|
প্রাচীনকালে সি আনের নাম ছিল ছাং আন। এটা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালির অন্বেষক মার্কো পলোর লেখা 'মার্কো পলো ভ্রমণ'-এ বিখ্যাত প্রাচীন সিল্ক রোড বা রেশম সড়কের আরম্ভ-বিন্দু। চীনের ইতিহাসে মোট ১৩টি রাজবংশ এ জায়গাটিকে তাদের রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। প্রাচীন নগর সি আন একটি জীবন্ত ইতিহাসগ্রন্থের মতো চীনা জাতির বিরাট পরিবর্তন লিপিবব্ধ করে রেখেছে।
সি আনে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে 'বিশ্বের অষ্টম বিস্ময়' বলে গণ্য ছিন সম্রাট সমাধির সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি। দু সহস্রাধিক বছর আগে ছিন সম্রাট চীনকে একীকরণ করেছিলেন। ফলে তিনি চীনের ইতিহাসে প্রথম সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশের রাজায় পরিণত হন। সিংহাসনে আরোহণের পর তিনি নিজের জন্য সমাধিসৌধ তৈরি করেন যেখানে তাঁর অধীন সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। জানা গেছে, ৩৫ বছর ধরে ৭০ লাখ লোক এ সমাধিসৌধের নির্মাণকাজে অংশ নেন। পথনির্দেশক লু ব্যাখ্যা করেন,
"এ পর্যন্ত যেটুকু আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে দেখা যায়, ছিন সম্রাটের সমাধি ক্ষেত্রের অধীন কয়েক ডজন বড় ও ছোট সমাধিতে ৮ হাজার সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি রয়েছে। এখন সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি প্রদর্শনী হলে আমরা প্রায় ২ হাজার সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি দেখতে পাচ্ছি। বাকী অংশের কিছুটা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং কোনো কোনোটা এখনও খনন করা হয়নি।"
সেখানে স্থাপিত সৈন্যদের প্রতিকৃতিতে প্রতিটি সৈন্যের চেহারা ভিন্ন। হাজার সৈন্যের হাজার রকম চেহারা। প্রত্যেক সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি ছিন রাজবংশে সৈন্যদের সত্যিকারের চেহারা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিল। ছিন রাজবংশের সৈন্যরা লম্বা ছিল, তাদের উচ্চতা ১.৭ মিটার থেকে ১.৯ মিটার পর্যন্ত ছিল। খোদাই কাজ ভালো। সকল সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতির মাথা নিরেট কিন্তু শরীর ফাঁপা। এদের ওজন বেশি; সর্বনিম্ন ১১০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি পর্যন্ত।
ছিন সম্রাটের সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি পরিদর্শনের আসা পেইচিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা এসেছেন ২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে। তাঁদের চীনা ভাষা খুবই ভালো এবং পেইচিংয়ের বিভিন্ন চীনা সংস্কৃতি জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতায় তাঁরা পুরষ্কার পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে নিজেদের চীনা নামও নিয়েছেন। চীনা সংস্কৃতি জানা এসব ছাত্রছাত্রীদের সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি দেখার অনুভূতি কী রকম? উজবেকিস্তানের ছাত্রী নাতাশা শি লিনের যেন তর সইছিলো সে অনুভূতি ভাগাভাগি করার জন্য। তিনি বলেন,
"এখানে বেড়াতে বেড়াতে আমার মন খুব আবেগপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসব সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি দেখে আমার মনে হয় এটা খুবই রহস্যময়। আমি যেন ছিন রাজবংশের সময়ে ফিরে যাই।"
রাশিয়ার ছাত্রী জেনিয়া বলেন,
"সৈন্য ও ঘোড়ার প্রতিকৃতিগুলো দেখতে সত্যিকারের মানুষের মতো। আমি সবসময় দেখেছি আর ভেবেছি এই মনে হয় তারা নড়বে। খুবই মজার ব্যাপার। আমি সি আনকে খুবই পছন্দ করি।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |