তি গড়ে তুলেছে।
উ ইয়ুন শানে উত্কৃষ্ট চা আছে। জানা গেছে, ১৮ শতাব্দীতে ছিং রাজবংশ সময়পর্বে সম্রাট ছিয়ানলোং উ ইয়ুন শান গ্রামের এক কৃষক বাড়িতে এসেছিলেন। তৃষ্ণার্ত হওয়ায় তিনি এক কৃষক নারীর কাছ থেকে চা-পানি খেয়েছিলেন। চা মুখে দিয়ে সম্রাটের মুখটা হঠাত্ সুগন্ধে ভরে ওঠে এবং তাঁর মনটাও প্রশান্তি বোধ করে। তিনি বলে ওঠেন, 'ভালো চা ভালো চা'। সে সময় থেকে উ ইয়ুন শানের চা বিশ্ববিখ্যাত হয়ে ওঠে। তবে বিশ্ববিখ্যাত চা থাকা সত্ত্বেও উ ইয়ুন শানের গ্রামবাসীরা কিন্তু সমৃদ্ধ ছিল না। গ্রামের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চিন শিয়াও ইয়ু আমাদের কাছে গ্রামটির উন্নয়নের গতিধারা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন,
"আমাদের উ ইয়ুন শান গ্রামের আয়তন ২.৩ বর্গকিলোমিটার। সারা গ্রামের ৬টি গ্রুপে ২৬৩টি পরিবার আছে। আগে আমাদের গ্রামের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২শ' ইউয়ানেরও কম ছিল।"
উন্নয়ন চাইলে নিজের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে হবে। আবাদী জমি কম হওয়ার এবং কৃষিফসল ভালো না হওয়ার অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য উ ইয়ুন শান 'চা' ধরেছে।
উ ইয়ুন শানের আবাদী জমি কম হলেও সেখানে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত উ ইয়ুন মন্দির। সে মন্দির সমৃদ্ধ থাং রাজবংশের মি লে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বিদেশি উচ্চপদস্থ জ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসিদের সম্মান দেখানোর পাশাপাশি সম্রাট ছিয়ানলোং মন্দির চা খাওয়ার কারণে বিশ্ববিখ্যাত। এছাড়া উ ইয়ুন শানে 'তাও কুয়া শিয়ান রেন ইয়া', 'উ ইয়ুন জু চি' ও 'সি আর পেন'সহ বিখ্যাত প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে। বৃদ্ধিমান উ ইয়ুন শানের অধিবাসীরা এ সব সুবিধাজনক প্রাকৃতিক অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে 'পর্যটন শিল্প উন্নয়ন, চা সংস্কৃতি ত্বরান্বিতকরণ' কাযক্রমের মাধ্যমে ধনী হওয়ার পথে চলে এসেছেন।
উ ইয়ুন শান গ্রামীণ কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চিন শিয়াও ইয়ু বলেন,
"শহর থেকে আমাদের ভৌগোলিক স্থান মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া পাহাড় ও পানি এবং সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থা থাকার কারণে আমরা চা শিল্পের মাধ্যমে পর্যটন শিল্প উন্নয়ন করি।"
জেলা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যাপক সমর্থনে গ্রামীণ কমিটি শিগগির উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। দেশ-বিদেশের কোথাও না-থাকা 'চা পার্কের' জন্ম হয়। ১৯৯৮ সালের ২০ এপ্রিল 'উ ইয়ুন শান চা পার্ক' আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে চীনের শিল্প ও কৃষি পর্যটন প্রদর্শন প্রকল্পের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কমিটি 'উ ইয়ুন শান চা পার্ককে' চীনের কৃষি পর্যটনের নমুনা প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন দেয়। উ ইয়ুন শান গ্রামীণ কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চিন শিয়াও ইয়ু ব্যাখ্যা করেন কিভাবে চা পার্ক চালু হয় এবং কৃষকদের নতুন ধনী হওয়ার পথ খুলে যায়। এখন উ ইয়ুন শান গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন,
"চা পার্কের নির্মাণ এবং চা-ভিত্তিক স্থানীয় শিল্পের মাধ্যমে সবুজ প্রাকৃতিক কৃষি গড়ে উঠার পর আমরা উ ইয়ুন শান ও সারা জেলায় সর্বপ্রথম 'কৃষক পরিবারের আনন্দ' পরিকল্পনার ব্যবস্থা করি। ব্যস্ত সময়ে ৩৬টি 'কৃষক পরিবারের আনন্দ' ছিল। এ প্রকল্প বছরে ৩ লাখেরও বেশি পর্যটককে অভ্যর্থনা জানায়। এটা কৃষকদের আয় ৬ লাখ ইউয়ান পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |