Web bengali.cri.cn   
আন হুই প্রদেশের থোংছেংয়ের লিউ ছি গলি
  2011-03-29 18:57:06  cri
    আন হুই প্রদেশের থোংছেং একটি প্রাচীন নগর। অষ্টাদশ শতাব্দীতে চীনের সাহিত্যাঙ্গনে যে 'থোংছেং রীতির' আবির্ভাব হয় তার উত্স এ নগর। থোংছেং রীতির ইতিহাস ২ শতাধিক বছরেরও বেশি সময়ের। সেকারণে থোংছেং 'সাহিত্য রাজধানী' হিসেবে খ্যাতি পায়। থোংছেং শহরের প্রায় সব জায়গায় রয়েছে সাংস্কৃতিক দৃশ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। শহরের অনেক ছোট সড়ক ও গলি রয়েছে, যেমন ই রেন গলি, ছিয়ান শাং শু গলি, শুয়াং চিং গলি, চিয়াং স্যুয়ে ইউয়ান গলি, শিয়াও হো বিয়ান গলি ইত্যাদি। কিন্তু সবচেয়ে বিখ্যাত গলি হচ্ছে 'লিউ ছি গলি' বা 'ছয় ছি গলি'। চীনা পরিমাপ পদ্ধতিতে এক 'ছি' প্রায় ১.০৯ ফুটের সমান। ছয় 'ছি' মানে প্রায় ৬.৫৬ ফুট। লিউ ছি গলি মানে ৬.৫৬ ফিটের একটি গলি।

    গলিটি ১ শ' মিটারের বেশি দীর্ঘ এবং ২ মিটার প্রস্থ। স্থানীয় জেলায় লিপিবদ্ধ ইতিহাস অনুযায়ী, ছিং রাজবংশের সম্রাট খাং সি শাসনামলে অর্থাত ১৬৫৪ থেকে ১৭২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনুষ্ঠানবিধি বোর্ডের পরিচালক চাং ইং পেইচিংয়ে দায়িত্ব পালন করতেন। তখনকার অনুষ্ঠানবিধি বোর্ডের পরিচালকের পদ ছিল বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদার। চাং ইংয়ের জন্মস্থানে তাঁর আত্মীয়স্বজন বাড়ি নির্মাণ করার সময় প্রতিবেশী উ পরিবারের সাথে জমি নিয়ে তাদের বিরোধ বাধে। আত্মীয়স্বজন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তার কাছে একটি চিঠি পাঠান। চাং ইং চিঠি পাওয়ার পর পরই তার জবাবে লেখেন, "একটি চিঠি শুধু দেয়ালের জন্য। তার জন্য তিন ফুট জায়গা ছেড়ে দিতে অসুবিধা কী।" আত্মীয়স্বজন ওই চিঠি পাওয়ার পর নিজেদের উদ্যোগে তিন ফুট জায়গা ছেড়ে দেন। তার প্রতিবেশী এটা দেখার পর তিনিও নিজ উদ্যোগে তিন ফুট জায়গা ছেড়ে দেন। সেই সময় থেকে 'লিউ ছি গলির' পত্তন ঘটে। তখন থেকেই লিউ ছি গলি চাং ইংয়ের জন্মস্থান এবং এখনকার আন হুই প্রদেশের থোংছেং শহরের সুন্দর গল্পে পরিণত হয়। ১৯৫৬ সালে চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের সঙ্গে চীনে নিযুক্ত প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত সাক্ষাত্ করতে গেলে - কীভাবে সঠিকভাবে দুদেশের সম্পর্ক রক্ষা করা যায় সে সম্পর্ক বলতে গিয়ে তিনি চাং ইংয়ের চিঠির কথা উল্লেখ করেন।

    চাং ইং থোংছেং শহরের উপকণ্ঠে দুটি নদীর মোহনায় 'শুয়াং সি কুঁড়েঘর' নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বিশেষ করে মিতব্যয়িতা, পরিশ্রম, সম্প্রীতি ও সুষ্ঠুতা এ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোরদার দিতেন। এগুলো প্রাচীনকাল থেকে চীনা জাতির সুনীতি। থোংছেং জাদুঘরের প্রধান চাং জেকুও হচ্ছেন চাং ইংয়ের ১১তম প্রজন্মের সন্তান। তিনি বলেন, লিউ ছি গলির উপকথা থোংছেং শহরে হওয়াটা কাকতালীয় নয়। এটা এসেছে চীনের ঐতিহ্যবাহী কনফুসিয়ান সংস্কৃতির দীর্ঘকালীন সঞ্চয় থেকে। তিনি বলেন,

    "নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী এখন থোংছেং সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করলে তা আসলে থোংছেং রীতিই। এখানকার কয়েকশ' বছরের সাংস্কৃতিক সঞ্চয় ও উজ্জ্বল সংস্কৃতি আসলে আমাদের যেটুকু জানা তার চেয়ে অনেক বেশি। যদি ছিং রাজবংশের প্রথম দিকে ফিরে যাওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে চাং পরিবার ও তার প্রতিবেশী পরিবারের গল্পের মতো পুরো অঞ্চলের সুনীতি প্রতিনিধিস্থানীয় উদাহরণে প্রতিফলিত হয়েছে।"

    লিউ ছি গলি থোংছেং শহরের সিহো সড়ক ও উ মু ইউয়ানের মাঝখানে অবস্থিত। চাং ও উ দুটি পরিবারের বাড়ির মধ্যে এখন শুধু উ পরিবারের একটি প্যাভিলিয়ন সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। লিউ ছি গলির দুপাশে এখন আন হুই প্রদেশের রোং চুন হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের পরিচালক চু ওয়াং পাও সাংবাদদাতাকে একটি উঁচু গাছের নিচে নিয়ে যান। জানা গেছে, চাং ইং নিজের হাতে এ গাছটি লাগিয়েছিলেন। জু ওয়াং পাও বলেন,

    "গাছটি সে সময়ের প্রধানমন্ত্রীর। লিউ ছি গলি সীমান্ত হিসেবে এক দিকে উ পরিবার আর অন্য দিকে চাং পরিবার। এখানে এরকম গাছ অনেক আছে। বসন্তকালে ফুল ফোটার সময় যখন হয় তখন গাছের পাতা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফোটে। ফুলের সংখ্যাও খুব বেশি।"


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040